বাংলাদেশ দলের অনুশীলন শেষে হঠাৎ দেখা গেল মিডফিল্ডার সোহেল রানা দৌড়ে পালাচ্ছেন। তাঁকে ধাওয়া করছেন কয়েকজন সতীর্থ। একপর্যায়ে গ্রিল টপকে গ্যালারিতে আশ্রয় খুঁজেও শেষ রক্ষা হলো না সোহেলের। ধরা পড়লেন ঠিকই। ব্যাপার কী?
কাল ছিল সোহেল রানার জন্মদিন। সন্ধ্যায় সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে সোহেলকে তাই পাকড়াও করে সতীর্থরা ডিম, ময়দা ইত্যাদি মুখে মাখিয়ে একাকার করে দিলেন। ততক্ষণে অনুশীলনের জন্য মাঠে চলে আসা মঙ্গোলিয়া দল প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের এই খুনসুটি দেখে হয়তো মজাই পেয়েছে।
এই সিলেট জেলা স্টেডিয়ামেই ২৯ মার্চ বাংলাদেশের বিপক্ষে ফিফা প্রীতি ম্যাচ খেলবে মঙ্গোলিয়া। মঙ্গোলিয়ার জাপানি কোচ ইচিরো ওসোকার লক্ষ্য জয়। সেটা অসম্ভবও নয়। এমনকি র্যাঙ্কিংয়ে তো বাংলাদেশের চেয়ে ২ ধাপ এগিয়েই মঙ্গোলিয়া (১৮৪)!
দেশটির ঘরোয়া ফুটবলে বাংলাদেশের মতো এত টাকার ঝনঝনানি নেই। বাংলাদেশের শীর্ষ ফুটবলাররা যেখানে বছরে ৬০-৭০ লাখ টাকা পান ক্লাব থেকে, সেখানে ১৯৯৮ সালে ফিফার পূর্ণ সদস্যপদ পাওয়া মঙ্গোলিয়ার একজন শীর্ষ ফুটবলার ক্লাব থেকে মাসে বেতন পান টেনেটুনে ৫০০-৬০০ ডলার, অর্থাৎ মাসে ৫০ হাজার টাকা হয় কোনোমতে। কাল দলের অনুশীলনের ফাঁকে মাঠের দিকে নিবিষ্ট চোখ রাখা দলের চিকিৎসক এই প্রতিবেদককে দিলেন এমন তথ্যই।
দলের চিকিৎসকের কাছেই জানা গেল, মঙ্গোলিয়ার অধিনায়ক ১০ নম্বর জার্সিধারী পেশায় একজন বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষক। অন্যরা কেউ ব্যাংক চাকুরে, কেউ আছেন মুঠোফোন কোম্পানিতে বা বেসরকারি অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে। কয়েকজন এখনো ছাত্র। মোদ্দাকথা, মঙ্গোলিয়ার ফুটবলাররা জামাল ভূঁইয়াদের মতো পেশাদার ফুটবলার নন। ব্যক্তিজীবন সামলে তাঁরা ফুটবল খেলেন।
দেশটিতে ১০ দল নিয়ে পেশাদার ফুটবল লিগ হয়, এমন তথ্য দিয়েছেন কোচ নিজেই। কিন্তু চিকিৎসক বললেন ভিন্ন কথা, ‘আসলে এটাকে আপনি পেশাদার ফুটবল বলতে পারেন না। আধা পেশাদারি বলাই ভালো। মঙ্গোলিয়ায় এখনো ফুটবলকে পেশা হিসেবে নেওয়ার সময় আসেনি। ফুটবল–সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি আমাদের দেশে।’
মঙ্গোলিয়ার এই জাতীয় দলে একজন ফুটবলার আছেন জার্মানির পঞ্চম ডিভিশনে খেলা। তাঁকে নিয়ে অনেক আশা দলটির। কিন্তু কোচ ইচিরোর মুখে দল নিয়ে খুব আশার কথা শোনা গেল না, ‘আমাদের ওখানে এখন মাইনাস ২০ ডিগ্রি, তুষারপাত চলছে। ফলে আমরা ট্রেনিং পর্যন্ত করতে পারিনি। খেলোয়াড়দের অবস্থা ভালো নয়। ছয় মাস তারা অনুশীলনে ছিল না।’
সিঙ্গাপুরে পেশাদার লিগে একটি ক্লাবের প্রধান কোচ ছিলেন ইচিরো। দুই মাস আগে তিনি দায়িত্ব নেন মঙ্গোলিয়ার। দল নিয়ে অনেক অসন্তুষ্টি থাকলেও তাঁর লক্ষ্য বাংলাদেশকে হারানো। নিজেই বলছেন, ‘আমরা ২৪ মার্চ লাওসের কাছে তাদেরই মাঠে ১-০ গোলে হেরেছি ফিফা প্রীতি ম্যাচে। তবে সিলেটে জিততেই এসেছি। আমরা চাই মঙ্গোলিয়ার জাতিগত ফুটবলটা খেলতে।’
মঙ্গোলিয়া মানে পৃথিবীর ১৬তম বৃহত্তম দেশ, যার জনসংখ্যা মাত্র ৩৬ লাখ। তুষারাবৃত এই দেশে জনপ্রিয়তার পারদে ফুটবল ৩-৪ নম্বরে। তবে ভুলে গেলে চলবে না এই ফুটবলাররা চেঙ্গিস, হালাকু খানের বংশধর। বরফাচ্ছাদিত পাহাড় পেরিয়ে চেঙ্গিস, হালাকু খানরা একসময় বেরিয়ে পড়তেন দিগ্বিজয়ে। মঙ্গোলিয়ার ফুটবল দলও এখন বেরিয়ে পড়েছে সিলেট জয়ের অভিপ্রায়ে।