গোলদাতা মেদিনাকে ঘিরে আর্জেন্টিনার উচ্ছ্বাস
গোলদাতা মেদিনাকে ঘিরে আর্জেন্টিনার উচ্ছ্বাস

কোনোরকমে পাওয়া জয়ে আশা বাঁচিয়ে রাখল আর্জেন্টিনা

প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ২-০ গোলে হারেই আর্জেন্টিনার কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। সে শঙ্কা একেবারে শেষ হয়ে যায়নি, তবে অলিম্পিকে ছেলেদের ফুটবলে গ্রুপ পর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে আজ শঙ্কা কিছুটা কমিয়েছে আর্জেন্টিনা।

জাপানের হোক্কাইদোতে আজ মিসরকে কোনোরকমে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা, গোলটাও এসেছে এক ডিফেন্ডারের কাছ থেকে। তবে ১-০ গোলের জয়ে অন্তত এই মুহূর্তে গ্রুপের দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে, এটাই স্বস্তি দলটার সমর্থকদের।

এই জয়েও আর্জেন্টিনার উচ্ছ্বাসের তেমন কিছু নেই। কারণ, বাংলাদেশ সময় আগামী বুধবার বিকেল পাঁচটায় গ্রুপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচটাই আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। গ্রুপে নামের ভারে সবচেয়ে বড় দল স্পেনের বিপক্ষে যে সেদিন নামতে হবে আর্জেন্টিনাকে। ব্রাজিলের পাশাপাশি এবারের অলিম্পিকে স্পেনই সবচেয়ে বেশি তারকাবহুল দল নিয়ে এসেছে!

স্পেন পরীক্ষার আগে আজ মিসরের বিপক্ষে জয়টা আর্জেন্টিনার পয়েন্ট তালিকায় একটু স্বস্তি অবশ্য দেবে। স্পেন অনেক তারকা নিয়ে এসেও যে আক্রমণভাগের ব্যর্থতায় মিসরের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে গোলশূন্য ড্র করেছিল! এই মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলছে স্পেন, এই প্রতিবেদন লেখার সময়ে প্রথমার্ধ শেষেও ম্যাচ গোলশূন্য।

আজ আর্জেন্টিনার জয়েও অবশ্য আক্রমণভাগের তেমন অবদান নেই। ৫২ মিনিটে ম্যাচের একমাত্র গোলটি করেছেন ডিফেন্ডার ফাকুন্দো মেদিনা।

গোলের পর মেদিনার উল্লাস।

আর্জেন্টিনার এই দল নিয়ে এবার অলিম্পিকে হয়তো খুব বেশি কিছু আশা করেননি আর্জেন্টিনার কোনো সমর্থক। দলটাই যে এমন!

অলিম্পিকে মূলত অনূর্ধ্ব-২৩ দল (করোনার কারণে অলিম্পিক এক বছর পিছিয়ে যাওয়ায় এবার অবশ্য অনূর্ধ্ব-২৪ খেলোয়াড়দের নেওয়া হয়েছে) এলেও দলে সর্বোচ্চ তিনজন বেশি বয়সী খেলোয়াড় থাকতে পারে। সেখানে ব্রাজিল দলে এবার দানি আলভেজ, রিচার্লিসনের মতো বেশি বয়সী তারকার পাশাপাশি আছেন মালকম, গাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি, পাওলিনিও, মাতেউস কুনিয়া, রেইনিয়ের, ব্রুনো গিমারেসের মতো ইউরোপে আলো ছড়ানো তারকারা।

স্পেন দলে রিয়াল মাদ্রিদের মার্কো আসেনসিও, বার্সেলোনার পেদ্রি, রিয়াল মাদ্রিদ থেকে গত মৌসুমে আর্সেনালে ধারে খেলা দানি সেবায়োসসহ তারকা আছেন অনেক। সে তুলনায় আর্জেন্টিনা দলকে দেখে আর্জেন্টিনা ভক্তদের হয়তো আগের অলিম্পিকের দলগুলোর কথা মনে করে হাহাকার ঝরে।

২০০৪ অলিম্পিকে সোনা জেতা দলে ছিলেন কার্লোস তেভেজ, হাভিয়ের সাভিওলা, রবার্তো আয়ালা, গাব্রিয়েল হাইঞ্জ, হাভিয়ের মাচেরানোর মতো তারকা। পরের অলিম্পিকে তো লিওনেল মেসি, আনহেল দি মারিয়া, সের্হিও আগুয়েরো, এভার বানেগারা বেইজিং মাতিয়ে গেলেন। টানা দ্বিতীয়বার অলিম্পিক সোনা জেতালেন আর্জেন্টিনাকে।

আর্জেন্টিনার রক্ষণকে বেশ ভুগিয়েছে মিশর।

সে তুলনায় এবার টোকিও অলিম্পিকের আর্জেন্টিনা দলটা দেখুন! এক আলেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার ছাড়া আর কারও তেমন নাম শোনা যায়নি। ম্যাক অ্যালিস্টারও খেলেন কিনা ব্রাইটনে। এর বাইরে ‘আগামীর প্রতিভা’ হিসেবে একটু-আধটু নাম শোনা গেছে, এমন খেলোয়াড় হিসেবে থিয়াগো আলমাদা, আদোলফো গাইস, নেহুয়েন পেরেসদের কথা বলা যেতে পারে। এমন দল নিয়ে আর্জেন্টিনা এবারের অলিম্পিকে তেমন দারুণ কিছু করবে, সে আশা হয়তো কেউ করেননি।

প্রথম দুই ম্যাচ শেষে বোঝা যায়, আর্জেন্টিনার এই দল নিয়ে আশার বেলুন ফোলানোর মতো কিছু হয়নি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ফ্রান্সিসকো ওর্তেগা লাল কার্ড দেখার আগেই ১-০ গোলে পিছিয়ে ছিল আর্জেন্টিনা, পরে ম্যাচ হারে ২-০ গোলে। এরপর আজও মিসরের বিপক্ষে জিততে ঘাম ঝরে গেছে আর্জেন্টিনার।

৪-৫-১ ছকে সবার ওপরে গাইসকে রেখে মাঝমাঠে তাঁর পেছনের তিনে আর্জেন্টিনা রেখেছে এসেকিয়েল বার্কো, ম্যাক অ্যালিস্টার ও পেদ্রো দে লা ভেগাকে। তাঁদের পেছনে দুই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে ছিলেন ফস্তো ভেরা ও মার্তিন পায়েরো। রক্ষণে অধিনায়ক নাহুয়েল পেরেসের সঙ্গে ছিলেন ফাকুন্দো মেদিনা, ক্লদিও ব্রাভো ও এর্নান দে লা ফুয়েন্তে। গোলপোস্টে আর্জেন্টিনার স্কোয়াডের একমাত্র বেশি বয়সী খেলোয়াড় জেরেমাই লেদেসমা।

রমাদান সোভি (বাঁয়ে) মিশরের হয়ে কয়েকটি সুযোগ তৈরি করেছেন।

৪ মিনিটে প্রথম সুযোগ পেয়েছিল আর্জেন্টিনাই। মিসরীয় রক্ষণের ভুলের সুযোগে গাইসের শট পোস্টে লেগে ফেরে। একটু পর পেদ্রো দে লা ভেগার শটও ক্রসবার উঁচিয়ে চলে যায়। কিন্তু এরপর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের স্মৃতি যেন ফিরে ফিরে আসছিল। সেদিন অস্ট্রেলিয়ানরা নাচিয়ে ছেড়েছে আর্জেন্টিনাকে, অস্ট্রেলিয়ার সুযোগ কাজে লাগাতে না পারার ভুলের কারণেই সেদিন মাত্র দুই গোল খেয়ে বেঁচেছিল আর্জেন্টিনা। আজ মিসরও বেশ ভুগিয়েছে আর্জেন্টিনাকে।

১২ মিনিটে ডিফেন্ডার নেহুয়েন পেরেসের ভুলের সুযোগে মিসরের রমাদান সোভি শট নেন, গোলকিপার জেরেমাই লেদেসমা সে দফায় বাঁচান আর্জেন্টিনাকে। এরপর মিসরেরই দাপট ছিল, এর মধ্যেও এর্নান দে লা ফুয়েন্তে একটা সুযোগ পেয়েছিলেন আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেওয়ার। মার্তিন পায়েরোর দারুণ পাস এসেছিল দে লা ফুয়েন্তের পায়ে, কিন্তু শট ঠিকঠাকমতো নিতে পারেননি তিনি।

গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর আর্জেন্টিনা হঠাৎই এগিয়ে যায়। আলেক্সিস ম্যাকঅ্যালিস্টারের শট পোস্ট কাঁপিয়ে ফেরে, ফিরতি শটে বল জালে জড়ান মেদিনা। এরপর অবশ্য আর্জেন্টিনা রক্ষণ জমাট রেখে পাল্টা আক্রমণের কৌশলে খেলেছে। এর মধ্যেও সোভি অবশ্য সমতা ফেরানোর দারুণ একটা সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিলেন মিসরকে, কিন্তু তাঁর পাসে পা ছুঁয়ে বলটা জালে জড়ানোর মতো কেউ ছিলেন না।