দুই লেগ মিলিয়ে ফলাফলটা কেমন হবে, চেলসির মাঠে প্রথম লেগের পরেই সেটা অনেকটা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। সে ম্যাচে বায়ার্ন জিতেছিল ৩-০ গোলে। তাও টুর্নামেন্টটা যেহেতু চ্যাম্পিয়নস লিগ, আর দ্বিতীয় লেগটা যেহেতু বায়ার্নের মাঠ আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায়, তা দেখেই হয়তো চেলসির কোচ ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের মনের কোণে একটু আশা উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিল।
এর আগে এমন পিছিয়ে থাকার পরেও দ্বিতীয় লেগে দোর্দণ্ড প্রতাপে ঘুরে দাঁড়িয়ে পরের রাউন্ডে উঠেছিল বার্সেলোনা (পিএসজির বিপক্ষে), লিভারপুল (বার্সেলোনার বিপক্ষে) কিংবা রিয়াল মাদ্রিদের (ভলফসবুর্গের) মতো দল। তবে চেলসির সঙ্গে তাদের পার্থক্য ছিল। দ্বিতীয় লেগে তারা প্রত্যেকেই খেলেছিল নিজেদের মাঠে। চেলসিকে যেতে হয়েছিল বায়ার্নের মাঠ আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায়। নকআউট পর্বে প্রতিপক্ষের মাঠে গিয়ে ৩-০ তে জিতে ফিরে পরের রাউন্ডে যেতে পারেনি কোনো দল, এমন ঘটনা ঘটেনি কখনো। তবে প্রতিপক্ষের মাঠ হলেও, মাঠটা আলিয়াঞ্জ অ্যারেনা দেখেই হয়তো একটু আশাবাদী হয়ে উঠেছিলেন ল্যাম্পার্ড, খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারের একমাত্র চ্যাম্পিয়নস লিগটা যে এখানেই জিতেছিলেন ; জন টেরি, দিদিয়ের দ্রগবা আর পিটার চেকদের সঙ্গে নিয়ে!
এত কিছুর পরেও, বাস্তবতা বলছিল চেলসির একদমই সম্ভাবনা নেই। সেটাই সত্যি হয়েছে। অবিশ্বাস্যভাবে প্রত্যাবর্তন করার হালকা কোনো আশাও যদি গত রাতে ম্যাচের আগে করে থাকেন চেলসির খেলোয়াড়েরা, সে আশাকে ম্যাচের নব্বই মিনিটে খুব ভালোভাবেই গুঁড়িয়ে দিয়েছেন বায়ার্ন তারকারা। দ্বিতীয় লেগে ৪-১ গোলে জিতে দুই লেগ মিলিয়ে ৭-১ গোলের ব্যবধানে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গেছে বাভারিয়ানরা। সেখানে তাঁদের প্রতিপক্ষ লিওনেল মেসির বার্সেলোনা।
আর দুই লেগ মিলিয়ে চেলসিকে এভাবে পর্যুদস্ত করার একমাত্র কারিগর, বায়ার্নের পোলিশ স্ট্রাইকার রবার্ট লেভান্ডফস্কি। প্রথম লেগে দলের তিন গোলের মধ্যে একটা করেছিলেন, দুটি বানিয়ে দিয়েছিলেন। এ ম্যাচে দলের চার গোলেও থাকল তাঁর ভূমিকা। দুটো করে গোল করেছেন, করিয়েছেন।
ম্যাচের মাত্র আট মিনিটেই চেলসিকে নিজেদের প্রতাপ নতুন করে দেখানো শুরু করে বায়ার্ন। বক্সের ভেতর লেভান্ডফস্কিকে ফাউল করে বসেন চেলসি গোলরক্ষক উইলি কাবায়েরো। পেনাল্টি পায় রেফারি, কিন্তু পরে দেখা যায় পোলিশ তারকা অফসাইডে ছিলেন। পরে ভিএআরের সাহায্য নিয়ে দেখা যায় অনসাইডেই ছিলেন লেভানডফস্কি। পেনাল্টির সিদ্ধান্তও টিকে থাকে যার ফলে। এরপর পেনাল্টি থেকে গোল করে এবারের আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকার শীর্ষস্থানে নিজের অবস্থান আরও পোক্ত করেছেন লেভান্ডফস্কি।
শুধু নিজে গোল করা নয়, অন্যকে দিয়ে গোল যে করাতেও পারেন, প্রথম লেগের মতো এই ম্যাচেও তাঁর প্রমাণ দিয়েছেন এই তারকা। ম্যাচের ২৪ মিনিটে দলের দ্বিতীয় গোলটি বানিয়ে দিয়েছেন তিনি। টমাস মুলারের কাছ থেকে বল নিয়ে ক্রোয়েশিয়ার উইঙ্গার ইভান পেরিসিচের কাছে বাড়িয়ে দেন, গোল করতে বেশি বেগ পেতে হয়নি গত বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলা এই তারকার।
২৯ মিনিটে গোল করে ম্যাচে ফিরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছিল তাঁরা, পরে দেখা যায়, ইংলিশ উইঙ্গার ক্যালাম হাডসন-অদয় বিশগজি দূরপাল্লার শটটা যখন নিচ্ছিলেন, অফসাইডে দাঁড়িয়ে ছিলেন স্ট্রাইকার ট্যামি আব্রাহাম। ফলে বাতিল হয় গোল। চেলসিও হতাশ হয়ে পড়ে। পরে এই আব্রাহামই নিজের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করেন গোল করে। প্রথমার্ধের মিনিটখানেক বাকি থাকা অবস্থায় চেলসির লেফট উইংব্যাক এমারসনের ক্রস থেকে গোল করেন অ্যাব্রাহাম। গোলের পেছনে বায়ার্ন গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নয়্যারের ভূমিকাও ছিল বেশ!
পরের গল্পটা শুধুই লেভান্ডফস্কির। দ্বিতীয়ার্ধে একটা করে গোল করেছেন, করিয়েছেন। ৭৬ মিনিটে ফরাসি মিডফিল্ডার কোরেন্তিন তোলিসোকে দিয়ে গোল করান, ৮৩ মিনিটে রিয়াল মাদ্রিদ থেকে ধারে বায়ার্নে খেলতে যাওয়া স্প্যানিশ রাইটব্যাক আলভারো অদ্রিওজোলার ক্রস থেকে গোল করেন নিজেই। ফলে দুই লেগ মিলিয়ে দলের সাত গোলের প্রত্যেকটাতেই অবদান রাখা হয়ে যায় তাঁর।
দুই লেগের ইউরোপীয় মোকাবিলায় এই প্রথমবারের মতো সাত গোল হজম করেছে ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের চেলসি। দিনের অন্য ম্যাচে নাপোলিকে হারিয়ে দেওয়া লিওনেল মেসির বার্সেলোনা কোয়ার্টারে মুখোমুখি হচ্ছে তাঁদের। ১৫ আগস্ট পর্তুগালে মুখোমুখি হবে এই দুই দল। পাঁচ বছর পর শিরোপা জিততে হলে যে ম্যাচ জয় ছাড়া বিকল্প নেই বার্সার সামনে।