সেই চিরন্তন সমস্যার ঘেরাটোপেই বন্দী হয়ে রইল বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। গোল করতে না পারা। গোলের খেলা ফুটবলে গোল করতে না পারার কোনো সান্ত্বনা নেই। গোটা সময় ভালো খেলে, প্রতিপক্ষের ওপর চাপ তৈরি করে, গোলের অজস্র সুযোগ তৈরি করার কোনো অর্থ নেই, যদি শেষ পর্যন্ত স্কোরশিটে কেউ নাম না তোলে। বাংলাদেশ ফুটবলের চিরায়ত সমস্যা ‘গোল করতে না পারা’ আজ সিলেটে মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে আবারও ফিরে এল। দুর্বল এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে প্রত্যাশার জয়টা পাওয়া হলো না। কোনো কোনো ড্র যে হারের কষ্ট হয়ে দেখা দেয়, জামাল ভূঁইয়ারা আজ আবারও অনুভব করলেন বিষয়টি।
গোটা ম্যাচে চেষ্টা করে গেছে বাংলাদেশ। উইঙ্গার রাকিব হোসেন তেড়েফুঁড়ে ঢুকেছেন, ক্রসের পর ক্রস করেছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সুমন রেজার শট ক্রসবারে লেগেছে প্রথমার্ধে, বিরতির ঠিক আগ দিয়ে ছোট ‘ডি’র ওপর দাঁড়িয়ে নিজের শটটা গোলেই রাখতে পারলেন না। তাঁর বদলে নাবিব নেওয়াজ নেমেও কিছুই করতে পারেননি। দ্বিতীয়ার্ধে আরেক বদলি খেলোয়াড় বিপলু আহমেদ ভালো সুযোগ পেয়েও বাইরে মারেন। শেষ ভরসা হিসেবে রায়হান হাসানের লম্বা থ্রো ব্যবহার করেও লাভ হয়নি। লাভ হয়নি জুয়েল রানাকে নামিয়েও।
গোটা ম্যাচের চিত্র এটি। মঙ্গোলিয়ানরা ম্যাচটা গোলশূন্য ড্র করে উদ্যাপনই করেছে। এই ড্র যে তাদের কাছে জয়ের মতোই। কিন্তু বাংলাদেশ! মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটা এ দেশের ফুটবলকে আবারও আত্মজিজ্ঞাসার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এ দলে যে কেউই গোল করতে পারেন না। গোল না করতে পারলে দল জেতা শুরু করবে কীভাবে! মঙ্গোলিয়ার মতো প্রতিপক্ষের সঙ্গে যদি এমন হয়, সামনে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে গিয়ে তো ভরাডুবিই অপেক্ষা করে আছে বাংলাদেশের জন্য।
নতুন স্প্যানিশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরার অধীন এটি ছিল দ্বিতীয় ম্যাচ। মালেতে ২৫ মার্চ মালদ্বীপের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছে ২-০ গোলে। সে ম্যাচেও বাংলাদেশি স্ট্রাইকাররা গোল মিসের মহড়ায় মেতেছিলেন। সুমন রেজার একটি মিসের ভিডিও তো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রীতিমতো ভাইরাল। আজ মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে ড্র করে নতুন কোচের অভিব্যক্তিতে বোঝা গেল না কিছুই। মুখে বললেন, ‘আমি খুশি।’
অবাক হওয়ারই পালা। মোটামুটি দুর্বল প্রতিপক্ষের বিপক্ষে গোল মিসের মহড়া দিয়ে ড্র, এরপরও খুশি কোচ? তিনি বললেন, ‘দলের পারফরম্যান্সে আমি খুশি। যদিও আমরা গোল করতে পারিনি। গোল করতে পারলে, জিততে পারলে ভালো লাগত।’
কোচ কেন খুশি, সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন, ‘আমি মনে করি, অবশ্যই এ ম্যাচ নিয়ে আমাদের সন্তুষ্ট হওয়া উচিত। খেলোয়াড়দের নিয়ে গর্ব অনুভব করা উচিত। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিতে কিছুটা দেরি হয়েছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি নিতে পেরেছি। আমরা বল পায়ে রেখে খেলেছি, এটাই চেয়েছিলাম। এটা একটা অর্জনই।’