২০২১ শেষ হতে যাচ্ছে আর কিছুক্ষণ পর। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন সবাই। ফুটবলপ্রেমীরা তো রীতিমতো ক্ষণ গুনছেন কালকের জন্য। কারণ, শীতকালীন দলবদল যে শুরু হবে কাল। আগামীকাল থেকে এক মাসের জন্য আবার জমজমাট আলোচনা শুরু হবে খেলোয়াড়ের দলবদল নিয়ে। সমর্থকেরা প্রতিটি মুহূর্ত কাটাবেন নিজের ক্লাবে পছন্দের খেলোয়াড়ের যোগ দেওয়ার খবর পাওয়ার আশায়।
সবাই যে এই জানুয়ারিতে দল বদল করবেন, এমন নয়। অনেক বড় তারকাই জানুয়ারিতে দল পরিবর্তন করতে আগ্রহী নন। মৌসুমের এই পর্যায়ে নতুন কোনো ক্লাবে, নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়া কঠিন। তবু এবারের দলবদলে বেশ বড় কিছু নাম আলোচনায় থাকবে। কারণ, বর্তমান ক্লাবের সঙ্গে অনেকেরই চুক্তি শেষ হয়ে যাবে ২০২২ সালের জুনে। ফলে আগামীকাল থেকেই চাইলে অন্য কোনো ক্লাবের সঙ্গে প্রকাশ্যেই চুক্তি করে রাখতে পারবেন খেলোয়াড়েরা। তাঁদের বর্তমান ক্লাব এ ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।
প্রতি মৌসুমেই এমন কিছু দেখা যায়। ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে দর-কষাকষি চলতে থাকে খেলোয়াড়ের। দেখা যায়, জানুয়ারিতে গিয়েও একমত হতে পারে না দুই পক্ষ। আর তখন সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে অন্য ক্লাব। গত মৌসুমে যেমন চাইলেই অন্য ক্লাবের সঙ্গে কথা বলতে পারতেন লিওনেল মেসি, সের্হিও রামোস, ডেভিড আলাবা, জর্জিনিও ভাইনালডম বা জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মারা। চাইলেই যেকোনো দলের সঙ্গে প্রাক্–চুক্তি করে রাখতে পারতেন। কিন্তু সবাই নতুন দল ঘোষণার জন্য মৌসুম শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন। তাঁদের মধ্যে আলাবার রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেওয়ার খবর অবশ্য জানুয়ারির দলবদলের পর থেকেই শোনা যাচ্ছিল। যদিও রিয়াল বা আলাবা—কোনো পক্ষই জানুয়ারিতে চুক্তি করার কথা স্বীকার করেনি।
এ মৌসুমেও ঝড় তোলার মতো বড় সব নাম জানুয়ারিতে অন্য ক্লাবের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। সবার প্রথমেই আছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। এই মৌসুমেই পিএসজি ছাড়তে চেয়েছিলেন ফ্রেঞ্চ ফরোয়ার্ড। কিন্তু ২৩ বছর বয়সীকে কোনোভাবেই ছাড়তে রাজি হয়নি তাঁর ক্লাব। প্রকাশ্যেই রিয়াল মাদ্রিদে যেতে চেয়েছেন এমবাপ্পে। কাল থেকে চাইলেই রিয়ালের সঙ্গে চুক্তি করতে পারবেন বিশ্বকাপজয়ী ফরোয়ার্ড।
তবে ফেব্রুয়ারিতেই চ্যাম্পিয়নস লিগে পিএসজির জার্সিতে রিয়ালের মুখোমুখি হবেন এমবাপ্পে। এ অবস্থায় ক্লাব বদলানোর ঘোষণা দেওয়া যে অন্যায়, সেটা বোঝেন বলেই এমবাপ্পে আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, জানুয়ারিতে দলবদলের সিদ্ধান্ত নেবেন না।
এমবাপ্পে না নিলেও তাঁর জাতীয় দলের সতীর্থ উসমান দেম্বেলেকে হয়তো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এই জানুয়ারিতেই নিতে হবে। বার্সেলোনা এই উইঙ্গারকে ঘিরে ভবিষ্যৎ সাজাতে চেয়েছিল। কিন্তু নতুন চুক্তির প্রস্তাবে দেম্বেলে অবিশ্বাস্য বেতন ও ভাতা দাবি করায় বার্সেলোনা খেপে উঠেছে। চুক্তি নবায়নের প্রস্তাব স্থগিত হয়ে গেছে। এখন তাঁকে যত দ্রুত সম্ভব বিক্রি করতে চায় ক্লাব।
দেম্বেলেকে পেতে আগ্রহী সৌদি মালিকানাধীন নিউক্যাসল ইউনাইটেড। তবে দেম্বেলেকে পেতে চায় পিএসজি, জুভেন্টাসের মতো ক্লাবও। সে ক্ষেত্রে অবশ্য তাঁকে ছয় মাস অপেক্ষা করতে হবে। তবে চাইলেই কাল থেকে এই দুই ক্লাবের সঙ্গে কথা সেরে রাখতে পারবেন দেম্বেলে।
বড় তারকা কিন্তু মুফতে দল ছাড়তে পারবেন, এমন ফ্রেঞ্চ তারকা আরও একজন আছেন—পল পগবা। ২০১৬ সালে তৎকালীন বিশ্ব রেকর্ড গড়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যাওয়া পগবার চুক্তিও শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাঁর আচরণ ও তাঁর এজেন্ট মিনো রাইওলার কথাবার্তা বলছে, ইউনাইটেডের সঙ্গে নতুন চুক্তির সম্ভাবনা খুব কম। পগবার বহুদিনের স্বপ্ন ছিল রিয়াল মাদ্রিদে যাওয়ার। চার বছর ধরে রিয়ালও তাঁকে পেতে আগ্রহী ছিল। কিন্তু রিয়ালের বর্তমান কোচিং স্টাফ আর পগবায় আগ্রহী নন। ২৮ বছর বয়সীকে পাওয়ার দৌড়ে তাঁর পুরোনো ক্লাব জুভেন্টাস ও ফ্রেঞ্চ ক্লাব পিএসজিই এগিয়ে।
এ মৌসুমে আলাবার পর আগামী মৌসুমেও মুফতে খেলোয়াড় পেতে চাইছে রিয়াল। এমবাপ্পে ছাড়াও তাদের নজরে আছে আন্তোনিও রুডিগার। চেলসির এই জার্মান ডিফেন্ডার নতুন চুক্তিতে যে বেতন চাইছেন, তা ব্লুরা দিতে চাইছে না। রিয়াল এই সুযোগই নিতে চাইছে। একই অবস্থা নাপোলির লরেঞ্জো ইনসিনিয়ের। ইতালিয়ান উইঙ্গার নাপোলি ছেড়ে যাবেন, এটা প্রায় নিশ্চিত। তাঁকে পেতে তিনটি ক্লাব আগ্রহী বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
গোল স্কোরিং উইঙ্গারদের মধ্যে আরও একজন কাল থেকে অন্য ক্লাবের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। রোনালদো চলে যাওয়ার পর জুভেন্টাসের মূল তারকা হওয়ার কথা ছিল পাওলো দিবালার। জুভ কোচ মাসিমিলিয়ানো আলেগ্রিরও খুব পছন্দ তাঁকে। কিন্তু দিবালার চুক্তি এখনো নবায়ন হয়নি। ইতালিয়ান সংবাদমাধ্যমের খবর, একের পর এক চোটে পড়তে থাকা, ধারাবাহিকতার অভাবে ভুগতে থাকা দিবালার সঙ্গে চুক্তি নবায়নে জুভেন্টাসও দ্বিধায়! জানুয়ারিতেই বোঝা যাবে, পাঁচ কোটি ইউরো মূল্যের আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডকে বিনা মূল্যে যেতে দেবে কি না জুভেন্টাস।