হাভিয়ের কাবরেরা যুগে ৪ ম্যাচে এখনো কোনো গোল করতে পারেনি বাংলাদেশ। মালেতে মালদ্বীপের কাছে ২–০ গোলে হার। সিলেটে মঙ্গোলিয়ার সঙ্গে ০–০। এরপর ইন্দোনেশিয়ায়ও গোলশূন্য ড্র। সর্বশেষ ৮ জুন বাহরাইনের কাছে ০–২ গোলে হার।
কিন্তু আগামীকাল এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের দ্বিতীয় ম্যাচে গোল চায় বাংলাদেশ। জিততে হলে গোলের বিকল্প নেই। র্যাংকিংয়ে ৫৪ ধাপ এগিয়ে থাকা দলের সঙ্গে ড্র হলেও বাংলাদেশের কাছে সেটা জয়েরই সমান হবে।
তবে বাংলাদেশ কোচ–অধিনায়ক দুজনই আজ কুয়ালালামপুরে টিম হোটেলে আয়োজিত ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে মুখে ‘জয় চাই’ শব্দ দুটি উচ্চারণ করতে ভোলেননি।
এই ম্যাচে বাংলাদেশের লক্ষ্য কী জানতে চাইলে কোচ হাভিয়ের কাবরেরা বলেন, ‘অবশ্যই আমরা জিততে চাই। আর সেটা অসম্ভব নয়। আমরা গত ম্যাচে বাহরাইনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচ খেলেছি। আমাদের আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়েছে। ফলে আমরা জয়ের কথাই ভাবছি।’
জিততে হলে অবশ্য কিছু শর্তজুড়ে দিয়েছেন অধিনায়ক জামাল। তাঁর কথা, ‘আমি বিশ্বাস করি আমরা জিততে পারব। তবে জয়ের ইচ্ছা, সাহস আর আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। তাহলে আমাদের ভালো সুযোগ অছে বলব।’
সংবাদ সম্মেলন শেষে রুমে যাওয়ার সময় প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলার সময় জামাল তাঁর সতীর্থদের কাছে রাখলেন একটা আহ্বান—‘সতীর্থদের বলব, চলো আমরা গোল করি। কারণ, গোল না করলে আমরা জিততে পারব না।’
কোন কোন জায়গায় উন্নতির সুযোগ বেশি আছে? সংবাদ সম্মেলনে এই প্রশ্নে বাংলাদেশ ফুটবল দলের চিরন্তন সমস্যার দিকেই চোখ ফেরালেন। ‘জিততে হলে আমাদের গোল করা ছাড়া বিকল্প নেই। আমি মনে করি এই জায়গায় আমাদের উন্নতির বেশি সুযোগ আছে।’ কোচের পাশে বসে বলছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
বাহরাইনের সঙ্গে প্রথম ম্যাচটা অনেক কঠিন ছিল জানিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়কের সংয়োজন, ‘আমি মনে করি সে ম্যাচে আমরা যা করেছি, সেটা ঠিক আছে। ওরা দুটি গোল পেয়েছে সেট পিসে। আমরা ওপেন প্লেতে গোল খাইনি। এখন আমরা সামনে তাকাচ্ছি।’
কোচ কাবরেরার চোখে তুর্কমেনিস্তান খুবই শক্তিশালী দল। কিন্তু মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ৩–১ গোলে হেরে যাওয়া ম্যাচের শুরুতে তুর্কমেনিস্তানের কিছু সমস্যা হয়েছে। ফলে তারা গোল খেয়ে বসে। ওই ম্যাচে মালয়েশিয়া খুবই স্বপ্রতিভ ছিল। তুর্কমেনিস্তান বুঝে ওঠার আগেই গোল খেয়েছে। পরে গুছিয়ে ওঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচ খেলেছে। শারীরিকভাবে দলটি খুবই শক্তিশালী।
তুর্কমেনিস্তানে বড় ঘাটতি সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খুবই কম খেলা। গত ১ বছরে একটি মাত্র ম্যাচ খেলে মালয়েশিয়া এসেছে। সেটি থাইল্যান্ডের সঙ্গে। কুয়ালালামপুর এসে খেলেছে মালয়েশিয়ার সঙ্গে। অথত গত জুন থেকে এ পর্যন্ত সময়ে ১৯টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। এটা কী বাংলাদেশকে এগিয়ে রাখছে আগামীকাল? এমন প্রশ্নে বাংলাদেশ কাবরেরার উত্তর, ‘ম্যাচ কম খেলা কোনো বিষয় নেই। আমি জানি তুর্কমেনিস্তান খুবই শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। কাজেই আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জটা সহজ হবে না।’
বাহরাইন ম্যাচে অনেক নিচে নেমে রক্ষণ করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু তুর্কমেনিস্তান ম্যাচে কী একটু ওপরে ওঠে খেলার পরিকল্পনা আছে? কাবরেরা বলেন, ‘অবশ্যই। আমরা ইতিবাচক ফুটবল খেলতে চাই। বল পজেশন রাখতে চাই। যাতে আমরা ভালো একটা ফল যেতে পারি।’
কাবরেরার কথা, ‘বাহরাইনের সঙ্গে আমরা খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচ খেলেছি। তারপর আমরা খেলোয়াড়দের ধকল কাটিয়ে ওঠানোর চেষ্টা করেছি। টেকনিক্যাল স্টাফের সঙ্গে বসে কথা বলেছি। সবকিছু বিশ্লেষণ করেছি। অবশ্যই আমাদের কিছু উন্নতির সুযোগ আছে। তবে কালকের চ্যালেঞ্জের জন্য আমরা তৈরি।’
বাহরাইন ম্যাচ বাংলাদেশকে আত্মবিশ্বাস দিয়েছে। তুর্কমেনিস্তান ম্যাচটা কী ভালো কোনো ফল দেবে? জামাল ভূঁইয়া বলছেন, ‘নতুন কোচ এসেছেন। তিনি আমাদের রক্ষণ কাঠামোয় কিছু বদল এনেছেন। আমরা অনেক উন্নতি করেছি। প্রতিদিন আমরা ভিডিও দেখি। টিম মিটিং করি। এটা চালিয়ে গেলে আশা করা ভালো ফল আসবে।’
জামালের সংযোজন, ‘একটা একটা করে ধাপ এগোচ্ছি। বাইরাইন ম্যাচের পর ফুটবলাররা সবাই খুশি আছে। তবে আমি মনে করি তুর্কমেনিস্তানের সঙ্গে কঠিন ম্যাচই হবে।’
তুর্কমেনিস্তানের ফুটবলারা শারীরিকভাবে লম্বা হওয়ায় সেট পিচে গোল করতে দেওয়া যাবে না মনে করেন জামাল। বাংলাদেশ সেটপিস নিয়ে বাড়তি কাজ করেছে।
তুর্কমেনিস্তান এই ম্যাচ থেকে ৩ পয়েন্ট নিতে মরিয়া। দলটির কোচ সাইদ সেইদোর কথা, ‘গত ম্যাচে আমরা ভুল করেছি। তবে কাল ভালো খেলব আশা করি। কারণ, এই ম্যাচের ৩ পয়েন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ আমাদের কাছে।’
তুর্কমেনিস্তানের দুজন খেলোয়াড় দেশের বাইরে লিগ খেলেন। একজন এই দলে নেই। অন্যজন এলেও তিনি একাদশের খেলায়াড় নন (গোলকিপার)।
বাংলাদেশ বিপজ্জনক হতে পারে কি না প্রশ্নে তার উত্তর, ‘অবশ্যই বিপজ্জনক হতে হতে পারে। গত ম্যাচে দেখেছি বাংলাদেশকে। তবে বাংলাদেশ সম্পর্কে বেশি তথ্য নেই আমাদের কাছে।’
তুর্কমেনিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশ ঠিক কতটি ম্যাচ খেলেছে তার কোনো সঠিক রেকর্ড নেই। আন্তর্জাতিক ফুটবলের তথ্য সংরক্ষণ করা ওয়েবসাইট ১১ বনাম ১১–এ দেখাচ্ছে, ২০০২ সালে দুদল একটি ম্যাচ খেলেছে এশিয়ান গেমসে, যেটিতে বাংলাদেশের হার ১–৩ গোলে। উইকিপিডিয়ায় বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার যে রেকর্ড দেখাচ্ছে, তাতে তুর্কমেনিস্তানের সঙ্গে ম্যাচ খেলার কোনো তথ্য নেই। ফলে অনেকটা অচেনা এক প্রতিপক্ষের সঙ্গেই কাল খেলতে নামছে বাংলাদেশ।