বিদেশি কোচের বেতনসংক্রান্ত ঝামেলায় বেশ কয়েকবারই ফিফার শৃঙ্খলা কমিটির কাঠগড়ায় উঠতে হয়েছে বাংলাদেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা বাফুফেকে। জাতীয় দলের সাবেক সহকারী ডাচ কোচ রেনে কোস্টারের বকেয়া বেতনের ঝামেলাটা এখনো চলছে। এর সঙ্গে আবার বাফুফেকে কাঠগড়ায় তুলে দিয়েছেন মোহামেডানের সাবেক নাইজেরিয়ান কোচ এমেকা ইজিউগো। এতে মোহামেডানের ওপর দণ্ড তো জারি হয়েছেই, সঙ্গে বড় ধরনের হুমকির মুখে আছে বাফুফেও।
২০১২-১৩ মৌসুমে মোহামেডানের কোচ হয়ে এসেছিলেন তাদের সাবেক ফুটবলার এমেকা ইজিউগো। মৌসুমের মাঝপথে দলের দায়িত্ব ছাড়ার সময় তাঁর প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয়নি ক্লাব। এমেকা এরপর বারবার বাফুফের শরণ নিলেও টাকা আদায় করতে পারেননি। কোনো উপায় না দেখে তিনি ফিফার কাছে নালিশ করে নিজের পক্ষে রায় পেয়েছেন। বিশ হাজার ডলারের সঙ্গে সুদ যোগ হয়ে টাকার অঙ্কটা এখন ২২ হাজার ডলার। এই টাকাটা মোহামেডানকে দিতে হবে। সঙ্গে কাটা যাবে তিন পয়েন্ট।
বহু জল ঘোলা করে মোহামেডানের মাধ্যম হয়ে এমেকাকে টাকা পরিশোধের চিঠি পাঠিয়েছে বাফুফে। প্রথম আলোর কাছে সে চিঠির কপিও আছে। চিঠিতে প্রাপ্য টাকাটা তিন কিস্তিতে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রথম কিস্তিতে চলতি মাসের ১২ তারিখে আট হাজার ডলার, ৩১ তারিখে দ্বিতীয় কিস্তিতে আট হাজার ডলার ও শেষ কিস্তিতে আগামী বছরের ১৫ জানুয়ারি বাকি ছয় হাজার ডলার এমেকাকে দিতে চায় মোহামেডান।
কিন্তু এই প্রস্তাবে রাজি নন ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপে নাইজেরিয়া দলের অন্যতম সদস্য এমেকা, ‘টাকা নেওয়ার সিদ্ধান্তটি এখন আর আমার আর মোহামেডানের মধ্যে নেই। থাকলেও আমি তিন কিস্তিতে টাকা নিতে চাই না। ব্যক্তিগতভাবে এমন প্রস্তাব গত তিন বছর ধরে আমাকে দেওয়া হচ্ছে। আমি বিরক্ত। কোনো কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।’
১৯৮৭ সালে প্রথমবার মোহামেডানের হয়ে খেলেছিলেন এমেকা। সেবার দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়েই পরিণত হন ঢাকা মাঠের অন্যতম জনপ্রিয় ফুটবলারে। সেবার মোহামেডানের লিগ জয়ে তাঁর ভূমিকা ছিল অসাধারণ। আবাহনীর বিপক্ষে লিগ-নির্ধারণী দুটি ম্যাচেই গোল করেছিলেন তিনি। পরের মৌসুমেও সাদা-কালো জার্সি গায়ে খেলেছিলেন এমেকা। ১৯৮৮-৮৯ মৌসুমে লিগের একটি ম্যাচে আদমজী ক্লাবের বিপক্ষে খেলা শুরুর কয়েক সেকেন্ডের মাথায় গোল করেছিলেন তিনি। বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও মোহামেডানের সাফল্যে দারুণ ভূমিকা রেখেছিলেন দীর্ঘদেহী এই ফুটবলার।
বাংলাদেশ থেকে গিয়ে এমেকা নিজের ফুটবল ক্যারিয়ারকে ভিন্নমাত্রা দেন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন লিগে খেলার সুযোগ পান। স্থান করে নেন নাইজেরিয়া জাতীয় দলে। চুরানব্বইয়ের বিশ্বকাপে দেশের জার্সিতে ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিজেকে নিয়ে যান তিনি।
মোহামেডানের সমর্থকদের তাঁর প্রতি ভালোবাসাও ছিল অন্য রকম। এ দেশের ফুটবলে কোনো বিদেশি ফুটবলার এমেকার মতো জনপ্রিয় ছিলেন কি না, সেটি নিয়ে গবেষণা হতে পারে। ২০১২-১৩ মৌসুমে মোহামেডানের কোচ হয়ে এসেছিলেন। কিন্তু কোচ হিসেবে তাঁর বাংলাদেশে আসাটা খেলোয়াড় হিসেবে আসার মতো সুখকর হয়নি।
টাকাপয়সা নিয়ে ঝামেলা হলেও মোহামেডানের প্রতি ভালোবাসাটা নাকি অটুট আছে এমেকার, ‘আমি মোহামেডানকে অনেক ভালোবাসি। নাইজেরিয়া ফিরে অনেক মানুষের কাছেই ক্লাবটির প্রশংসা করেছিলাম। কিন্তু কিছু খারাপ লোকের জন্য মোহামেডান আজ ডুবে গেল।’
আজকের এই পরিস্থিতির জন্য বাফুফেকেই বেশি দায়ী করছেন তিনি, ‘আমি ২০১২ সালে বাফুফের সাধারণ সম্পাদকের কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি আমাকে পাত্তাই দেননি। এখন সে-ই আমাকে বারবার ফোন দিচ্ছে বিষয়টি নিয়ে সমঝোতা করার জন্য।’