কাতারে আটটি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের ৩৪ জন বর্তমান ও সাবেক কর্মীর অভিজ্ঞতা নথিভুক্ত করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল
কাতারে আটটি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের ৩৪ জন বর্তমান ও সাবেক কর্মীর অভিজ্ঞতা নথিভুক্ত করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দাবি

কাতার বিশ্বকাপে শ্রমিকদের জোরপূর্বক শ্রমে বাধ্য করা হচ্ছে

কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে ইউরোপের দেশগুলোর আপত্তি নতুন কিছু নয়। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়, এমন দাবি তুলে সেখানে বিশ্বকাপ আয়োজন করায় ফিফার ওপর ক্ষুব্ধ অনেকেই।

তবু সব সমালোচনা পাশ কাটিয়ে আগামী নভেম্বরে হবে কাতার বিশ্বকাপ। এর মধ্যে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল দাবি করেছে, কাতার বিশ্বকাপে শ্রমিকদের অত্যাচার করছে কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। অভিবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা জোরপূর্বক শ্রমের অধীনে পড়ে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল একটি প্রতিবেদন ছাপিয়েছে। তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সেই প্রতিবেদনের চুম্বক অংশ নিচে দেওয়া হলো।


‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল দেখেছে, কাতারে কাজ করা নিরাপত্তাকর্মী, যাঁদের মধ্যে ২০২২ বিশ্বকাপের প্রকল্পের লোকও আছেন, তাঁরা যে পরিবেশে কাজ করেছেন, তা জোরপূর্বক শ্রমের পর্যায়ে পড়ে।’

আগামী নভেম্বরে হবে কাতার বিশ্বকাপ

নতুন প্রতিবেদনে এ সংস্থা জানিয়েছে, তারা কাতারে আটটি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের ৩৪ জন বর্তমান ও সাবেক কর্মীর অভিজ্ঞতা নথিভুক্ত করেছে, ‘নিরাপত্তাকর্মীরা, তাঁরা সবাই অভিবাসী, জানিয়েছেন দিনে ১২ ঘণ্টা, সপ্তাহের সাত দিনই কাজ কাজ করতে হতো তাঁদের। প্রায়ই মাস এমনকি পুরো বছরও কোনো ছুটি ছাড়াই কাটিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।

অধিকাংশই বলেছেন, তাঁদের চাকরিদাতারা কাতারের আইন অনুযায়ী সাপ্তাহিক ছুটি দিতে রাজি হতেন না এবং যে কর্মীরা ছুটি নিতেন, তাঁদের বেতন কেটে শাস্তি দেওয়া হতো। একজন কাতারে তাঁর প্রথম বছরের বর্ণনায় বলেছেন, “যোগ্যরাই টিকে থাকে।”’

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আর্থিক ও সামাজিক বিচার বিভাগের প্রধান স্টেফান ককবার্ন বলেছেন, ‘আমরা যেসব অত্যাচার দেখেছি, এর পেছনে কাতারে অভিবাসী কর্মী ও চাকরিদাতাদের মধ্যে ক্ষমতার বিশাল পার্থক্যই প্রভাব ফেলেছে। এর অর্থ কর্তৃপক্ষ এখনো শ্রমিক আইন পুরোপুরি প্রয়োগ করতে পারেনি। আমরা যেসব নিরাপত্তাকর্মীর সঙ্গে কথা বলেছি, তাঁরা সবাই জানতেন চাকরিদাতার নিয়ম ভাঙছেন। কিন্তু এর প্রতিবাদ করার ক্ষমতা তাঁদের ছিল না। শারীরিক ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত কর্মীরা প্রতিদিন কাজে হাজির হতেন। কারণ, তা না করলে তাঁদের আর্থিকভাবে শাস্তি দেওয়া হতো। চুক্তি বাতিল বা দেশে ফেরত পাঠানোর ভয় তো আরও ভয়ংকর।’

‘গত কয়েক বছরে কাতার অনেক উন্নতি করেছে, কিন্তু আমাদের গবেষণায় আমরা অনেক অত্যাচারের নমুনা পেয়েছি। বিশ্বকাপের জন্য বেসরকারি খাতের চাহিদা অনেক বেড়েছে, আরও বাড়বে। চাকরিদাতারা এখনো প্রকাশ্যে শ্রমিকদের শোষণ করছে। কর্তৃপক্ষকে শ্রমিকদের রক্ষা করতে এগিয়ে আসতে হবে এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে হবে। বিশ্বকাপ আর মাত্র কয়েক মাস দূরে, ফিফাকেও এমন অত্যাচার ঠেকাতে নজরদারি বাড়াতে হবে। না হলে এমন ঘটনা এ টুর্নামেন্টের গায়ে কালি লেপে দেবে।’

কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে ইউরোপের দেশগুলোর আপত্তি নতুন কিছু নয়

‘আর ফিফার উচিত তাদের শক্তি কাজে লাগিয়ে কাতারকে চাপ দেওয়া। যেন কাতার নিজেদের আইন আরও ভালোভাবে প্রয়োগ করে। সময় খুব দ্রুত চলে যাচ্ছে। এখনো যদি সঠিক চর্চা না করা হয়, ভক্তরা (বিশ্বকাপ দেখে) ঘরে ফেরার পরও অত্যাচার চলতে থাকবে।’

এ ব্যাপারে ফিফা বলেছে, কাতারে মানবাধিকার বিষয়ে অ্যামনেস্টির সঙ্গে বসবে তারা, ‘ফিফা বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে জড়িত কোনো প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের অত্যাচার মেনে নেবে না। ক্লাব বিশ্বকাপ ও আরব কাপের সময় যেসব ঠিকাদার সঠিক মান বজায় রেখে কাজ করতে পারেনি, তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’