‘দিন শেষে ভালো খেলোয়াড়েরাই ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দেয়’—ফুটবলে বহুল ব্যবহৃত আপ্তবাক্যটি আজ কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামেও মিলে গেল।
ব্যক্তিগত ঝলকে আবাহনী লিমিটেডকে স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে তুললেন রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলা কোস্টারিকার ফরোয়ার্ড দানিয়েল কলিনদ্রেস।
প্রথমে ফ্রি–কিক থেকে দুর্দান্ত একটি গোল করেন, পরে ফ্রি–কিক থেকেই নাবীব নেওয়াজকে দিয়ে আরও একটি গোল করিয়েছেন। এতে সাইফ স্পোর্টিংকে ২–০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে উঠল আবাহনী।
শক্তি ও ঐতিহ্যে এগিয়ে থাকলেও সাইফের সঙ্গে আজ ভালো ফুটবল উপহার দিতে পারেনি আবাহনী। কার্যকর ফুটবল বলতে যা বোঝায়, সেটি খেলেছে সাইফই।
অনেকগুলো গোলের সুযোগও তৈরি করেছে তারা। কিন্তু ভালো ফিনিশিংয়ের অভাবে গোল করতে পারেনি। দুটি গোল বাদ দিলে আবাহনী তো উল্লেখযোগ্য গোলের সুযোগই তৈরি করতে পারেনি। কিন্তু দিন শেষে জয়ী দলের নাম আবাহনীই, কারণ কলিনদ্রেস।
সাইফের আক্রমণে চাপে ছিল আবাহনীই। তখনো প্রতিপক্ষের বক্সের মধ্যে একবারও ঢুকতে পারেনি দলটি। বক্সের বাইরে মিলেছে ফ্রি–কিক। কলিনদ্রেস প্রায় ২২ গজ দূর থেকে মানবদেয়ালের পাশ দিয়ে ডান পায়ের জোরালো শটে জালে জড়িয়ে দিলেন বল।
আবাহনী–সাইফ দুই দলই আজ ভুগেছে স্ট্রাইকার–সংকটে। চোটের কারণে খেলতে পারেননি আবাহনীর ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ডোরিয়েলটন গোমেজ ও সাইফের নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড এমেকা ওগবুগ। মূল স্ট্রাইকারের অভাবে জামাল ভূঁইয়া ও মারাজ হোসেনকে পালাক্রমে ‘ফলস নাইন’ হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছেন দিয়েগো আন্দ্রেস ক্রুসিয়ানি।
প্রথাগত হোল্ডিং মিডফিল্ডার জামাল সেই অভাবের ছিটেফোঁটাও পূরণ করতে পারেননি। মাঝমাঠে নেমে এসে দলের মিডফিল্ডারের সংখ্যা বাড়িয়েছেন মাত্র।
গোলের সুযোগ নষ্ট করা বেশি ভুগিয়েছে সাইফকে। ২ মিনিটেই সহজ গোলের সুযোগ নষ্ট করেছেন মারাজ। উদোহর কাটব্যাকে গোলমুখ থেকেও আনমার্কড অবস্থায় ভালো শট নিতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। ১৪ মিনিটে আরও একটি ভালো সুযোগ নষ্ট করেছেন উজবেকিস্তানের মিডফিল্ডার আশরোর গাফুরোভ।
রাইটব্যাক নাসিরুলের থ্রো নিয়ন্ত্রণে বক্সের মধ্যে দুর্দান্ত গতিতে ঢুকে গোলমুখে কাটব্যাক করেন উদোহ। প্রথম স্পর্শে শট নেওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বল নিয়ন্ত্রণে নিতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে সুযোগটি নষ্ট করেন গাফুরোভ। বিরতিতে যাওয়ার আগেই ব্যবধান বাড়াতে পারত আবাহনী। গোলকিপারকে একা পেয়েও তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ভালো সুযোগটি নষ্ট করেছেন উইঙ্গার রাকিব।
দ্বিতীয়ার্ধে সাইফের দাপট কম থাকলেও ম্যাচে ফেরার মতো সুযোগ এসেছিল। ওই বক্সের মধ্যে গিয়েই তালগোল পাকিয়ে ফেলেন দলটির ফরোয়ার্ডেরা। উদোহর লম্বা থ্রো–ইন থেকে মারাজের শট আবাহনী গোলকিপার মাহফুজ হাসানের হাতে। আবাহনী ও সাইফের মধ্যকার পার্থক্যটা মনে হলো শুধু কলিনদ্রেস। ৮২ মিনিটে দলকে এনে দিলেন দ্বিতীয় গোল। তবে এটি নিজে নয়, সতীর্থ নাবীবকে দিয়ে করালেন। কলিনদ্রেসের ডান পায়ের বাঁকানো ফ্রি–কিকে গোলমুখ থেকে শুধু পা লাগানোর কাজটি করেছেন নাবীব।
২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ স্বাধীনতা কাপে আবাহনীর কাছে ১–০ গোলে হেরেই কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছিল সাইফ। এবার বিদায় নিল সেমিফাইনাল থেকে। সেবার বসুন্ধরা কিংসের কাছে হেরে সেমিফাইনালে থেমেছিল আবাহনীর যাত্রা। এবার তারা ফাইনালে। ১৮ ডিসেম্বর শিরোপার লড়াইয়ে আবাহনীর প্রতিপক্ষ বসুন্ধরা কিংস ও বাংলাদেশ পুলিশ ক্লাবের মধ্যকার জয়ী দল।