‘যদি ভালবাসা পাই জীবনে আমিও পাব
মধ্য অন্তমিল।’
এডেন হ্যাজার্ড কবি নন, ফুটবলার। কিন্তু সম্প্রতি তিনি যা বলছেন, তা রফিক আজাদের কবিতা ‘যদি ভালোবাসা পাই’-এর এ দুটি পঙ্ক্তির সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। রফিক আজাদের কবিতার মতো করে তাঁর কথাগুলো সাজালে দাঁড়াত এ রকম—
যদি ফিট হয়ে উঠি আমিও ফিরে পাব
পুরোনো সেই ছন্দ।
যদি ফিট হয়ে উঠি আমি আবার
সেই চূড়া ছোঁব।
সত্যি একদিন চূড়ায় উঠেছিলেন হ্যাজার্ড। লিল থেকে ২০১২ সালে চেলসিতে নাম লেখানোর পর খুব দ্রুতই তিনি জয় করে নিয়েছিলেন ইংলিশ ফুটবল। চেলসির হয়ে সাত বছর খেলেছেন হ্যাজার্ড। এই সাত বছরে একবার করে হয়েছেন পিএফএর বর্ষসেরা তরুণ ফুটবলার ও পিএফএ বর্ষসেরা ফুটবলার। জিতেছেন ফুটবল রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশনের বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কারও। চারবার জায়গা পেয়েছেন প্রোফেশনাল ফুটবলার্স অ্যাসোসিয়েশনের বর্ষসেরা দলে।
দারুণ ছন্দে থাকা হ্যাজার্ডকে ২০১৯ সালে ১১ কোটি ৫০ লাখ ইউরো ট্রান্সফার ফিতে চেলসি থেকে দলে ভেড়ায় রিয়াল। কে জানে, এ ঠিকানা বদল কেন ফুটবল দেবতার পছন্দ হলো না! রিয়ালে নাম লেখানোর পর থেকেই চোট যেন নিত্যসঙ্গী হয়ে গেছে বেলজিয়ান তারকার। চেলসিতে চোটের কারণে যে খেলোয়াড় ৭ বছরে মাত্র ২০টি ম্যাচ মিস করেছেন, সেই হ্যাজার্ডই কিনা রিয়ালে চোটের কারণে দিনের পর দিন পড়ে থাকছেন মাঠের বাইরে।
চোট আর চোট থেকে সেরে ওঠার প্রক্রিয়ার জন্য মাঠের বাইরেই বেশি সময় কাটাতে হচ্ছে হ্যাজার্ডকে। ২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১৪ বার চোটে পড়েছেন বেলজিয়ান ফরোয়ার্ড। মৌসুমপ্রতি ম্যাচ খেলতে পেরেছেন ২০টির একটু বেশি।
জিনেদিন জিদানের অধীন রিয়ালে অভিষেকের মৌসুমে হ্যাজার্ড খেলতে পেরেছেন মাত্র ২২ ম্যাচ। যেটা সে মৌসুমে রিয়ালের মোট ম্যাচের ৪৩ শতাংশ। পরের মৌসুমে খেলেছেন মাত্র ২১টি ম্যাচ। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত হ্যাজার্ডের খেলা ম্যাচের সংখ্যা ২২। এ মুহূর্তে হাঁটুর অস্ত্রোপচার থেকে সেরে ওঠার জন্য মাঠের বাইরে আছেন হ্যাজার্ড। তাঁর আশা এ মাসের শেষের দিকে অনুশীলনে ফিরতে পারবেন। আশা করছেন, মৌসুমের শেষের দিকে কিছু ম্যাচও খেলতে পারবেন রিয়ালের হয়ে। কিন্তু অনেকেরই ধারণা, হ্যাজার্ডের সে আশা পূরণ হবে না!
রিয়ালে নাম লেখানোর পর থেকে চোট নিয়ে সব মিলিয়ে ৫৫০ দিন মাঠের বাইরে ছিলেন হ্যাজার্ড, ম্যাচ মিস করেছেন ৬৯টি! চোট আর হ্যাজার্ডের এভাবে একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা দেখে হাজারিকার একটি গানের দুটি লাইন হয়তো মনে পড়ে যাবে—‘পৃথিবী আমাকে আপন করেছে, ভুলেছি নিজের ঘর।’ হ্যাজার্ডের রিয়াল-জীবনকে এ দুটি লাইনের সঙ্গে মিলিয়ে লেখা যায়—চোট হ্যাজার্ডকে আপন করেছে, ভুলিয়েছে মাঠ!
এখন অবশ্য ফিট থাকলেও একাদশে খুব একটা জায়গা পাওয়ার কথা নয় হ্যাজার্ডের। আক্রমণভাগের বাঁ দিকে যে নিজের জায়গা অনেকটাই পাকা করে ফেলেছেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। গোল খুব একটা না পেলেও সতীর্থদের গোলে ভূমিকা রাখছেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। আর হ্যাজার্ড এখন পর্যন্ত রিয়ালের হয়ে খেলা ৬৫ ম্যাচে ৩৩১৮ মিনিট খেলে মাত্র ১৬টি গোলের সঙ্গে জড়িয়েছেন। ৬টি গোল নিজে করেছেন, সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন ১০টি। এখন তো এ-ও শোনা যাচ্ছে, বিপুল অর্থ ব্যয় করে ‘শ্বেতহস্তী’ পুষতে আর রাজি নয় রিয়াল! আসছে দলবদলেই তাঁকে বিক্রি করে দেওয়ার উদ্যোগ নিতে পারে বার্নব্যুর ক্লাবটি।
কিন্তু হ্যাজার্ড যে বলছেন, ‘যদি ফিট হয়ে উঠি...।’ ফিট হয়ে উঠলে কী করবেন হ্যাজার্ড? সময়ই দেবে এর উত্তর!