ব্রাজিলের কোচ হবে ব্রাজিলিয়ান, আর্জেন্টিনার আর্জেন্টাইন। শুধু দক্ষিণ আমেরিকার দুই পরাশক্তিই কেন, ইউরোপে স্পেন, ইতালি, পর্তুগাল, ফ্রান্সের মতো পরাশক্তিও তো জাতীয় দলের কোচের খোঁজে সব সময় দেশি কোচদেরই মধ্য থেকে কাউকে খুঁজে নিয়েছে।
জাতীয় দলে বিদেশি কোচ যে তাদের গর্বে আঘাত করে!
তবে ব্রাজিল বুঝি সেই ধারা থেকে বেরিয়ে আসছে! কাতার বিশ্বকাপের পর তিতে আর নেইমারদের কোচ থাকছেন না, এটা তো নিশ্চিতই। তাঁর বদলির খোঁজ শুরু হয়ে গেছে। তবে এবার আর ব্রাজিলের ফুটবল ফেডারেশনের (সিবিএফ) চোখ ব্রাজিলেই আটকে থাকছে না।
সিবিএফ সভাপতি এদনালদো রদ্রিগেজই বলেছেন, ব্রাজিলের পরের কোচ ব্রাজিলিয়ানই হতে হবে, এমন কোনো নিয়ম বেঁধে নিয়ে বসে নেই তাঁরা।
বিশ্বকাপে ব্রাজিল যেমনই করুক, তিতে যে আর ব্রাজিল কোচ থাকছেন না, সেটা নিশ্চিত।
তারপর দায়িত্বে কে আসছেন, এ নিয়ে জল্পনাকল্পনার তো শেষ নেই! কদিন আগে ম্যানচেস্টার সিটির স্প্যানিশ কোচ পেপ গার্দিওলার নাম বেশ জোরেশোরে শোনা গিয়েছিল। গার্দিওলা যদিও তখন বলেছিলেন, ব্রাজিলের কোচ হওয়ার জন্য অনেক ভালো কোচ তো ব্রাজিলেই আছেন। গার্দিওলা-ব্রাজিল গুঞ্জন তাই কিছুটা চুপসে গিয়েছিল গত কিছুদিনে।
কিন্তু এখন আবার বুঝি গুঞ্জনটা চাউর হওয়ার সময় এসেছে! আজ সকালেই তুরস্কের সাংবাদিক একরেম কনুর জানালেন, ব্রাজিলের কোচ হওয়ার সংক্ষিপ্ত তালিকায় আছেন পর্তুগিজ কোচ জর্জ জেসুস। গত ডিসেম্বরে বেনফিকায় তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত হওয়া ৬৭ বছর বয়সী জেসুস এর আগে মূলত পর্তুগালেই কোচিং করিয়েছেন।
তার মধ্যে বেনফিকা আর স্পোর্তিং লিসবনই উল্লেখযোগ্য। বেনফিকায় প্রথম দফায় ছয় বছরে তিনবার লিগসহ দশটি শিরোপা জিতেছেন, স্পোর্তিংয়ে জিতেছেন দুটি কাপ।
তবে সেটি ছাপিয়ে ব্রাজিলের কোচের দৌড়ে জেসুসের নামটা বেশি শোনা যাচ্ছে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ফ্লামেঙ্গোতে তাঁর অসাধারণ একটি বছর! এক বছরেই ব্রাজিলিয়ান লিগ, দক্ষিণ আমেরিকান ক্লাব শ্রেষ্ঠত্বসূচক ট্রফি কোপা লিবার্তাদোরেস, ব্রাজিলিয়ান সুপারকাপ, মহাদেশীয় সুপারকাপ সবই জিতেছে জেসুসের ফ্লামেঙ্গো। ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপেও হয়েছে রানার্সআপ!
জেসুসকে ঘিরে গুঞ্জন এমন দিনে চাউর হয়েছে বলেই গুঞ্জনটা জোর পাচ্ছে বেশি। সিবিএফ সভাপতি এদনালদো রদ্রিগেজ তো বলেই দিয়েছেন, ‘(তিতের উত্তরসূরি) কোনো ব্রাজিলিয়ানই হতে হবে, এমন কোনো নিয়ম তো নেই। যেমন তিনি কোনো বিদেশি কোচ হতে হবে, এমন ধরাবাঁধা কোনো নিয়মও নেই। এ ব্যাপারটা নিয়ে বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পরই কথা বলব।’
বিদেশি কোচদের জন্য দরজা খুলে দিয়েছে ব্রাজিল, এমন খবরের পর গার্দিওলাকে ঘিরে গুঞ্জন তো আবার চাউর হবেই! এর আগে স্প্যানিশ দৈনিক মার্কাও লিখেছিল, গার্দিওলাকে কোচ হতে প্রস্তাব দিয়েছেন রদ্রিগেজ। কিন্তু মাসখানেক আগে চার বছরের মেয়াদে সিবিএফ সভাপতি নির্বাচিত রদ্রিগেজ আরেকবার জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি গার্দিওলাকে এমন কোনো প্রস্তাব দেননি।
‘গার্দিওলা সব সময় জিততে চাওয়া একজন কোচ, তাঁকে নিয়ে নতুন করে বলার তো কিছু নেই। খেলোয়াড়, কোচ দুই ভূমিকাতেই দারুণ করেছেন। তবে গার্দিওলাকে ব্রাজিল দলের কোচ হিসেবে পেতে চেষ্টা করার জন্যও সিবিএফ বা এর সভাপতির দিক থেকে কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি’—বলেছেন রদ্রিগেজ।
ব্রাজিল কোচ নিয়ে এত আলোচনা আসছে তিতের ঘোষণার কারণে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি এক সাক্ষাৎকারে তিতে জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি বিশ্বকাপের পর আর ব্রাজিলের কোচ থাকবেন না। এপ্রিলে কাতার বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ড্র হয়ে যাওয়ার পরও আবার একই কথা জানিয়েছেন তিতে। তবে নিজের উত্তরসূরি হিসেবে কোনো ব্রাজিলিয়ানকেই চান বলে নিজের পছন্দের কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন তিতে।