পাভনের সুদিন আর নেই।
পাভনের সুদিন আর নেই।

এখন যা করছেন আর্জেন্টিনার সেই ‘গোপন অস্ত্র’

ক্রিস্টিয়ান পাভনের কথা মনে আছে?

ওই যে, ২০১৮ বিশ্বকাপের দলে মেসি, আগুয়েরো, হিগুয়েনদের পাশে আর্জেন্টিনা দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। সে মৌসুমে ইতালিয়ান লিগে ২৯ গোল করা স্ট্রাইকার মাউরো ইকার্দিকে দলে না রাখলেও এই পাভনের ওপর অনেক ভরসা করেছিলেন তৎকালীন আর্জেন্টাইন কোচ হোর্হে সাম্পাওলি। ইএসপিএন এক প্রতিবেদনে আর্জেন্টাইন ক্লাব বোকা জুনিয়র্সের এই প্রতিভাবান উইঙ্গারকে বলা হয়েছিল আর্জেন্টিনার ‘গোপন অস্ত্র’। এমন এক গোপন অস্ত্র, যে কিনা বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষকে চমকে দেবে। আর্জেন্টিনার অন্যান্য তারকাদের নিয়ে প্রতিপক্ষের আলাদা পরিকল্পনা থাকলেও এই 'গোপন অস্ত্র' কে নিয়ে থাকবে না। তখন পাভনকে নিয়ে আশায় বুক বাঁধার লোকের অভাব ছিল না। আশা ছিল, আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপের স্বাদ পাইয়ে দেওয়ার জন্য মেসি-দি মারিয়াদের পাশে থেকে এই পাভন সাহায্য তো করবেনই, অন্যান্য তারকা আর্জেন্টাইনদের পথ ধরে ইউরোপের নামীদামি ক্লাবেও খেলবেন।

সে আশায় গুড়েবালি। সেই পাভন এখনো বোকা জুনিয়র্সেই পড়ে আছেন। অবস্থা এতটাই খারাপ যে আর্জেন্টাইন ক্লাবটার স্কোয়াডেও জায়গা পেতে হিমশিম অবস্থা হয় তাঁর।

বিশ্বকাপের সময়টায় পাভনের সঙ্গে অনেক ক্লাবের নামই জড়িয়েছিল। তালিকায় ইংলিশ ক্লাব আর্সেনাল থেকে ইতালির ইন্টার মিলান, পর্তুগালের বেনফিকা, এমনকি বার্সেলোনার নামও ছিল। আর্জেন্টাইন সমর্থকদের আকাশ থেকে মাটিতে পড়তে সময় লাগেনি। পাভন তেমন কিছুই করতে পারেননি বিশ্বকাপে। প্রথম ম্যাচে আইসল্যান্ডের সঙ্গে ড্র করেছিল আর্জেন্টিনা, সে ম্যাচে আনহেল দি মারিয়ার বিকল্প হিসেবে ৭৫ মিনিটে মাঠে নামলেও কিছুই করতে পারেননি। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে এদুয়ার্দো সালভিওর জায়গায় ৫৬ মিনিটে মাঠে নেমেও দলকে হারের মুখ থেকে উদ্ধার করতে পারেননি। তৃতীয় ম্যাচেও বেঞ্চ থেকে পরে মাঠে নেমেছিলেন, মিডফিল্ডার এনজো পেরেজের জায়গায়। নিষ্প্রভই ছিলেন।

জাতীয় দলের জার্সি গায়ে মূল একাদশে থাকার সুযোগ এসে যায় ঠিক এর পরের ম্যাচেই। ফ্রান্সের বিপক্ষে দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচটায় মেসি-দি মারিয়াদের সঙ্গে মূল একাদশে ছিলেন। ৭৫ মিনিট খেলে তেমন কিছু করতে পারেননি। আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ে যাওয়ার পর পাভনের পারফরম্যান্সের গ্রাফটাও নিম্নমুখী হতে থাকে। অবস্থা এমন দাঁড়ায়, বোকা জুনিয়র্সের মূল একাদশেও নিয়মিত জায়গা পেতেন না। ইউরোপে গেলে হয়তো পড়তে থাকা ক্যারিয়ারটাকে উদ্ধার করতে পারতেন, কিন্তু সেটা করেননি। ভাগ্য বদলাতে পাড়ি জমিয়েছিলেন এমএলএসের ক্লাব লস অ্যাঞ্জলেস গ্যালাক্সিতে। এক বছরের ধারে সেখানে খেলার পর সম্প্রতি সেই বোকাতেই ফিরে এসেছেন।

চলতি কোপা লিবের্তাদোরেসের সেমিফাইনালে উঠেছে বোকা জুনিয়র্স। সান্তোসের বিপক্ষে সেমিফাইনালের স্কোয়াডেই রাখা হয়নি পাভনকে।

এসেও যে মূল একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন, তা নয়। চলতি কোপা লিবের্তাদোরেসের সেমিফাইনালে উঠেছে বোকা জুনিয়র্স। সান্তোসের বিপক্ষে সেমিফাইনালের স্কোয়াডেই রাখা হয়নি সদ্যই দলে যোগ দেওয়া এই তারকাকে। কারণ? ম্যাচ ফিটনেস নেই তাঁর। ম্যাচ ফিটনেস এলেও সেবাস্তিয়ান ভিয়া, বর্ষীয়ান কার্লোস তেভেজ, এদুয়ার্দো সালচিও, ফ্রাঙ্কো সলদানো কিংবা এদউইন কারদোনার জন্য মূল একাদশে জায়গা পান কি না, সন্দেহ।

জানা গেছে, বোকা জুনিয়র্সের ম্যানাজেরা মিগুয়েল আনহেল রুসো পাভন আর তাঁর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসবেন সম্প্রতি। বোকা জুনিয়র্সের হয়ে খেলার মতো তাঁর অবস্থা আছে কি না, নাকি আবারও অন্য কোনো ক্লাবের কাছে ছেড়ে দেওয়া হবে পাভনকে, এই নিয়ে আলোচনা হবে সামনে।

আর্জেন্টিনার গোপন অস্ত্রের এমন হাল কোনো আর্জেন্টাইন সমর্থকই চাননি হয়তো। আশার কথা একটাই, পাভনের বয়স এখনও পক্ষেই আছে - মাত্র ২৪। দেখা যাক, ঘুরে দাঁড়াতে পারেন কি না!