আজকের ম্যাচের আগে ২০ ম্যাচ খেলে মাত্র ৫ পয়েন্ট। প্রিমিয়ার লিগ ফুটবল থেকে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের নেমে যাওয়াটা অনুমিতই ছিল। তবু ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় ছিল দলটা। পাশাপাশি তাকিয়ে ছিল নিচের দিকে থাকা দলগুলোর দিকে। তাদের পয়েন্ট হারানোয় যদি একটু সম্ভাবনা তৈরি হয়!
যদি–কিন্তুর মধ্যে থাকা আরামবাগ করতে পারেনি নিজেদের কাজটাই। আজ কমলাপুর শহীদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে উত্তর বারিধারার কাছে ১-০ গোলে হেরে ৩ ম্যাচ বাকি থাকতেই দ্বিতীয় স্তরে (বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ) অবনমন নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে মতিঝিলের এ ক্লাবের।
এবার প্রিমিয়ার লিগ থেকে অবনমন হবে দুটি দলের। ২১ ম্যাচ শেষে মাত্র ৫ পয়েন্ট নিয়ে ১৩ দলের মধ্যে ১৩ নম্বরে অবস্থান করছে আরামবাগ। বাকি ৩ ম্যাচ জিতলেও অবনমন এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। কারণ, ১১ নম্বরে অবস্থান করা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের পয়েন্ট এরই মধ্যে ১৫।
আজ অবনমন এড়ানোর জন্য বারিধারার বিপক্ষে দাঁতে দাঁত চেপে লড়েছেন আরামবাগের তরুণ খেলোয়াড়েরা। সারা ম্যাচ ভালো খেললেও জয়ের জন্য যে গোলের প্রয়োজন, সেটিই করতে পারেননি নিহাত জামান, ইসলমজন আবদুকোদিরভরা। ম্যাচের ৩৬ মিনিটে বারিধারার জয়সূচক গোলটি করেছেন রাশেদুল ইসলাম। বক্সের মধ্যে উজবেকিস্তানের মিডফিল্ডার ইভগেনি কোসনেভের পাস থেকে গোলে ঠেলে দেন বল।
গোল খেয়ে বলের দখলে এগিয়ে ছিল আরামবাগ। বেশ কয়েকটি আক্রমণও করেছে তারা। কিন্তু গোলমুখ খুলতে পারেনি। দ্বিতীয়ার্ধে নিহাত জামানের একটি শট সাইড পোস্টে লেগে ফিরে আসে। অবশ্য ম্যাচের শেষে দিকে ব্যবধান বাড়াতে পারত বারিধারাও। অধিনায়ক ও স্ট্রাইকার সুমন রেজার শট ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। বাকি সময়ে আরামবাগও আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি।
২০০৭ সালে খাতা–কলমে বাংলাদেশে পেশাদার ফুটবল যুগ শুরু হওয়ার পর এবার দ্বিতীয়বারের মতো অবনমিত হলো আরামবাগ। ২০১২–১৩ মৌসুমে প্রথম অবনমন হওয়ার পর ২০১৫–১৬ মৌসুমে চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে রানার্সআপ হয়ে আবার প্রিমিয়ার লিগে ফিরে আসে তারা। এরপরে দুই মৌসুম স্থানীয় কোচ সাইফুল বারী টিটু আর মারুফুল হকের অধীনে দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দিয়েছিল তারুণ্যনির্ভর আরামবাগ। ২০১৬ সালে ফেডারেশন কাপে রানার্সআপ হয়ে তাক লাগিয়ে দেয় তারা। ২০১৭–১৮ মৌসুমে মারুফুল হকের হাত ধরে স্বাধীনতা কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ছাপিয়ে যায় আগের মৌসুমের সাফল্যকেও।
কয়েক বছরের ব্যবধানেও সেই আরামবাগকেই দেখতে হলো অবনমনের মুখ। ২০১৯ সালে আরামবাগ ক্লাব ক্যাসিনো-কেলেঙ্কারির অন্যতম নাম। এ ছাড়া ক্লাবের সঙ্গে লেগে আছে স্পট ফিক্সিং, অনলাইন বেটিংয়ের অভিযোগ। যার জন্য লিগের প্রথম দিকে বেশ কয়েকবার কোচ বদল করতে হয়েছে তাদের। চুক্তি বাতিল করা হয়েছে অভিযুক্ত পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও। দ্বিতীয় পর্বে অভিযুক্ত খেলোয়াড় ও কোচ বদল করেও শেষ রক্ষা হলো না সমস্যা–জর্জরিত ক্লাবটির। তবে ৫ পয়েন্টের মধ্যে ৪ পয়েন্ট এসেছে দ্বিতীয় পর্ব থেকেই।
অনলাইন বেটিংই অবনমনের কারণ হতে পারে বলে মনে করেন ক্লাবটির সহসভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এজাজ জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, ‘আগে থেকে দলটাকে নিজেদের হাতে রাখতে পারলে এমনটা হতো না। বেটিংয়ের যে অভিযোগ উঠেছে, সেটিই বোধ হয় এ অবস্থার (অবনমন) জন্য দায়ী। কী আর করা, এখন চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ খেলতে হবে।’