ব্রাজিলের ফুটবল ইতিহাসে রবিনিও এক ঝরে পড়া তারার নাম। একটা উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় নক্ষত্রের পতন কত বাজেভাবে হতে পারে, সেটির উদাহরণই হয়তো হয়ে থাকবে রবিনিওর ক্যারিয়ার।
পেলের ক্লাব সান্তোসে শুরুতে এতটাই ঝলক দেখিয়েছিলেন যে, পেলের উত্তরসূরিও ভাবা হতো তাঁকে। মাত্র ১৯ বছর বয়সেই রিয়াল মাদ্রিদের ট্রেন চলে এসেছিল তাঁর ক্যারিয়ারের জংশনে। জিদান-বেকহাম-রাউলদের রিয়ালে ‘১০’ নম্বর জার্সিটাও তাঁর ভাগ্যেই জুটেছিল। কিন্তু অনেক ব্রাজিলিয়ানের মতো নৈশক্লাবের ছটা, নারীসঙ্গের লোভ আর অগোছালো জীবনের অভ্যাসে ঘুণ ধরেছিল রবিনিওর ফুটবলে।
এতটাই ঘুণ ধরেছিল যে নিজে জড়িয়ে পড়েছিলেন জঘন্যতম এক অপরাধে। রিয়াল, ম্যানচেস্টার সিটি ঘুরে এসি মিলানে পাঁচ বছর থাকার সময় এক নারকীয় কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন মিলানের এক নৈশক্লাবে। সেখানেই আলবেনিয়ান বংশোদ্ভূত ২৩ বছর বয়সী এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছিল রবিনিওর বিরুদ্ধে। ২০১৭ সালে সেটির রায়ে ৯ বছর জেলের সাজা হয়েছিল রবিনিওর।
তখন থেকেই ইতালিতে যাননি রবিনিও, গেলেই যে জেলে যেতে হবে! কিন্তু এমন কুৎসিত কাজ করার পর জেলে না গেলেই কি শুধু নিজের সম্মান রক্ষা করা যায়? যায় না। রবিনিও-ও পারেননি। পাপের শাস্তি হিসেবে যে কাজটা সবচেয়ে ভালো করতে পারেন, সে কাজটাই করতে পারছেন না—ফুটবল খেলা।
নিজের শৈশবের ক্লাব সান্তোসে ফিরেছিলেন কিছুদিন আগে। ঘরে ফিরে আবেগের বশে রবিনিও-ও জানিয়েছিলেন, প্রিয় ক্লাবকে সাহায্য করাই তাঁর লক্ষ্য, যে কারণে একদম সর্বনিম্ন বেতনের চুক্তি করেছিলেন। কিন্তু প্রিয় ক্লাবের সঙ্গে রবিনিওর এই মধুর মিলনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ব্রাজিল তারকার কালো অতীত। এর মধ্যেই ধর্ষণকাণ্ডের জের ধরে রবিনিওর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে সান্তোস। যদিও বারবার নিজেকে নিরপরাধ দাবি করে এসেছেন এই ব্রাজিল তারকা। গায়ে লেগে থাকা এই কালি মুছতে আপিল করেছিলেন মিলান কোর্টে। যদি বিচারক মহোদয়ের করুণা হয় শাস্তি কমানোর জন্য! সেটা হয়নি। আপিলের পরও রবিনিওর শাস্তি একটুও কমাননি মিলানের কোর্ট।
এই রায়ের মাধ্যমে আবারও প্রমাণ হয়ে গেল, যে ছেলের কথা ছিল পেলের উত্তরসূরি হওয়ার, সে আদতে এক হীন, দুশ্চরিত্রের মানবসন্তান ছাড়া কিছুই নয়।