>পল্টনে একটি রেস্টুরেন্ট তৈরি করেছেন জাতীয় দলের সাবেক গোলরক্ষক আরিফুর রহমান পান্নু। রেস্টুরেন্টটির দেয়াল সাজানো হয়েছে সাবেক ও বর্তমান যুগের তারকাদের ছবি দিয়ে। সেখানে শোভা পাচ্ছে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন ট্রফির ছবির সঙ্গে ১৯৯৫ সালে মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত চার জাতি ফুটবল টুর্নামেন্ট-জয়ী দলটির ছবিও
কাচের ফটক গলে ভেতরে প্রবেশ করতেই প্রথমে চোখ কেড়ে নিলেন ঝাঁকড়া চুলের কাজী সালাউদ্দিন। নিচু হয়ে বসে বনেদি ভঙ্গিতে বুটের ফিতা বাঁধছেন বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা এ ফুটবলার।
অবাক হওয়ার কিছুই নেই, এই বয়সে জার্সি-বুট পরে মাঠে নেমে পড়েননি ফুটবল ফেডারেশনের বর্তমান সভাপতি। সাদা-কালো ফ্রেমে বাঁধাই করে রাখা হয়েছে তাঁকে। এই রঙিন যুগেও সাদা-কালো ছবিটাতে যেন প্রাণ খেলা করছে। সালাউদ্দিনের হাতছোঁয়া দূরত্বে রঙিন পোস্টারে বিশাল মহিমায় নিজেদের কৃতিত্ব জানান দিচ্ছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসানরাও।
সেখানে ক্রীড়াঙ্গনের কোনো রথী-মহারথী নেই? স্বাধীনতা-পরবর্তী প্রজন্মের সালাউদ্দিন, সালাম মুর্শেদী, প্রয়াত মোনেম মুন্না, আকরাম খান থেকে শুরু করে বর্তমান প্রজন্মের সাকিব, মামুনুল ইসলাম, মাবিয়া আক্তার, রাসেল মাহমুদ জিমিসহ সবাইকে জড়ো করা হয়েছে এক ছাদের নিচে। ছবির মালা গেঁথে পুরো ক্রীড়াঙ্গনটাকেই এক সুতোয় বেঁধেছেন জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার আরিফুর রহমান পান্নু। পল্টনে তাঁর কিচেন হাউস রেস্টুরেন্টের দেয়ালজুড়েই ছবিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন মাঠের সব তারকারা। আরও দুটি ছবি বিশেষভাবে দৃষ্টি কেড়ে নেয়। একটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খেলোয়াড়ি জীবনের ছবি ও অন্যটি ঢাকায় এসে বাংলাদেশের পতাকা ওড়াচ্ছেন আমেরিকান মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী।
পান্নুর কিচেন হাউসের দেয়ালজুড়ে সোনালি দিনের আভা। পুরো রেস্টুরেন্টে একবার চোখ ঘোরালে দেখা হয়ে যাবে বাংলাদেশের পুরো ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাস ও সাফল্যগাথা। ছোটবেলা থেকে শুনে আসা ১৯৯৫ সালে মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত চার জাতি টুর্নামেন্টে স্বাগতিকদের হারিয়ে ফুটবল ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়া বাংলাদেশের সে ঐতিহাসিক সাফল্যমণ্ডিত দলটির ছবিও পাওয়া গেল সেখানে। রেস্টুরেন্টের মালিক নিজেই তো সে দলের গোলরক্ষক।
বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা মানুষটি শোনালেন এই কিচেন হাউস সাজানোর পরিকল্পনার গল্পটি, ‘ছয় বছর আগে আমি প্রথম কক্সবাজারে বিচ ফুটবল খেলতে যাই। সেখানে গিয়ে অনেক দিন পরে ফুটবলার বন্ধু ও ভাইদের সঙ্গে দেখা হওয়ায় খুব ভালো লাগে। কিন্তু এভাবে তো একসঙ্গে থাকা যাবে না। তাই চিন্তা করলাম, একটা রেস্টুরেন্ট সাজাব সবার ছবি দিয়ে। পরে ভাবলাম শুধু ফুটবলাররা থাকবে কেন, ক্রীড়াঙ্গনের সবাইকেই এক জায়গায় রাখা যায় কি না। ফটোসাংবাদিক কিরণ ভাই ও তারেক ভাইয়ের জন্য এই ছবিগুলো পাওয়া সম্ভব হয়েছে।’
বাংলাদেশের ক্রিকেটের এখন জয় জয় রব। কিন্তু ১৯৯৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সে স্মৃতিটা এখনো ক্রীড়াপ্রেমী হৃদয়ে আলাদাভাবে জায়গা করে আছে। নতুন প্রজন্মের কাছে সে অর্জনটা পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য মাথার ওপর তুলে ধরা আকরাম খানের আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেই ছবিও ঝোলানো আছে। পরিবার নিয়ে রেস্টুরেন্টে খেতে এসে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের বর্তমান পরিচালক নিজের ছবির ওপর দিয়েছেন অটোগ্রাফও।
রেস্টুরেন্টটিতে মাঝে মাঝেই খেতে আসেন ফুটবলাররা। জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার ও কোচ হাসানুজ্জামান বাবলু নাকি তাঁর পুরোনো দিনের ছবি দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন। মধুর বিড়ম্বনাও আছে। অনেকে নাকি খেতে এসে তর্ক জুড়ে দেন, মোহামেডানের চেয়ে আবাহনীর ছবি বেশি হয়ে গেল কি না? পান্নু নীরবে হেসে জবাব দেন, কখনো নিজেও উঠে বসেন ফুটবলের সেই হারানো জৌলুশের কল্পনার রথে। এই তো চেয়েছিলেন জাতীয় দলের সাবেক এ ফুটবলার।