বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের পশ্চিম গ্যালারিতে মাঝে মধ্যেই দেখা গেল হলুদের ঢেউ। একদল দর্শক সারাক্ষণ সাইফ স্পোর্টিংয়ের হলুদ-কালো জার্সি গায়ে মাতিয়ে রেখেছিল গ্যালারি। দিন শেষে সেই উৎসবের রেশটা সঙ্গে নিয়েই বাড়ি ফিরেছে দর্শকেরা।
ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালে আজ চট্টগ্রাম আবাহনীকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দেয় সাইফ স্পোর্টিং। এ জয়ে প্রথমবারের মতো সাইফ স্পোর্টিং উঠেছে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে।
ম্যাচে একটি করে গোল করেছেন ইম্যানুয়েল এরিওয়াচুকু, ইকেচুকু কেনেথ ও ইয়াসিন আরাফাত। আগামী ১০ জানুয়ারি ফাইনালে সাইফ স্পোর্টিং মুখোমুখি হবে আবাহনী ও বসুন্ধরা কিংসের মধ্যকার জয়ী দলের সঙ্গে।
এবারের মৌসুমে তারুণ্য নির্ভর একটা দলই গড়েছে সাইফ স্পোর্টিং। যে দলে খেলছেন জাতীয় দলের পাঁচ ফুটবলার, পাপ্পু হোসেন, ইয়াসিন আরাফাত, রহমত মিয়া, রিয়াদুল হাসান ও আরিফুর রহমান।
এদের সঙ্গে পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে বিদেশিরাও খেলছেন দুর্দান্ত। সুযোগসন্ধানী ডিফেন্ডার ইম্যানুয়েল তো এরই মধ্যে দুটি গোল করে ফেলেছেন। এর আগে মোহামেডানের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালেও এক গোল করেন এই নাইজেরিয়ান।
স্ট্রাইকার ইকুচুকু কেনেথ এখন পর্যন্ত ৫ গোল করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা। এদের সঙ্গে যোগ হয়েছে অভিজ্ঞ বেলজিয়ান কোচ পল পুটের কৌশল। সব মিলিয়ে দারুণ ছন্দে থাকা সাইফ ফেডারেশন কাপের ট্রফি জেতারও স্বপ্ন দেখছে।
এ পর্যন্ত ৫ ম্যাচে সাইফ স্পোর্টিং প্রতিপক্ষের জালে দিয়েছে ১৫ গোল। যেখানে সাইফের আক্রমণভাগ ছিল ধারাল, সেখানে চট্টগ্রাম আবাহনীর ফরোয়ার্ড লাইন নড়বড়ে। চোটে জর্জর স্ট্রাইকাররা।
আগের ম্যাচে কোয়ার্টার ফাইনালে শেখ রাসেলের বিপক্ষে চার স্ট্রাইকার একই সঙ্গে ছিলেন মাঠের বাইরে।
সাখাওয়াত হোসেন ও সোহেল রানা চোটের কারণে দর্শক। এছাড়া করোনায় ভুগছিলেন চিনেদু ম্যাথু। অবশ্য কাল করোনা জয় করে ফিরলেও সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি তিনি।
ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার নিক্সনও খেলার মতো অবস্থায় নেই। ম্যাচে বলতে গেলে এখানেই পিছিয়ে পড়ে চট্টগ্রাম আবাহনী। তবে চেষ্টা করেছেন গত ম্যাচের জয়ের নায়ক মান্নাফ রাব্বি ও রাকিব হোসেন।
কিন্তু যতোই ম্যাচের সময় গড়িয়েছে ততোই যেন চাপে পড়েছে চট্টগ্রাম আবাহনী। আর সেই চাপ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি তারা। উল্টো ম্যাচের ৭৬ মিনিটে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছেড়েছেন চট্টগ্রাম আবাহনীর মিডফিল্ডার আইভরি কোস্টের চার্লস দিদিয়ের।
সাইফের মিডফিল্ডার আল আমিনকে মারাত্মক ফাউল করেন চট্টগ্রাম আবাহনীর অধিনায়ক। আঘাতের মাত্রা এত গুরুতর ছিল যে, আল আমিনকে শেষ পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
ম্যাচের ৯ মিনিটেই গোল করে প্রথমে এগিয়ে যায় সাইফ স্পোর্টিং। বক্সের বাইরে থেকে সাইফ স্পোর্টিংয়ের উজবেক মিডফিল্ডার সিরোজ উদ্দিনের ফ্রি কিক চট্টগ্রাম আবাহনীর ডিফেন্ডার মনজুরুর মানিকের গায়ে লেগে ফেরে।
ফিরতি বল আবারও সিরোজ উদ্দিন তুলে দেন বক্সে। অরক্ষিত ইম্যানুয়েল সহজেই ভলিতে জালে জড়ালেন বল।
৭২ মিনিটে যখন ইকেচুকু দ্বিতীয় গোলটি দিলেন চট্টগ্রাম আবাহনীর জালে, ততক্ষণে ম্যাচ থেকে বলতে গেলে ছিটকেই পড়েছেন মারুফুল হকের দল। আসলে এই গোলটি করাতে পেরে যেন একটা প্রায়শ্চিত্তই করলেন ফরোয়ার্ড আরিফ।
ম্যাচে দুজনের বোঝাপড়ার রসায়নটা বেশ জমেছিল। কিন্তু তারপরও ৫০ মিনিটে ইকেচুকুর পাস থেকে বল পেয়ে পায়ে ছোঁয়াতেই পারেনি নি তিনি। তাঁর সামনে তখন শুধুই চট্টগ্রাম আবাহনীর গোলরক্ষক মোহাম্মদ নাঈম!
অবশ্য গোলের একটা ভালো সুযোগ নষ্ট করেছেন চট্টগ্রাম আবাহনীর রাকিব, ৭৯ মিনিটে তাঁর শটটি লাগে ক্রসবারে।
১০ জনের দল হয়ে পড়ায় এমনিতেই আরও দুর্বল হয়ে পড়ে চট্টগ্রাম আবাহনী। সেই সুযোগে ৮৯ মিনিটে চট্টগ্রামের দলটির কফিনে শেষ পেড়েকটি ঠুকে দেন ইয়াসিন আরাফাত।
বাম প্রান্ত দিয়ে বক্সে ঢুকে প্লেসিংয়ে ইয়াসিন করেছেন দর্শনীয় গোল।