২০১৭ সালে অনূর্ধ্ব-১৫ নারী সাফের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। এবারের অনূর্ধ্ব-১৯ নারী চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়কও সেই মারিয়া মান্দাই। ময়মনসিংহের প্রত্যন্ত গ্রাম মন্দিরগোনা থেকে উঠে আসা এই ফুটবলার এখন বাংলাদেশের বয়সভিত্তিক ও নারী জাতীয় দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি কথা বলেছেন নারী দলের সাফল্য নিয়ে।
ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। অধিনায়ক হিসেবে নিশ্চয়ই আপনার আনন্দটা একটু বেশি?
মারিয়া মান্দা: চ্যাম্পিয়ন হতে পেরে খুব ভালো লাগছে। টুর্নামেন্টের শুরু থেকে আমাদের একটাই লক্ষ্য ছিল, দর্শকদের ভালো ফুটবল উপহার দিয়ে ফাইনালে খেলা। সেটা আমরা করতে পেরেছি। ভারতের বিপক্ষে জিতে ট্রফিটা নিজেদের কাছেই রেখে দিয়েছি।
আগামীকাল বড়দিনের উৎসব। এর আগে শিরোপা জয় নিশ্চয়ই উৎসবের আনন্দটা বাড়িয়ে দেবে...
মারিয়া: বছরের বেশির ভাগ সময় আমাদের বাফুফের আবাসিক ক্যাম্পেই থাকতে হয়। তাই ঈদ, পূজা, বড়দিনের মতো উৎসব পরিবারের সঙ্গে কাটানোর সুযোগ বেশি পাই না। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের ব্যস্ত সূচির কারণে কত ক্রিসমাস যে ক্যাম্পে কেটেছে, বলতে পারব না। তবে এবার বড়দিনে বাড়ি যেতে পারব। খেলার আগে নিজেকে বলছিলাম, এই ম্যাচ জিতে বাড়ি যাব। আমার জন্য এই ট্রফি তাই বড়দিনের উপহার বলতে পারেন (হাসি)।
২০১৯ সালে অনূর্ধ্ব-১৫ সাফে টাইব্রেকারে ভারতের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ। এবার ফাইনালের আগে কতটা চাপে ছিলেন?
মারিয়া: ফাইনাল হলেও এ ম্যাচ নিয়ে কোনো সময়ই চাপে ছিলাম না। চাপ নিলে তো এত সুন্দর ফুটবল খেলতে পারতাম না! আমরা জানতাম, আমাদের প্রতিপক্ষ অনেক শক্তিশালী। সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছি। তা ছাড়া পুরো টুর্নামেন্টে যেভাবে খেলেছি, ফাইনালটাও সেভাবেই খেলতে চেয়েছি। চেষ্টা করেছি ঠান্ডা মাথায় গোল বের করতে। স্বাধীনতার সুর্বণজয়ন্তীতে দেশবাসীকে জয় উপহার দিয়েছি। এ জন্য আরও বেশি ভালো লাগছে।
ফাইনালে বেশ কয়েকবার সুযোগ পেলেও গোলের দেখা মিলছিল না। দুশ্চিন্তা হচ্ছিল নিশ্চয়ই...
মারিয়া: মোটেও দুশ্চিন্তা করছিলাম না। খেলায় এটা হতেই পারে। আমরা সব সময়ই নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে চেয়েছি। কোচও বাইরে থেকে বারবার সেটাই বলছিলেন। আমরা জানতাম, গোল আসবেই।
এই সাফল্য দেশের মেয়েদের ফুটবলকে কতটা এগিয়ে নিতে পারে?
মারিয়া: এর আগে আমরা বয়সভিত্তিক পর্যায়ে অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ, অনূর্ধ্ব-১৮ সাফেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, দুবার এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপে সেরা হয়ে চূড়ান্ত পর্বে খেলেছি। এবারও লক্ষ্য ছিল দেশবাসীকে ভালো কিছু উপহার দেওয়া। এ জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি। সেই পরিশ্রমের ফল পেয়েছি। এই দলই একদিন সেরা জাতীয় দলে পরিণত হবে।
ফুটবল খেলে আজ আপনার এত খ্যাতি। এটা কেমন উপভোগ করেন?
মারিয়া: আমাকে আগে কেউ চিনত না। ফুটবলার হয়েছি বলেই এখন আমাকে অনেকে চেনে। আমি যখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি, তখন বাবা বীরেন্দ্র মারাত মারা যান। বাবার চেহারা কেমন ছিল, মনে নেই। আমাদের চার ভাইবোনকে নিয়ে মা এনতা মান্দা যে পরিমাণ লড়াই করেছেন, সেটা বলে বোঝানো যাবে না। একটা সময় ছিল, মা অন্যের জমিতে কাজ করতেন। দিনে মাত্র ২০০ টাকা পারিশ্রমিক পেতেন। ছোটবেলায় বুট কিনতে চাইলে মা চাল বিক্রি করে কিনে আনতেন। ফুটবল খেলে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে টাকা পেয়েছি। ফুটবল ফেডারেশন থেকে টাকা পাচ্ছি। মেয়েদের লিগে খেলেও ভালো উপার্জন করছি। খেলার সুবাদে কত কত দেশ ঘুরছি! আমার বড় বোনের নাম হাসি। আগে মাকে সবাই ডাকত হাসির মা বলে। এখন বলে, ওই দেখো মারিয়ার মা যাচ্ছে। ফুটবল আমার জীবন বদলে দিয়েছে।
মেয়েদের ফুটবল নিয়ে কী স্বপ্ন দেখেন?
মারিয়া: আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য সিনিয়র সাফ জয়। বাংলাদেশ জাতীয় দল কখনোই সাফ জিততে পারেনি। এবার সাফে চ্যাম্পিয়ন হতে চাই আমরা। ট্রফিটা সালাউদ্দিন স্যার (বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন) আমাদের হাতে তুলে দেবেন, সেই স্বপ্ন দেখি।