কাতারের ‘বাঙালি পাড়ায়’ জামালদের জন্য প্রার্থনা

প্রচুর বাংলাদেশির শ্রমিকের আবাস ফিরুজ আবদুল আজিজ এলাকায়।
ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশি সেলুন, বাংলাদেশি রেস্তোরাঁ, বাংলায় লেখা সব সাইনবোর্ড। সুনসান রাস্তা পেরিয়ে হঠাৎ এই এলাকায় এসে পড়লে খানিকটা বিস্ময়ও জাগবে। রাস্তায় পানি...এদিক–ওদিক ভারতীয়–বাংলাদেশিদের ভিড়। রাস্তার কিছুটা ভাঙাচোরা। হঠাৎ মনে হবে ঢাকা শহরের কোনো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। কিন্তু সম্বিত ফিরে পেয়ে মনে করতে হবে এটি দোহা শহরের একটি এলাকা! বলতে পারেন কাতারের ‘পুরান ঢাকা’!

কাতারের দ্বিতীয় ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ফিরুজ আবদুল আজিজ। প্রচুর বাংলাদেশি রেস্তোরাঁ, বাংলাদেশি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং বিপুলসংখ্যক শ্রমিকের আবাস রয়েছে এই এলাকায়। এই শ্রমিকদের ৯০ শতাংশই নির্মাণ খাতে কাজ করেন। বৃহস্পতিবার রাতে সেখানে ঢুঁ মেরে অনেক বাংলাদেশিকে পাওয়া গেল খোশমেজাজে। আলোচনা, আড্ডার অন্যতম বিষয় আজকের বাংলাদেশ-কাতার ফুটবল ম্যাচ। যে ম্যাচ নিয়ে বেশ উত্তাপ এই পাড়ায়। প্রবাসীরা খেলা দেখতে উন্মুখ। তাঁদের যেন আর তর সইছে না। সবাই দলের মঙ্গল কামনা করছেন।

কাতারের দ্বিতীয় ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ফিরুজ আবদুল আজিজ।

এমনিতে ভোর চারটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত কাজ করেন প্রবাসীরা। তাই ছুটির দিন না হলেও সন্ধ্যা সাতটায় তাঁদের পক্ষে ম্যাচ দেখা সম্ভব ছিল। তবে ম্যাচের দিন শুক্রবার হওয়ায় একেবারে সোনায় সোহাগা। সেটা ভেবেই বৃহস্পতিবার রাতটা আরও আনন্দময় হলো তাঁদের কাছে। এমনিতেই বৃহস্পতিবার রাতটি প্রবাসীদের কাছে চাঁদ রাতের মতো।

পরদিন ছুটি। সপ্তাহে এই এক দিনই ছুটি পান শ্রমিকেরা। যদিও এখানে সরকারি ছুটি শুক্র ও শনিবার। এ জন্য ফুরফুরে পাওয়া গেল বাংলাদেশিদের। এই রাতে ব্যবসাও ভালো যায়। ছোলা–মুড়ি থেকে শুরু করে সবই মেলে বাংলাদেশি রেস্তোরাঁগুলোয়।

শুক্রবার কেউ ঘুরতে যান, কেউ অবসর কাটান অন্যভাবে। বেশির ভাগ মেসেই চলে বিরিয়ানি রান্না। একটা আনন্দময় সময় কাটান প্রবাসীরা। সেই আনন্দকে বাড়িয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ-কাতার ম্যাচ। কাতার এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন, তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের লড়াইটা একপেশেই ধরে নিয়েছেন অনেকে। তারপরও দেশের টানে দেশকে ভালোবেসে আজ জামাল ভূঁইয়াদের জয় প্রার্থনা করা প্রবাসীর সংখ্যা অনেক।

করোনা সতর্কতায় দুসাইল স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতার মাত্র ২০ শতাংশ দর্শক খেলা দেখার সুযোগ পাচ্ছেন। তার ওপর টিকিট কাটার জটিল প্রক্রিয়ার কারণে আগ্রহ থাকলেও অনেকে টিকিট কাটতে পারেননি। অনলাইনে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে প্রত্যেকের আইডি দিয়ে টিকিট কাটতে হয়েছে। এই প্রক্রিয়া সত্ত্বেও আধা ঘণ্টায় টিকিট শেষ।

টিকিট পাননি, এমন অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাঁরা স্টেডিয়াম চত্বরে গিয়ে ভিড় করবেন। বাংলাদেশ দলকে সমর্থন দেবেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তফা তাঁর অফিসে বসে বললেন, ‘স্টেডিয়ামে যেতে পারব কি না, জানি না। তবে বাংলাদেশ দলের জন্য অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা। আমরা দোয়া করছি বাংলাদেশ যেন ভালোভাবে ম্যাচটা খেলতে পারে।’

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের মোহাম্মদ বেলায়েত টিকিট না পেয়ে ভীষণ হতাশ। গ্যালারিতে বসে খেলা দেখতে পারবেন না, এটা ভেবে নিরাশ বেলায়েত বলেন, ‘কয়েক দিন ধরেই টিকিট খুঁজছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেও পারিনি টিকিট কিনতে। তবে কয়েকজন বন্ধুসহ আমরা যাব স্টেডিয়াম পাড়ায়। বাংলাদেশ দলকে শুভেচ্ছা জানাব।’ চাঁদপুরের মোহাম্মদ কাওসারের কথা, ‘টিকিট পাইনি। খুবই খারাপ লাগছে। তারপরও চেষ্টা করছি যদি একটা ম্যানেজ করা যায়।’

বাংলাদেশিরা স্টেডিয়াম চত্বরে গিয়ে ভিড় করবেন। বাংলাদেশ দলকে সমর্থন দেবেন।

নোয়াখালী কোম্পানীগঞ্জের তরুণ আশরাফুল ইসলাম স্বদেশের ফুটবলে সব খোঁজখবরই রাখেন। তিনি টিকিট কিনতে পেরেছেন এবং গ্যালারিতে বসে দেখার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আড়াই বছর ধরে কাতারপ্রবাসী আশরাফুল বাংলাদেশের ফুটবলের খোঁজখবর ভালোই রাখেন। বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া তাঁর খুব পছন্দের ফুটবলার। দেশের ফুটবল নিয়ে গল্পে, আড্ডায় বলছিলেন, ‘বাংলাদেশ কাতারের সঙ্গে আগের ম্যাচে হেরে গেছে। কিন্তু আমি হতাশ নই। আমার বিশ্বাস, দোহার ম্যাচে আমরা ভালো করব। বাংলাদেশিদের যে আগ্রহ দেখছি ম্যাচ নিয়ে, তাতে মনে হচ্ছে, সবাই মাঠে গিয়ে দলকে সমর্থন করলে জামাল ভূঁইয়ারা আরও ভালো খেলবেন।’

কাতারের বিপক্ষে জয়ের স্বপ্ন দেখা অলীক কল্পনাই। তবে একটা লড়াই যদি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা করতে পারেন, তাতেই মনে হচ্ছে প্রবাসীরা খুশি হবেন। জামাল ভূঁইয়া প্রবাসীদের সমর্থনও চেয়েছেন, ‘প্রবাসীরা মাঠে এসে সমর্থন দিলে আমরা আরও উজ্জীবিত হব।’ বিদেশ–বিভুঁইয়ের শত কষ্টের মধ্যেই ফুটবলাররা আজ পারেন প্রবাসীদের কাছে রাতটা আনন্দময় করতে।