করোনা প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত টিকাই সবচেয়ে বড় ভরসা
করোনা প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত টিকাই সবচেয়ে বড় ভরসা

করোনায় ফুসফুস আক্রান্ত হওয়ার পর মনে হলো, টিকা নেওয়া দরকার

একেবারে গোঁ ধরেই বসেছিলেন ইয়োশুয়া কিমিখ। এত দিন এতজন এতভাবে বুঝিয়েছেন তাঁকে, কিন্তু বায়ার্ন মিউনিখের ২৬ বছর বয়সী জার্মান রাইটব্যাক ও মিডফিল্ডারের যুক্তি ছিল, এখনো টিকা নিয়ে তাঁর সংশয় কাটেনি। করোনায় আক্রান্ত হলেও তাঁর গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ‘ঝুঁকি কম’ বলেও নিজেকেই বুঝি আশ্বস্ত করেছিলেন!

কিন্তু শেষ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে একটু জটিল পরিস্থিতিতেই পড়তে হলো কিমিখকে। গত মাসের শেষ দিকে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর ফুসফুসে কিছু হালকা জটিলতাও দেখা দেয় বায়ার্নে রাইটব্যাক থেকে মিডফিল্ডার বনে যাওয়া কিমিখের, যে কারণে এই বছরে আর মাঠে নামা হচ্ছে না তাঁর।

এমন পরিস্থিতিতে পড়ার পর এখন অবশ্য কিমিখের ভুল ভেঙেছে। এখন তিনি করোনার টিকা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

ইওশুয়া কিমিখ

কিমিখের মত বদলানোর পেছনে শারীরিক দুর্দশার পাশাপাশি হয়তো আর্থিক ক্ষতিও একটা কারণ। বায়ার্নে কিমিখের পাশাপাশি সার্জ নাব্রি, জামাল মুসিয়ালা, এরিক ম্যাক্সিম চুপো মোতিং ও মিখায়েল কুইসন্স টিকা না নেওয়ার সিদ্ধান্তে এত দিন অটল ছিলেন।

কিন্তু গবেষণা তো বলে, টিকা না নেওয়া ব্যক্তির করোনা ছড়ানোর শঙ্কা আরও বেশি থাকে। সে কারণে অন্য ফুটবলারদের করোনার ঝুঁকি কমাতে বায়ার্নের দিক থেকেও এই ফুটবলারদের টিকা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু একদিকে তা মানেননি কিমিখ, তার ওপর করোনায়ও আক্রান্ত হয়েছেন। সে কারণে বায়ার্ন নিয়ম করেছে, টিকা না নেওয়া পাঁচ খেলোয়াড় করোনায় আক্রান্ত হলে যত দিন মাঠের বাইরে থাকবেন, তত দিনের বেতন কাটা হবে তাঁদের।

টিকা না নেওয়া কিমিখ করোনায় আক্রান্ত এক ব্যক্তির সংস্পর্শে যাওয়ার পর বিরক্তি জানিয়েছিলেন বায়ার্ন কোচ ইউলিয়ান নাগলসমান

তাঁকে অনেকে টিকাবিরোধী বললেও কিমিখ তা সব সময় অস্বীকার করে এসেছেন। তবে এত দিন করোনার টিকা না নেওয়ার পেছনে যুক্তি দেখিয়েছিলেন, এসব টিকার দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে, সেটি নিয়ে এখনো ব্যাপকভাবে গবেষণা হয়নি বলে এখনই টিকা নিতে আগ্রহী নন।

তাঁর বয়স এখনো অনেক কম, তাঁর শরীরে ‘অ্যান্টিবডি’ বেশি বয়সীদের তুলনায় বেশি হবে...এসবকে যুক্তি হিসেবে দেখিয়ে কিমিখ বলেছিলেন, তিনি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন, কিন্তু আরও গবেষণার ফলে সন্তুষ্ট হওয়ার আগপর্যন্ত টিকা নেবেন না।

তা তিনি না নিতেই পারেন, সেটি তাঁর ব্যক্তিস্বাধীনতা। কিন্তু টিকা না নেওয়ায় তো তাঁকে আশ্রয় করে করোনা আরও বেশি করে সংক্রমিত হতে পারে, তাতে অন্যদেরও বিপদের শঙ্কা আরও বাড়াচ্ছেন কিমিখ—সে যুক্তিতে তাঁকে টিকা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল সব দিক থেকে।

কিমিখসহ বায়ার্নের পাঁচ খেলোয়াড় টিকা নেননি

তখন পরামর্শ কানে তোলেননি কিমিখ, কিন্তু এখন করোনায় আক্রান্ত হয়ে ফুসফুসে জটিলতা তৈরি হওয়ায় তাঁর মত বদলেছে। জার্মান প্রচারমাধ্যম জেডডিএফে কিমিখের একটি সাক্ষাৎকার আজ প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল।

সেখানে টিকা নিয়ে কিমিখ কী বলেছেন, সেসবের কিছু অংশ ফাঁস হয়ে পড়েছে। কিমিখ বলছিলেন, ‘সাধারণভাবে বললে নিজের ভয় ও উদ্বেগের সঙ্গে মানিয়ে নিতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে আমাকে।’

সাক্ষাৎকারে কিমিখ কথা বলেছেন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর নিজের বর্তমান শারীরিক অবস্থা নিয়ে। টিকা না নিতে চাওয়ার কারণ বিশদভাবে জানিয়েছেন। পাশাপাশি আরও আগেই টিকা না নেওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

গত মাসের শেষ দিকে আগে খবর আসে, করোনায় আক্রান্ত এক ব্যক্তির সংস্পর্শে গেছেন কিমিখ। তখনই কোয়ারেন্টিনে যেতে হয় তাঁকে। কিন্তু এরপর আসে তাঁর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর। কিমিখ অবশ্য এখন করোনামুক্ত, আইসোলেশনও শেষ তাঁর। তবে ভাইরাসটির কারণে শরীরে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, সেগুলোর কারণে এখনই মাঠে নামা হচ্ছে না তাঁর।

বায়ার্নের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে কিমিখ নিজেই করোনামুক্ত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘আমি ভালোই আছি, তবে আমার ফুসফুসে মৃদু সংক্রমণের কারণে এখনই পুরোদমে অনুশীলনে নামতে পারছি না। তাই আপাতত পুনর্বাসনে থেকে অনুশীলন করার চেষ্টা করব। জানুয়ারিতে আবার মাঠে ফিরতে তর সইছে না আমার।’