>বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে কাল বেলজিয়ামের মুখোমুখি হবে ফ্রান্স। বেলজিয়ামের সহকারী কোচ থিয়েরি অঁরির জন্য এ ম্যাচটা জন্মভূমির প্রতি আবেগ ভুলে পেশাদারির পরীক্ষা
বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে বেলজিয়াম-ফ্রান্সের মহারণের আগে ১৩ বছর আগের একটা ছবি আলোচনায়। ছবিটি নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত করছে অনেককেই। বেলজিয়ামের সহকারী কোচ থিয়েরি অঁরির জন্য সেই নস্টালজিয়ার মাত্রাটা বোধ হয় আরও অনেক বেশি।
ফরাসি ফুটবল-বিস্ময় কিলিয়ান এমবাপ্পে তখন এএস বন্ডির জুনিয়র দলে, আর অঁরি আর্সেনালে। ১৯৯৮ বিশ্বকাপজয়ী এই ফরাসি তারকা তখন ইংলিশ ক্লাবের মহাতারকা। ফ্রান্স জাতীয় দলেরও। উঠতি খেলোয়াড়দের অনেকেরই ‘রোল মডেল’। ২০০৫ সালের সেই সময়ে অঁরির সঙ্গে এক ফ্রেমে বন্দী হওয়ার সুযোগ হয়েছিল এমবাপ্পের। সেটি ওপরের এই ছবিটা। তখন অঁরি নিশ্চয়ই জানতেন না, ১৩ বছর পর তাঁকে এই ছেলেটাকে আটকানোর কৌশল বের করতে হবে!
অঁরি এটাও জানতেন না, পেশাদারত্বের খাতিরে একদিন বিশ্বকাপে তাঁকে নিজ দেশের হার কামনা করতে হবে! বেলজিয়ামের সহকারী কোচ অঁরি যেন এই ম্যাচে ফ্রান্সের ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’।
অঁরি ফ্রান্সের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা। দিদিয়ের দেশম-জিনেদিন জিদানদের ’৯৮ রূপকথার অন্যতম সদস্য। ফ্রান্সকে বিশ্বকাপ জেতানো সাবেক এই স্ট্রাইকারকে কাল তাঁর জন্মভূমির মুখোমুখি হতে হবে। যেখানে ফরাসি আক্রমণের নেতৃত্বে থাকবেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। এই এমবাপ্পেই ১৩ বছর আগে সেই ছবিটা তুলেছিলেন অঁরির সঙ্গে। তখন দুজনের কেউ জানতেন না, ফুটবল একদিন তাঁদের দাঁড় করিয়ে দেবে মুখোমুখি অবস্থানে!
অথচ দুজনের উঠে আসার পথটা প্রায় একই। মোনাকোয় পেশাদার ক্যারিয়ার শুরুর আগে অঁরি ছিলেন ফ্রান্সের জাতীয় ফুটবল একাডেমিতে। সেখানকার বয়সভিত্তিক দলে বেড়ে উঠেছেন ৪০ বছর বয়সী এই ফরাসি কিংবদন্তি। ১৯ বছর বয়সী এমবাপ্পের বেড়ে ওঠাও সেই একই একাডেমিতে। কিশোর বয়সে মোনাকোর হয়ে দুজনেই পেয়েছেন ফ্রেঞ্চ লিগ জয়ের স্বাদ। অর্থাৎ, এমবাপ্পে কিন্তু অঁরির পথেই হাঁটছেন। শুধু একটি অর্জন বাকি। বিশ্বকাপ! এমবাপ্পে অন্তত এবার যেন সেই অর্জনটা ছুঁতে না পারেন, সেই কৌশলই আঁটতে হবে অঁরিকে।
তবে এমবাপ্পে কিন্তু নিজের লক্ষ্যে অটুট। ১৯৯৮ বিশ্বকাপ জয়ের পথে ৩ গোল করেছিলেন অঁরি। ২০০৬ বিশ্বকাপেও তাঁর গোলসংখ্যা একই। আর এমবাপ্পে এবার অভিষেক বিশ্বকাপে সেমিতে উঠে আসার পথেই ৩ গোল করেছেন। তবে ফ্রান্সের আরেক স্ট্রাইকার অলিভার জিঁরুর ভাবনা অন্য কিছু। আর্সেনালের সাবেক এই স্ট্রাইকার অঁরির সিদ্ধান্তকে ভুল প্রমাণ করতে চান। ২০১৬ সালে বেলজিয়ামের সহকারী কোচের দায়িত্ব নেওয়াটা যে অঁরির জন্য ভুল সিদ্ধান্ত ছিল, জিরু তা প্রমাণ করতে চান, ‘তাঁর প্রতি অসীম শ্রদ্ধা রয়েছে। কিন্তু তাঁর সিদ্ধান্তটা যে ভুল ছিল, সেটি প্রমাণ করতে পারলে গর্ব লাগবে।’
দেখা যাক, কালকের ম্যাচে কী প্রমাণিত হয়। অঁরির পেশাদারি নাকি এমবাপ্পের নির্ভেজাল তারুণ্য-রথ, যেখানে চেপে ফরাসি ফুটবল ছড়াবে সৌরভ। তখন হেরে গেলেও অঁরি নিশ্চয়ই মনে মনে খুশি হবেন!