দুই দলের গায়েই লেপ্টে আছে ম্যাচ পাতানোর গন্ধ। এবারের প্রিমিয়ার লিগে অনলাইন বেটিংয়ে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ রয়েছে ব্রাদার্স ইউনিয়ন ও আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের বিরুদ্ধে। আরামবাগ তো আগে থেকেই ক্যাসিনো-কাণ্ডে জড়িয়ে বিতর্কিত। সেই আরামবাগের বিপক্ষেই লিগে আজ নিজেদের ১১তম ম্যাচটি খেলেছে ব্রাদার্স। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আজকের সন্ধ্যাটা শেষ পর্যন্ত রাঙিয়ে নিয়েছে গোপীবাগের ক্লাবটিই। লিগের প্রথম জয় তুলে নেওয়ার ম্যাচে ব্রাদার্স ৫-২ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে আরামবাগকে।
ম্যাচে সাতটি গোলই বলার মতো ব্যাপার। তবে এর মধ্যেও অবিশ্বাস্য দুই গোলের কথা আলাদা করে বলতে হয়। চোখধাঁধানো সেই দুটি গোল করেছেন ব্রাদার্সের মিডফিল্ডার ফয়সাল আহমেদ।
কর্নার থেকে সরাসরি বল জালে পাঠানো ফুটবলে খুব একটা নিয়মিত দৃশ্য নয়। কোনো ফুটবলার হয়তো ক্যারিয়ারে এক-দুবার এমন কীর্তি গড়তে পারেন। ফয়সাল আজ ৯০ মিনিটেই তা করে দেখিয়েছেন দুবার! ফয়সাল ছাড়াও ব্রাদার্সের হয়ে ১টি করে গোল করেছেন সিও জুনাপি, স্যামসান ইলিয়াসু ও মেজবাহ উদ্দিন। আরামবাগের গোল দুটি করেছেন মরো ইব্রাহিম ও নিহাত জামান উচ্ছ্বাস।
ফয়সালের চোখধাঁধানো দুই ‘অলিম্পিক গোল’ আর ম্যাচে গোলবন্যার কারণে হয়তো কিছুটা আড়ালে পড়ে যাবে ম্যাচের শুরুতে দুই দলের অপেশাদারত্বের নিদর্শন। দুদলই আজ মাঠে নেমেছে প্রায় কাছাকাছি রঙের জার্সি পরে! ব্রাদার্স খেলেছে তাদের ট্রেডমার্ক কমলা রঙের জার্সিতে। আর মেরুন রঙের জার্সি পরে খেলেছে আরামবাগ। মাঠে দুই দলের আক্রমণ দেখে মাঝেমধ্যেই বোঝা কঠিন হয়ে যাচ্ছিল কে কোন দলের!
নিয়ম অনুসারে প্রতিটি দলেরই দুই সেট করে জার্সি নিয়ে মাঠে আসার কথা। কিন্তু কোনো দলই কাল দুই সেট জার্সি আনেনি। আরামবাগের খেলার কথা ছিল তাদের মূল জার্সি, অর্থাৎ সাদা-কালো রঙের জার্সি পরে। কিন্তু ম্যাচ শুরুর আগে দেখা যায়, দুজন খেলোয়াড় সাদা-কালো জার্সি আনতেই ভুলে গেছেন! ব্রাদার্সও তাদের আকাশী-নীল রঙের দ্বিতীয় জার্সি আনেনি মাঠে।
এ জন্য বাধ্য হয়েই ম্যাচ কমিশনার আর আলম মেরুন রঙের জার্সি পরে খেলার অনুমতি দেন আরামবাগকে। দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য একটু বদল এসেছে, মেরুন রঙের শর্টস বদলে সাদা রঙের শর্টস পরে খেলেছে আরামবাগ।
শর্টসের রং বদলালেও ম্যাচের রংটা বদলাতে পারেনি আরামবাগ। ৯ মিনিটে অবশ্য প্রথমে এগিয়ে যায় আরামবাগই। বক্সের মধ্যে তাদের ঘানার ফরোয়ার্ড অ্যাডাম সাডিয়েককে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন ব্রাদার্সের ফয়সাল। পেনাল্টি থেকে গোল করেন মরো ইব্রাহিম।
ম্যাচের শুরুতে দুই দল রেখেছে অপেশাদারত্বের নিদর্শন। দুদলই মাঠে নেমেছে প্রায় কাছাকাছি রঙের জার্সি পরে! ব্রাদার্স খেলেছে তাদের ট্রেডমার্ক কমলা রঙের জার্সিতে। আর মেরুন রঙের জার্সি পরে খেলেছে আরামবাগ।
এরপর ফয়সালের জাদুর প্রথম কিস্তি। বিরতিতে যাওয়ার ঠিক আগে ফয়সাল প্রথম দেখান কর্নার থেকে নিজের জাদু। যেন আরামবাগকে প্রথম পেনাল্টি দেওয়ার দায় থেকে মুক্তি পেলেন! কর্নার থেকে নেওয়া ফয়সালের শট বাতাসে শূন্যে ভেসে সরাসরি ঢোকে জালে। আরামবাগের গোলরক্ষক আপেল মাহমুদ শুধু চেয়ে দেখলেন।
৫৫ মিনিটে স্যামসান ইলিয়াসুর গোলে স্কোর ২-১ হয় ব্রাদার্সের। মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে ঢোকেন বক্সে। এরপর আলতো চিপে বল পাঠান জালে।
গোল শোধে মরিয়া আরামবাগকে ম্যাচে ফেরান তরুণ ফরোয়ার্ড নিহাত। ৫৮ মিনিটে জটলা থেকে প্লেসিংয়ে করেন ২-২। এ নিয়ে টানা চার ম্যাচ গোল পেলেন নিহাত।
আক্রমণ আর পাল্টা–আক্রমণে ততক্ষণে জমে উঠেছে ম্যাচটি। অবশ্য এরপর টানা তিন গোল করে জয় ছিনিয়ে নেয় কোচবিহীন ব্রাদার্স।
৬০ মিনিটে সিও জুনাপিও করেন ৩-২। যেন আরামবাগ গোলকিপার আপেল অহেতুক গোলটা উপহার দিলেন ব্রাদার্সকে। সামনে থাকা ডিফেন্ডার শামীম রেজাকে বলটা বাড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন আপেল। কিন্তু তাঁর পাস কেড়ে নেন ইলিয়াসু, এরপর বল বাড়িয়ে দেন জুনাপিওর কাছে। তা থেকে আলতো টোকায় গোল করেন জুনাপিও।
ম্যাচের ৭১ মিনিটে আরেকবার কর্নার থেকে সরাসরি গোল করেন ফয়সাল। এ বেলায় অবশ্য আরামবাগ গোলকিপার আপেল চেষ্টার কমতি রাখেননি। বলটা ফিস্ট করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পারেননি।
ম্যাচের যোগ হওয়া সময়ে প্লেসিংয়ে ব্রাদার্সের পঞ্চম গোল করেন বদলি ফুটবলার মেজবাহ।
১১ ম্যাচে ১ জয়, ২ ড্র ও ৮ হারে ৫ পয়েন্ট ব্রাদার্সের, ১৩ দলের লিগে তারা ১২তম। সমান ম্যাচে ১ ড্র ও ১০ হারে ১ পয়েন্ট নিয়ে সবার নিচে আরামবাগ।