সে এক কঠিন সময়ই পার করে এসেছে পিএসজি। কিলিয়ান এমবাপ্পে রিয়াল মাদ্রিদে যাবেন, নাকি পিএসজিতেই থেকে যাবেন—এ নিয়ে প্রতিদিনই শিরোনাম হতো খবরে। পিএসজির কোনো ম্যাচের আগে বা পরে সংবাদ সম্মেলনে যাঁকেই পাওয়া যেত, সাংবাদিকেরা তাঁকেই এমবাপ্পের দলবদল নিয়ে প্রশ্ন করতেন। কঠিন সেই সময়টায় এমবাপ্পেকে নিয়ে আসলে কী ভাবছিলেন তাঁর সতীর্থরা—এর একটি ধারণা পাওয়া যায় সম্প্রতি আন্দের এরেরার বলা কথা থেকে।
স্পেনের ক্রীড়া দৈনিক এএসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পিএসজির স্প্যানিশ মিডফিল্ডার এরেরা এমবাপ্পের দলবদলের সেই সময় নিয়ে কথা বলেছেন। সেই সময়ে এমবাপ্পের দলবদল নিয়ে পিএসজির খেলোয়াড়েরা কতটা কী জানতেন—এমন এক প্রশ্নের উত্তরে এরেরা বলেছেন, ‘কেউ তাকে তখন জিজ্ঞেস করেনি যে সে কী করবে। আমি ইউনাইটেডে ঠিক একই পরিস্থিতিতে ছিলাম। এ রকম সময়ে সতীর্থরা আপনাকে একা থাকতে দেবে। আমি তো ভেবেছিলাম, সে (এমবাপ্পে) মাদ্রিদে যাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তেমন কিছু ঘটেনি।’
রিয়ালে যাই যাই করে এমবাপ্পের হঠাৎ উল্টো ঘুরে যাওয়ায় অনেকেই অবাক হয়েছেন। কেউ কেউ তো তাঁর এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনাও করেছেন। কিন্তু এরেরা এমবাপ্পের এই সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা জানানোর আহ্বান করেছেন, ‘প্যারিসের একটি ছেলের এমন সিদ্ধান্তকে আপনার শ্রদ্ধা করতে হবে। অল্প বয়সেই মোনাকোতে চলে যাওয়ায় সে পিএসজির একাডেমিতে খেলতে পারেনি। কিন্তু সে তো এই শহরের ক্লাবের (পিএসজি) হয়ে ইতিহাস গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
অনেকেই এমবাপ্পের সমালোচনা করে তখন বলেছিলেন, পিএসজির অর্থের কাছে বিক্রি হয়ে গেছেন ফরাসি তারকা। কিন্তু এমবাপ্পের প্যারিসে থেকে যাওয়ার আসল কারণটা কী? এমন প্রশ্নের উত্তরে এরেরা বলেছেন, ‘মাদ্রিদে গেলে সে নিশ্চিত করেই বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হতো। পিএসজিতেও সে ক্লাবের ইতিহাসের অন্যতম সেরা হতে পারবে।’ এরেরা এর সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমি আবারও বলছি, সে এই ক্লাবের হয়ে ইতিহাস গড়তে চায়।’
রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, বায়ার্ন মিউনিখ, লিভারপুল, ম্যানচেস্টার ইউনাইটে, ইন্টার মিলান, এসি মিলান, রোমা...বিশ্বের এমন অনেক ক্লাবই আছে, অনেক ফুটবলার ওইসব ক্লাবের আইকন হয়ে আছেন। এমন উদাহরণ অনেকেই তৈরি করতে চান যে ক্লাব আর তাঁর নাম সমার্থক হয়ে যাবে। এরেরার কথা—এমবাপ্পের বেলায় এমনটা হতে ক্ষতি কী! ‘আনসু ফাতির বার্সেলোনায় খেলা নিয়ে আমরা কী বুঝি? তাকে এটা বলার সুযোগ দেওয়া হয়, বার্সেলোনা তার জীবন। কিলিয়ানের বেলায় এটা নয় কেন?’
এমবাপ্পের পিএসজিতে থেকে যাওয়া নিয়ে কথা বলতে বলতেই এসেছে মেসি–নেইমার–এমবাপ্পে ত্রয়ীর প্রসঙ্গ। পিএসজিতে মেসির প্রথম মৌসুমে এই ত্রয়ী তেমন একটা জ্বলে উঠতে পারেননি। ভবিষ্যতে পিএসজির জন্য মেসি–নেইমার–এমবাপ্পে ত্রয়ী কতটা কী করতে পারবেন? এরেরার কথা, ‘আমাদের এমন কিছু খেলোয়াড় নিয়ে কাজ করতে হবে, যাদের কারণে এই ত্রয়ীর কাছ থেকে সেরাটা বের করে আনা যায়। একজন মিডফিল্ডার হিসেবে আমি এটা করতে পেরে খুশি।’
মেসি, নেইমার ও এমবাপ্পে আক্রমণভাগের খেলোয়াড়। রক্ষণ বা মাঝমাঠ থেকে বল সরবারহ করতে না পারলে এই ত্রয়ী আসলে তেমন কিছু করতে পারবেন না। এ কারণেই হয়তো এরেরা বলেছেন, ‘প্রতি ম্যাচে ১৪ কিলোমিটার দৌড়াতে হলেও সেটা আমার জন্য কোনো ব্যাপার নয়। আমার এমন কাজ করতে হবে, যেন সামনের এই তিন খেলোয়াড় সবচেয়ে ভালো জায়গায় বল পায় এবং শারীরিক দিক থেকে এরা ভালো থাকে।’
এটা সত্য যে পিএসজিতে প্রথম মৌসুমটা খুব একটা ভালো কাটেনি মেসির। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে পিএসজির হয়ে গত মৌসুমে ৩৪ ম্যাচ খেলে ১১ গোল করেছেন মেসি। অথচ বার্সেলোনায় নিজের সর্বশেষ ২০২০–২১ মৌসুমেও বার্সেলোনার হয়ে ৪৭ ম্যাচে তিনি করেছিলেন ৩৮ গোল। পিএসজিতে প্রথম মৌসুমে মেসির ম্লান থাকা নিয়ে এরেরা বলেছেন, ‘আপনি মেসির কাছে প্রতি মৌসুমে ৫০ গোল আশা করেন। সেটা সে না করতে পারলেই মানুষ কথা বলে।’
সর্বশেষ মৌসুমে মেসি যে একটু দুর্ভাগাও ছিলেন, সেটাও সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছেন এরেরা, ‘তার ১০টি শট পোস্টে লেগেছে। আর ১০টি গোল পেলে তো মেসির জন্য মোসুমটি হতো অসাধারণ। আমার কাছে সে সর্বকালের সেরা।’