খেলোয়াড়ের নাম লিওনেল মেসি আর দলের নাম আর্জেন্টিনা। এ কারণেই কি এত কথা! কিন্তু ‘ডি’ গ্রুপ থেকে শেষ ষোলোতে ওঠার ত্রিমুখী লড়াইয়ের অন্য দুই দল আইসল্যান্ড আর নাইজেরিয়াও তো হাল ছেড়ে দিয়ে বসে নেই!
শুধু ক্রোয়েশিয়ারই যা শীতকালে লেপ মুড়িয়ে বসার অনুভূতি। দুই ম্যাচ জেতায় শেষ ষোলো নিশ্চিত। তাতে গ্রুপসেরা হয়ে না দ্বিতীয় হয়ে উঠবে, সেটি নির্ভর করবে আইসল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচের ওপর। বাকিরা পড়েছে জিলাপির মতো প্যাঁচানো সমীকরণে। নিজেরা জেতো, পাশাপাশি তাকিয়ে থাকো অন্যদের দিকে।
নাইজেরিয়াকে যেমন তাকাতে হচ্ছে। নাটকই হচ্ছে যেন! ক্রোয়েশিয়াকে তাদের শেষ ম্যাচে সেরা দলটা নামানোর জন্য রীতিমতো বলে-কয়ে অনুরোধ করছে নাইজেরিয়া। পরশু আর্জেন্টিনাকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দেওয়ার পর ক্রোয়েশিয়া কোচ দালিচ সোজাসুজিই বলে দিয়েছেন, আগের দুই ম্যাচে হলুদ কার্ড দেখা খেলোয়াড়দের আইসল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচে নামাবেন না। রাকিতিচ-মানজুকিচসহ ছয়জন দেখেছেন হলুদ কার্ড, সেমিফাইনালের আগে আর হলুদ কার্ড দেখলেই হবেন এক ম্যাচ নিষিদ্ধ।
নিকোলা কালিনিচকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ায় এমনিতেই ক্রোয়েশিয়ার বিশ্বকাপ স্কোয়াড এখন ২২ জনের। এর মধ্যেই অদলবদলের ভাবনা দালিচের, ‘গ্রুপ সেরা হতে আমার ভালো লাগবে। কিন্তু আমাদের সতর্ক হতে হবে। কারণ, আমাদের কিছু খেলোয়াড় হলুদ কার্ড দেখেছে। তাই আমি একাদশে বদল আনব।’
তা শুনেই যেন পিলে চমকেছে নাইজেরিয়ার। পরশু আইসল্যান্ডকে ২-০ গোলে হারানো নাইজেরিয়া শেষ ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে হারালেই উঠে যাবে শেষ ষোলোতে। কিন্তু ড্র করলেই তাকিয়ে থাকতে হবে আইসল্যান্ড-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচের দিকে। তাতে ক্রোয়েশিয়া গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের বসিয়ে রাখার চিন্তা করলে নাইজেরিয়ার তো ভাবনা হবেই! অধিনায়ক জন ওবি মিকেল তাই শোনাচ্ছেন উচিত-অনুচিতের পাঠ, ‘আমার মনে হয় না এটা (ক্রোয়েশিয়ার সিদ্ধান্ত) ভালো হবে। এত বড় একটা টুর্নামেন্টে আপনি খেলোয়াড়দের বিশ্রাম দিয়ে অন্যদের উঠে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে পারেন না। ওদের পেশাদার হওয়া উচিত, সেরা দলটা খেলানো উচিত।’
ক্রোয়েশিয়া তাতে কান না দিলে আইসল্যান্ডের আশা আরেকটু বাড়বে। প্রথম ম্যাচে আর্জেন্টিনার সঙ্গে ড্রই এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে অভিষিক্তদের একমাত্র পাওয়া। শেষ ম্যাচে ক্রোয়েশিয়াকে হারালেই হবে না, প্রার্থনা করতে হবে আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া ম্যাচে যাতে নাইজেরিয়া না জেতে। তারপরও অবশ্য হিসাবের অনেক জটিল মারপ্যাঁচ থাকবে। এতেই স্বস্তি আইসল্যান্ড কোচ হাইমির হলগ্রিমসনের, ‘অদ্ভুত লাগছে, এখনো আমাদের সুযোগ আছে।’
প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়াও আবার পরিচিত প্রতিপক্ষ। এবারই বাছাইপর্বে ক্রোয়েশিয়াকে টপকে সরাসরি বিশ্বকাপে এসেছে আইসল্যান্ড। হলগ্রিমসন তাই মজা করে বলছিলেন, ‘গত চার বছরে চারবার ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে খেলেছি। আমরা প্রায়ই বলি, আমরা হচ্ছি একটা বিবাহিত জুটির মতো, যারা বিচ্ছেদ চায় কিন্তু বারবারই তাদের দেখা হয়ে যায়।’