কে জিতবে ইউরো? প্রশ্নটা আসলেই প্রায় ১০০ কোটি টাকার। ইউরোর চ্যাম্পিয়ন দল ১ কোটি ইউরো পাবে, বাংলাদেশি মুদ্রায় সেটা তো প্রায় ১০০ কোটি টাকাই। সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা শুরু হবে ১১ জুন, শেষ হবে আগামী ১১ জুলাই। ইউরোয় অংশ নিতে যাওয়া ২৪টি দলের খুঁটিনাটি জেনে নিলে এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা সহজ হতে পারে আপনার জন্য।
১৯৫৮ বিশ্বকাপের পর গতবার ইউরোয় প্রথম বিশ্বমঞ্চে খেলতে এসেছিল ওয়েলস। শুধু খেলতে এসে এসেছিল বলাটা ভুল হবে, সেমিতে উঠে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল গ্যারেথ বেলের দল। কোয়ার্টার ফাইনালে হারিয়ে দিয়েছিল তুমুল ফেবারিট বেলজিয়ামকে। সেমিতে তৎকালীন ক্লাব-সতীর্থ ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালের কাছে হেরে বিদায় নিলেও বিশ্ব দেখেছে ফর্মে থাকলে ওয়েলস কী করতে পারে। এ ইউরোতেও কি অমন কিছু দেখানোর অপেক্ষায় আছে তারা?
দল: ওয়েলস
ফিফা র্যাঙ্কিং: ১৭
দলে আছেন যাঁরা
গোলরক্ষক
ড্যানি ওয়ার্ড (লেস্টার সিটি), ওয়েইন হেনেসি (ক্রিস্টাল প্যালেস), অ্যাডাম ডেভিস (স্টোক সিটি)
সেন্টারব্যাক
জো রোডন (টটেনহাম হটস্পার), ক্রিস মেফাম (বোর্নমাথ), বেন কাবাঙ্গো (সোয়ানসি সিটি), টম লকিয়ার (সেন্টারব্যাক)
রাইটব্যাক/রাইট উইংব্যাক
নিকো উইলিয়ামস (লিভারপুল), ক্রিস গান্টার (চার্লটন অ্যাথলেটিক), কনর রবার্টস (সোয়ানসি সিটি)
লেফটব্যাক/লেফট উইংব্যাক
বেন ডেভিস (টটেনহাম হটস্পার), রিস নরিংটন-ডেভিস (শেফিল্ড ইউনাইটেড)
সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার/ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার
জো অ্যালেন (স্টোক সিটি), ইথান আমপাদু (চেলসি), জো মোরেল (লুটন টাউন), ম্যাট স্মিথ (ম্যানচেস্টার সিটি), অ্যারন রামসে (জুভেন্টাস)
অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার
ডেভিড ব্রুকস (বোর্নমাথ), জোনাথন উইলিয়ামস (কার্ডিফ সিটি), রুবিন কলউইল (কার্ডিফ সিটি), ডাইলান লেভিট (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড)
উইঙ্গার/ওয়াইড মিডফিল্ডার
গ্যারেথ বেল (রিয়াল মাদ্রিদ), ড্যানিয়েল জেমস (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড)
স্ট্রাইকার
কিফার মুর (কার্ডিফ সিটি), টাইলার রবার্টস (লিডস ইউনাইটেড)
কোচ
রবার্ট পেজ
অধিনায়ক
গ্যারেথ বেল
ইউরোয় সেরা সাফল্য
সেমিফাইনাল (২০১৬)
গ্রুপে প্রতিপক্ষ
সুইজারল্যান্ড (১২ জুন)
তুরস্ক (১৬ জুন)
ইতালি (২০ জুন)
শক্তি
রক্ষণভাগ অন্যতম বড় শক্তি। গোল করতে পারুক বা না পারুক, ওয়েলসের এই দল গোল হজমে খুব কিপটে। শুধু সেপ্টেম্বর থেকেই অন্তত ছয় ম্যাচ জিতেছে ১-০ গোলের ব্যবধানে। আক্রমণভাগে বেশ কিছু তরুণ খেলোয়াড় এসেছেন, যাঁরা বল পায়ে অত্যন্ত দক্ষ, গতিশীল, ড্রিবলে পারদর্শী। ড্যানিয়েল জেমস, ডেভিড ব্রুকস, হ্যারি উইলসন ও টাইলার রবার্টসের মতো সেসব খেলোয়াড় গ্যারেথ বেলের মতো কিংবদন্তির সঙ্গে খেলে আরও বেশি পোক্ত হবেন, এটা আশা করাই যায়।
ক্লাব ক্যারিয়ারে কয়েক বছর ধরেই তেমন কিছু করতে না পারা, একের পর এক সমালোচনার জন্ম দেওয়া বেল এবার কী করতে পারেন, তার ওপরেই মূলত নির্ভর করবে ওয়েলসের ভবিষ্যৎ।
দুর্বলতা
দলের মূল কোচ রায়ান গিগস ব্যক্তিগত সমস্যা ও বিতর্কের কারণে দায়িত্বে নেই আপাতত। তাঁর জায়গায় ভারপ্রাপ্ত কোচ হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন পেজ। টাচলাইনে গিগসের অভিজ্ঞতার অভাব ওয়েলস অনুভব করবে নিশ্চিত। দলের তরুণ তারকারা প্রতিভাবান হলেও বড় মঞ্চে পারফর্ম করার অভিজ্ঞতা নেই একদম, এমনকি মূল একাদশের অনেকে ক্লাব ক্যারিয়ারেও নিয়মিত খেলেন না। দলের সবচেয়ে বড় দুই তারকা বেল কিংবা রামসেও না। এসব নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে ওয়েলসের সম্ভাবনায়।
সম্ভাব্য একাদশ ও খেলার কৌশল (৩-৪-২-১)
গত ইউরোয় ৩-৫-২ ছকে খেলা ওয়েলস এবারও রক্ষণে তিনজন রেখেই খেলবে। মূল গোলকিপারের ওপর তিন সেন্টারব্যাক, সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে দুজনের দুই পাশে দুই উইংব্যাক, ওপরে একজন স্ট্রাইকারের পেছনে দুজন ইনসাইড ফরোয়ার্ড বা উইঙ্গার—এভাবেই দেখা যাবে ওয়েলসকে।
মূল গোলকিপার হিসেবে ক্রিস্টাল প্যালেসের হেনেসি বেশি অভিজ্ঞ হলেও শট থামানো ও রিফ্লেক্সের পাশাপাশি পেছন থেকে আক্রমণ গড়ে দেওয়ার ক্ষমতার কারণে ড্যানি ওয়ার্ডের ওপর ভরসা রাখতে পারেন কোচ পেজ।
তিন সেন্টারব্যাক হিসেবে টটেনহামের জো রোডন থাকবেন মাঝে, তাঁর ডান দিকে বোর্নমাউথের ক্রিস মেফাম ও বাঁয়ে থাকবেন রোডনের ক্লাব সতীর্থ বেন ডেভিস, যিনি লেফটব্যাক হিসেবেও সমান দক্ষ।
একাদশে দুজন আক্রমণাত্মক মানসিকতার উইংব্যাক খেলাতে পছন্দ করে ওয়েলস। সে হিসেবে গত ইউরোতে চমক দেখানো ক্রিস গান্টার নন, বরং ডান দিকে খেলতে পারেন সোয়ানসি সিটির কনর রবার্টস। ক্লাবে বর্তমানে রাইটব্যাক হিসেবে খেললেও লেফট উইংব্যাক হিসেবেও খেলতে পারেন নিকো উইলিয়ামস, যে কারণে বাঁ দিকে দেখা যেতে পারে লিভারপুলের এই তরুণকে।
মাঝে সাবেক লিভারপুল তারকা জো অ্যালেন যেন নিখুঁত পাস দিয়ে আক্রমণের কাজটা ভালোভাবে করতে পারেন, সে জন্য পাশে অপেক্ষাকৃত রক্ষণাত্মক মানসিকতার একজন মিডফিল্ডারকে খেলাবেন রবার্ট পেজ, এ ভূমিকায় চেলসির ইথান আমপাদুর খেলার সম্ভাবনা বেশি।
আক্রমণভাগে কে খেলবেন, সেটা নির্ভর করছে কোচ কোন কৌশলে দলকে খেলাতে চান তাঁর ওপর। ওয়েলস মূলত দুভাবে আক্রমণের পরিকল্পনা সাজায়। একজন লম্বা প্রথাগত স্ট্রাইকারকে সামনে রেখে দুই পাশে দুজন গতিময় ইনসাইড ফরোয়ার্ড খেলায়, যাঁদের কাজ সেই স্ট্রাইকারকে ক্রস ও পাস দিয়ে সাহায্য করা।
আরেকটি কৌশল হলো সেই স্ট্রাইকার নিচে নেমে আসলে প্রতিপক্ষ রক্ষণভাগের ফাঁক গলে বিপজ্জনকভাবে ঢুকে যাওয়া। এ পরিকল্পনায় মূল স্ট্রাইকার হিসেবে খেলানো হয় কার্ডিফের কিফার মুরকে—তাঁর দুই দিকে খেলেন মূল অধিনায়ক গ্যারেথ বেল আর অ্যারন রামসে।
তবে ওয়েলস এবার যে গ্রুপে পড়েছে, গ্রুপের বাকি তিন দলের প্রত্যেকের হাতেই এমন কিছু ডিফেন্ডার আছে, যাঁরা প্রথাগত স্ট্রাইকার সামলাতে দক্ষ (ইতালির বোনুচ্চি, কিয়েল্লিনি, সুইজারল্যান্ডের শায়ের, আকাঞ্জি কিংবা তুরস্কের দেমিরাল ও সয়ুঞ্জু)। সে হিসেবে কিফার মুরের ওপর কতটুকু ভরসা রাখবেন পেজ, সেটাও দেখার বিষয়।
আবার মাঝেমধ্যে প্রথাগত স্ট্রাইকার না খেলিয়ে তিনজন গতিময় ফরোয়ার্ডকে আক্রমণে নামিয়ে দেয় ওয়েলস। রায়ান গিগসের অধীনে ওয়েলস মূলত এভাবেই খেলত। তখন বেল ও রামসির সঙ্গে তৃতীয় ফরোয়ার্ড হিসেবে সুযোগ পেতেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ড্যানিয়েল জেমস কিংবা লিভারপুলের হ্যারি উইলসন।
আমার মনে হয়, আমাদের বেশ কিছু তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড় আছে, যারা ওয়েলস ফুটবলের বর্তমান সময়টাকে আরও রোমাঞ্চকর করে তুলেছে। শুধু এই ইউরোর জন্যই নয়, তাদের মধ্যে থেকে অনেক খেলোয়াড়ই আগামী চার-পাঁচ কিংবা ছয় বছর জাতীয় দলকে নিয়মিত সেবা দিয়ে যেতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।রবার্ট পেজ , ওয়েলস কোচ
প্রত্যাশা ও বাস্তবতা
দলে এখনো বেল, র্যামসি, অ্যালেন, ডেভিস, গান্টারদের মতো খেলোয়াড় আছেন, যাঁরা গতবার দলকে সেমিতে তুলতে সাহায্য করেছিলেন। অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছেন আমপাদু, উইলসন, উইলিয়ামস, রোডনদের প্রতিভা। এবার তাই ভালো কিছুর আশাই করবে ওয়েলস।
কিন্তু গোল করার অভ্যাস না থাকলে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার পর তারা আদৌ কাউকে হারাতে পারবে কি না, সে নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।