কলা কিনতে গিয়ে অপহৃত ফুটবলার

গত রোববার বান্ধবীর সঙ্গে ঘুরতে বেড়িয়েছিলেন ক্রিস্টিয়ান ওবোদো। নাইজেরিয়ান এই মিডফিল্ডার তখনো জানতেন না, একটু পরেই তাঁর সঙ্গে কী ঘটতে যাচ্ছে। নাইজেরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের শহর ওয়ারির রাস্তায় কলা বিক্রি হতে দেখে থেমেছিলেন। গাড়ি থামিয়ে কলা কিনতে গিয়েছিলেন ওবোদো ও তাঁর বান্ধবী। এরপরই ঘটল দুর্ঘটনা। একদল দুষ্কৃতকারী বান্ধবীকে গাড়ি থেকে বের করে দিয়ে অপহরণ করে নিয়ে যায় ওবোদোকে।

নাইজেরিয়ার হয়ে ২১টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা ওবোদোকে কেন অপহরণ করা হয়েছিল, সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। প্রাথমিকভাবে এ ঘটনাকে নাইজেরিয়া জাতীয় দলের ওপর বাজি ধরে হেরে যাওয়ার ক্ষোভপ্রকাশ বলেই ধারণা করা হচ্ছে। শুক্রবার আফ্রিকার নেশনস কাপের বাছাইপর্বের ম্যাচ ড্র করেছিল দলটি। সিয়েরা লিওনের বিপক্ষে সেদিন ৪-০ গোলে এগিয়ে গিয়েও জিততে পারেনি সুপার ইগলরা।

গত শুক্রবার ম্যাচের ২৯ মিনিটেই ৪-০ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল নাইজেরিয়া। কিন্তু মহানাটকীয়তার ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ড্র মেনে নিতে বাধ্য হয় দলটি। ওবোদোর দাবি অপহরণকারীরা এ ম্যাচ নিয়ে বাজি ধরেছিল। কিন্তু বাজিতে অনেক অর্থ হেরে বসায় এর দায় নাইজেরিয়া জাতীয় দলের ওপর ফেলেছে তারা। আর সে কারণেই তাঁকে এভাবে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। গতকাল মুক্তি পাওয়ার পর ওবোদো বলেছেন, ‘ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ির গরম ট্রাঙ্কে আটকে থাকা খুবই কষ্টের। অপহরণকারী আমাকে বলছিল, দ্বিতীয়ার্ধে নাইজেরিয়া গোল করবে—এটা নিয়ে বাজি ধরেছিল তারা, কিন্তু হেরে বসেছে। আমার কোনো ক্ষতি করেনি কিংবা কোনো ভয় দেখায়নি। কিন্তু আমাকে আবারও এমন কষ্টের মধ্যে ফেলার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না।’

অপহরণের শিকার হয়েছেন ওবোদো।

‘আবারও’ শব্দটা পড়ে থমকে যেতে পারেন। কিন্তু এই প্রথম অপহৃত হলেন না ওবোদো। ইতালির সিরি ‘আ’তে এক দশক কাটিয়ে যাওয়া এই মিডফিল্ডারকে ২০১২ সালের জুনেও অপহরণ করা হয়েছিল। সেবার অস্ত্রধারীদের হাত থেকে উদ্ধার করতে পুলিশ তল্লাশি অভিযানে নেমেছিল। ১ লাখ ৮৮ হাজার ডলার মুক্তিপণ দাবি করেছিল সেবার অপহরণকারীরা। এক দিন পর ওবোদোকে উদ্ধার করে পুলিশ। এবার অবশ্য অপহরণকারীদের উদ্দেশ্য জানা যায়নি।

অপহরণকারীদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছিলেন ওবোদো। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি বলেই জানিয়েছেন। এএফপিকে ৩৬ বছর বয়সী বলেছেন, ‘আমার বান্ধবীকে গাড়ি থেকে বের করে দেয়। আমি প্রার্থনা করছিলাম এবং ওদের সঙ্গে আলাপ জমানোর চেষ্টা করছিলাম। জিজ্ঞেস করছিলাম, আমি কী দোষ করেছি। কিন্তু তারা আমাকে ধমক দিয়েছে এবং চুপ থাকতে বলেছে। বলেছে কোনো আওয়াজ করলেই খুন করে ফেলবে।’

এ নিয়ে দ্বিতীয়বার অপহৃত হলেন ওবোদো।

ওবোদোর সঙ্গে দুজন অস্ত্রধারী ছিলেন। আরেক অস্ত্রধারী আরেকটি গাড়িতে তাঁদের অনুসরণ করছিলেন বলে জানিয়েছেন ২০১৭ সালে অবসর নেওয়া ফুটবলার। তবে পেছনের গাড়ির কারণেই পালাতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন ওবোদো। তাঁকে গাড়িতে রেখে পেছনের সঙ্গীর সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছেন অপহরণকারী, আর সে সুযোগটাই নিয়েছেন ওবোদো, ‘আমি পেছনে তাকিয়ে দেখি, একটু দূরে আছে তারা। সঙ্গে সঙ্গে আমি গতি বাড়িয়ে পালিয়েছি।’

এ ব্যাপারে ডেল্টা রাজ্যের পুলিশের মুখপাত্র ওনোমে ওনোভাকপোয়েয়া জানিয়েছেন, ‘রোববার বিকেল পাঁচটার দিকে রিফাইনারি রোডের পাশে ইশাকা হোটেলের সামনে থেকে ওবোদোকে অপহরণ করা হয়েছিল। যখন তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তাঁর সঙ্গে বান্ধবী ছিল। তাঁরা রাস্তার পাশে কলা কিনতে থেমেছিলেন।’