স্যামুয়েল ইতোর ক্যারিয়ারে বিতর্ক কম নেই। তবে এবারের বিতর্কটা তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘মার্কা’ জানিয়েছে, নিজের কন্যাসন্তানকে তিনি কোনো আর্থিক সাহায্য করেন না।
খেলার মাঠে শতাব্দীর প্রথম দশকের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকারদের একজন ছিলেন ইতো। রিয়াল মাদ্রিদে পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু হলেও মায়োর্কা, বার্সেলোনা ও ইন্টার মিলানের ইতোকেই সবাই বেশি মনে রেখেছেন। মায়োর্কার মতো ক্লাবকে কোপা ডেল রে জিতিয়েছেন। বার্সার হয়ে দুবার জিতেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগ, লা লিগা জিতেছেন তিনবার।
ইন্টারের হয়ে জিতেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগ এবং সিরি আ। রেকর্ড চারবার আফ্রিকার বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কাজয়ী ক্যামেরুনের সাবেক এই স্ট্রাইকার এখন দেশটির ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতিও। তবে এসব পরিচয় ছাপিয়ে এখন ইতোর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা হচ্ছে বেশি।
সংবাদমাধ্যমে বেশ কিছু কর্কশ কথা বলেছেন ৪১ বছর বয়সী সাবেক এই স্ট্রাইকার। কন্যাসন্তান এবং তার মাকে কোনো আর্থিক সাহায্য করতে এক লোক নাকি ইতোকে চাপাচাপি করেছেন। কিন্তু ইতোর কাছে সেই কন্যা এবং মা মৃত। মানে, নিজের জীবনে সেই মেয়ে ও তাঁর মায়ের কোনো অস্ত্বিত্ব নেই বলে মনে করেন ইতো।
কন্যাসন্তানটির নাম এরিকা ইতো দো রোজারিও। আইনগতভাবে তিনি ইতোর সন্তান। কিন্তু বাবা হিসেবে ইতো কোনো দায়িত্ব পালন করেননি বলে অভিযোগ উঠেছে। চার বছর আগে আইনগতভাবে প্রমাণিত হয় মেয়েটির বাবা হলেন ইতো। মেয়ে ও মেয়ের মা ইতোর পরিচয় দেওয়ার আইনগত অনুমতিও পান। কিন্তু ক্যামেরুন কিংবদন্তি তাদের দেখাশোনা না করায় এখন নতুন করে আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন মা ও মেয়ে।
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘এল মুন্দো’ জানিয়েছে, মা ও মেয়েকে মাসিক ১৪০০ ইউরো ভাতা দিতে ইতোকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালতের বিচারক। কিন্তু ইতো কখনোই এই ভাতা দেননি। সব মিলিয়ে তাঁর বকেয়া ভাতার অঙ্ক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার ইউরো। স্পেনের আরেক সংবাদমাধ্যম ‘লা ভ্যানগার্দিয়া’–এর সঙ্গে কথা বলেছেন মেয়েটির মা আদিলেউসা ‘দে দে’ দো রোজারিও। মায়ের দাবি, ইতোর কাছে তিনি যে অর্থ দাবি করেছেন, সেটি শুধুই তাঁর মেয়ের জন্য।
‘লা ভ্যানগার্দিয়া’কে আদিলেউসা বলেছেন, ‘সে (ইতো) তার মেয়েকে কখনো কিছু দেয়নি। এমনকি জন্মের পর কখনো একটা ললিপপও কিনে দেয়নি। এমনকি আদালতের নির্দেশের পরও একদম না বলতে যা বোঝায়, সেটাই করেছে। মেয়েটি বাবাকে ছাড়াই বড় হয়েছে। বাবার জন্য ওর কষ্ট হয়। কারণ, সে তার বাবাকে একবার দেখার সুযোগও পায়নি।’
ইতো তাদের অস্বীকার করতে কতটা কঠোর, সে কথা ‘লা ভ্যানগার্দিয়া’কে বলেছেন আদিলেউসা। সাড়ে তিন বছর বয়সে এরিকার কিডনি অপসারণ করতে অস্ত্রোপচার করানো হয়। ইতো তখন নিজ মেয়ের খোঁজ পর্যন্ত নেননি। আদিলেউসার ভাষায়, ‘বাবা–মায়ের শারীরিক সমস্যার অতীত জানার দরকার ছিল চিকিৎসকদের। তখন মেয়েটির বয়স সাড়ে তিন বছর। আমি ওর এবং আমার পরিচিত এক বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করে ইতোকে ঘটনাটা জানাতে বলি। সে রাজি হয়নি। সে আমাকে জানায়, ইতোর সঙ্গে এ নিয়ে আগেই কথা হয়েছে। শেষবার এ নিয়ে সে বলেছিল, মা ও মেয়ে মরলেও আমার কিছু যায় আসে না। আমাকে একা থাকতে দাও।’
প্রেমিকা জর্জেটকে ২০০৭ সালে বিয়ে করেন ইতো। তাঁদের ঘরে দুটি সন্তান আছে। তবে সেই বিয়ের আগে ২০০৪ সালে পিতৃত্ব নিয়ে ঝামেলায় পড়েছিলেন ইতো। সেটিও আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। মায়োর্কায় আনা বারানকা নামে এক নারীর সঙ্গে সাড়ে তিন মাস প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন ইতো। একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন বারানকা—মেয়েটির ইতোরই সন্তান। কিন্তু মা এবং মেয়েকে আর্থিক সাহায্য না করায় ২০১৯ ও ২০২০ সালে ইতোকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়। ২০১৮ সালেই মারিয়া আনগেলেস পিনেদা নামে এক নারী তাঁর সন্তানের পিতা হিসেবে ইতোর নাম বলেন এবং ভাতা হিসেবে মাসিক ১৬ হাজার ৪০০ ইউরো দাবি করেন। শুরুতে ইতো সাড়ে ৩ হাজার ইউরো করে দিতে রাজি হলেও পরে অঙ্কটা ৯০০ ইউরোয় নামিয়ে আনা হয়। কিন্তু ইতো সে টাকাও কখনো পরিশোধ করেননি।