নিজেদের হাতে বিশ্বকাপ টিভি স্বত্ব থাকায় সৌদি আরবের দর্শকদের এবার বিশ্বকাপ দেখা থেকে বঞ্চিত রাখতে চেয়েছিল কাতার। কিন্তু ঠিকই বিশ্বকাপ দেখছে সৌদিরা, চোরাই পথে। বিষয়টি ফিফা আর উয়েফা পর্যন্ত গড়িয়েছে
রাশিয়া বিশ্বকাপ এখন জমে ক্ষীর। বড় দলগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়ছে ছোট দলগুলো। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে তো বিদায়ই নিতে হলো। ওদিকে মাঠে নয়; সৌদি আরব আর কাতারের আসল ‘ম্যাচ’ চলছে মাঠের বাইরে। টিভিতে বিশ্বকাপ সম্প্রচার নিয়ে কাতার বনাম সৌদি আরবের লড়াইটা এখন তীব্র রূপ নিয়েছে। সৌদি আরবের বিরুদ্ধে কপিরাইট আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে কাতার। বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছে ফিফা আর উয়েফাও।
সৌদি আরব ও কাতারের রাজনৈতিক জটিলতার প্রভাব খেলাতেও পড়েছে। সৌদি আরব ও তার মিত্ররা কাতারের ওপর দীর্ঘ অবরোধ আরোপ করে রেখেছিল। কাতারকে কোণঠাসা করতে আকাশ, নৌ ও স্থল—সব পথেই বন্দী করে রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল। এর পাল্টা জবাব হিসেবে সৌদি আরবের দর্শকদের বিশ্বকাপ দেখা থেকে বঞ্চিত রাখতে চেয়েছিল কাতার।
মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় বিশ্বকাপের প্রচারস্বত্ব আছে কাতারভিত্তিক বিইন মিডিয়া গ্রুপের হাতে। এসব অঞ্চলে টিভিতে খেলা দেখাতে হলে বিইন মিডিয়া গ্রুপের অনুমতি লাগবেই। কিন্তু কাতার ও সৌদি আরবের সব সম্পর্কই তো এখন স্থগিত হয়ে আছে। ফলে এবারের বিশ্বকাপে সৌদি আরবের কোনো টিভি চ্যানেল সম্প্রচার স্বত্ব কিনতে পারেনি। অবরোধ চলার সময় কাতারকে যেমন খাবার-পানীয় সবকিছু দিয়েই বঞ্চিত করেছিল সৌদি আরব ও তার মিত্ররা; বিশ্বকাপে পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে কাতার সৌদি আরবের কোনো চ্যানেলকে বিশ্বকাপের ফিড দেয়নি।
কিন্তু বিশ্বকাপ না দেখে কি আর থাকা যায়? ফুটবল নিয়ে সৌদি আরবের মানুষের পাগলামিও কম নয়। চোরাই পথে দেশটির মানুষ দেখছে এবারের খেলাগুলো। বিআউটকিউ নামক একটি চ্যানেলের মাধ্যমে সৌদি আরবে খেলা দেখা যাচ্ছে। কাতারের অভিযোগ, বিআউটকিউ পুরোপুরি অবৈধভাবে খেলা দেখাচ্ছে। আর চ্যানেলটি সৌদি মালিকানায় পরিচালিত। সৌদি আরব অবশ্য দাবি করেছে, বিআউটকিউ মালিকানার সঙ্গে দেশটির কোনো সম্পর্ক নেই।
সৌদি আরব যেন চোরাই পথে বিশ্বকাপের খেলা দেখাতে না পারে, এর জন্য আগে থেকেই ফিফাকে ব্যবস্থা নিয়ে রাখতে বলেছিল কাতার। ফিফাও বিষয়টি লক্ষ করেছে। জানিয়েছে, অবৈধভাবে খেলা দেখানোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থাটি, ‘আমরা লক্ষ করেছি যে বিআউটকিউ নামে একটি চ্যানেল অবৈধভাবে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ প্রচার করেছে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে। ফিফা তার কপিরাইট অধিকারের লঙ্ঘনকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখে। অবৈধভাবে খেলা দেখানোর এই চেষ্টা আইনগতভাবে কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, ফিফা এখন তা অনুসন্ধান করে দেখছে। এ ধরনের অবৈধ কাজগুলোকে যারা সমর্থন করে, তাদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ নেবে ফিফা।’
বিআউটকিউ শুধু বিশ্বকাপ নয়; ইউরোপিয়ান ফুটবলের বিভিন্ন প্রতিযোগিতাও অবৈধভাবে সম্প্রচার করে থাকে। বিষয়টি নজরে এসেছে ইউরোপিয়ান ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থারও। উয়েফাও সতর্ক করে দিয়েছে, অননুমোদিত সম্প্রচার এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে অবৈধ স্ট্রিমিংয়ের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে, ‘আমরা জানি যে সৌদি আরবে অবস্থিত বিআউটকিউ নামে একটি পাইরেটেড চ্যানেল উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ ও উয়েফা কাপ দেখিয়েছে। এর মধ্যে কিয়েভে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালও আছে।’
সৌদি তথ্য মন্ত্রণালয় অবশ্য এসব অভিযোগ আমলে নিচ্ছে না। তাদের দাবি, অভিযোগটি ‘পুরোপুরি ভুল।’ কারণ, এই চ্যানেল সৌদি আরবের নয়। উল্টো উয়েফার বক্তব্যকে দায়িত্বজ্ঞানহীন বলে অভিযোগ তুলেছে তারা।
এই লড়াই যেখানে গিয়েই পৌঁছাক না কেন, সৌদি আরব অনেক দেরিতে হলেও বুঝতে পেরেছে, কাতার নামের ছোট্ট দেশটি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় কতটা এগিয়ে আছে তাদের চেয়ে। বিইন স্পোর্টস ও আল-জাজিরার মতো দুটি প্রতিষ্ঠান দিয়ে কাতার পুরো মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তার করে রাখে। কট্টর নীতিতে চলা সৌদি আরব সেখানে মিডিয়াকে রাষ্ট্রীয় প্রচারযন্ত্রের বাইরে কিছু কখনোই ভাবেনি। এক খেলা দেখানো নিয়েই তো কাতার ভালোই পাল্টা জবাব দিয়ে রাখল সৌদি আরবকে।
বিশ্বকাপে এবার সৌদি আরব গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়েছে বলে তবু রক্ষা। দেশটির বিশ্বকাপ উন্মাদনা কিছু হলেও এখন কমেছে। তবে ২০২২ বিশ্বকাপে কী হবে, বলা কঠিন। সেবার যে বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ খোদ কাতার!