জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েছেন সাদ উদ্দিন
জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েছেন সাদ উদ্দিন

কোথায় হারালেন সেই সাদ উদ্দিন

ফুটবলার সাদ উদ্দিনের নাম শুনলে চোখের সামনে অনেক দৃশ্যই ভেসে উঠতে পারে। সবার আগে যে দৃশ্য ভেসে ওঠার কথা, তা হলো কলকাতার যুব ভারতী স্টেডিয়ামে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে ঠোঁটে আঙুল দিয়ে দৌড়াচ্ছেন সাদ।

জামাল ভূঁইয়ার ফ্রি–কিক থেকে হাওয়ায় ভেসে আসা বাঁক খাওয়া বল, ভারত গোলরক্ষক গুরপ্রীত সিং ফ্লাইট মিস করলেন, শরীর কিছুটা সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে হেড করলেন সাদ। বল জড়িয়ে গেল জালে। যুব ভারতী স্টেডিয়ামে থেমে গেল প্রায় ৫৫ হাজার দর্শকের ‘লেটস গো ইন্ডিয়া’ গর্জন।

সাদের গোলে জয়ের সুবাস ছড়ালেও ম্যাচের শেষের দিকে গোল খেয়ে বাংলাদেশ আর জিততে পারেনি। তবে সেই ম্যাচেই সাদের গায়ে লেগে যায় তারকার তকমা।

কলকাতার বিখ্যাত স্টেডিয়ামে র‌্যাঙ্কিংয়ে অনেক এগিয়ে থাকা স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে গোল করা তো অন্য আর দশটা গোলের মতো নয়। মজার ব্যাপার হলো, জাতীয় দলের হয়ে সাদ উদ্দিনের গোল ওই একটাই।

সেই গোল এত আলোচিত হয়ে থাকার আরেকটি কারণ, সেই ড্রয়ের মাহাত্ম্য। বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের যৌথ বাছাইপর্বে বাংলাদেশের অর্জন ছিল মাত্র ২ পয়েন্ট। যার মধ্যে ১ পয়েন্ট ভারতের বিপক্ষে সেই ড্রয়ে। এতে বাছাইপর্বের ৩৫তম দল হিসেবে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে সরাসরি জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ।

বাছাইপর্বের ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হবে জুনে। এর আগে দলকে প্রস্তুত করার জন্য ২৪ ও ২৯ মার্চ যথাক্রমে মালদ্বীপ ও মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে দুটি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। এখানেই আসছেন সাদ উদ্দিন। কারণ, প্রীতি ম্যাচের বাংলাদেশ দলে তাঁর জায়গা হয়নি।

ভারতের বিপক্ষে সেই গোলরে পর সাদের উদযাপন

দুটি ম্যাচের জন্য আজ ২৩ সদস্যের জাতীয় দল ঘোষণা করেছেন হাভিয়ের কাবরেরা। জানুয়ারিতে বাংলাদেশের দায়িত্ব নিলেও এই প্রথম জাতীয় দল ঘোষণা করার সুযোগ পেলেন এই স্প্যানিশ।

কাবরেরা-যুগের শুরুতেই জাতীয় দল থেকে ছিটকে পড়লেন সাদ। গত কয়েক বছরে ইংলিশ কোচ জেমি ডের অধীন নিজেকে প্রথম পছন্দ হিসেবে প্রমাণ করা সাদ স্প্যানিশ যুগের শুরুতে মুদ্রার উল্টো পিঠটাও দেখলেন।

২০১৮ সালে এশিয়ান গেমসে জেমির অধীন ফরোয়ার্ড হিসেবে সাদের শুরু। সে বছর ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপেও ছিলেন ‘অটোমেটিক চয়েস’। এরপর চোটের কারণে দল থেকে ছিটকে পড়লেও বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব দিয়ে ফেরা। ভারতের বিপক্ষে প্রথম একাদশে সুযোগ পেয়েই হয়ে গিয়েছিলেন নায়ক।

গত অক্টোবরে জেমির বিদায়ের আগপর্যন্ত ইংলিশ এই কোচের দলে অপরিহার্য হয়েই ছিলেন সাদ। দলের প্রয়োজনে মূল স্ট্রাইকার থেকে শুরু করে রাইট উইঙ্গার ও রাইটব্যাক হিসেবেও খেলানো হয়েছে তাঁকে।

জেমির বিদায়ের পর অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে অস্কার ব্রুজোন ও মারিও লেমোসের অধীনও দুটি টুর্নামেন্টে খেলেছেন তিনি। ২০১৮ সালে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পর এই প্রথম পারফরম্যান্সের কারণে বাদ পড়লেন ২৩ বছরের এই তরুণ।

অবশ্য ঘরোয়া ফুটবলের পারফরম্যান্স পর্যালোচনা করলে সাদের বাদ পড়াটাকে খুব একটা চমক বলা যাবে না। আবাহনী লিমিটেড থেকে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রে যোগ দিয়ে সেখানেও নিয়মিত ছিলেন। তবে খেলেছেন রাইটব্যাক পজিশনে।

অনুশীলনে সাদ উদ্দিন

কিন্তু দলের মতো তাঁর পারফরম্যান্সও ছিল ম্রিয়মাণ। ৮ ম্যাচে মাত্র ১২ পয়েন্ট নিয়ে শেখ রাসেল আছে ১২ দলের পয়েন্ট টেবিলে ১১ নম্বরে। দল গোল খেয়েছে ১৩টি। একজন ডিফেন্ডার হিসেবে দলের এতগুলো গোল খাওয়ার দায় সাদ উদ্দিনের ওপরও বর্তায়।

তার চেয়েও বড় কথা, জেমি ডে যেমন সাদ উদ্দিনের ফরোয়ার্ড হিসেবে দক্ষতার কথা জানতেন, কারবেরা তো তাঁকে দেখেছেন শুধুই রাইটব্যাক হিসেবে। সে ক্ষেত্রে সাদ উদ্দিনের চেয়ে ভালো তো আরও অনেকেই আছেন। কাবরেরার ডাকা ২৩ জনেই যেমন রাইটব্যাক আছেন তিনজন—বিশ্বনাথ ঘোষ, তারিক কাজী ও ছয় বছর পর ডাক পাওয়া নাসিরুল ইসলাম।