পর পর দুবার ফিফা বর্ষসেরা হয়েছেন। মেসি-রোনালদোর আধিপত্যের মধ্যে যা প্রায় অচিন্ত্যনীয় এক ব্যাপার। তবুও, একটা ব্যালন ডি’অরের আক্ষেপ রয়েই গিয়েছে রবার্ট লেভানডফস্কির।
করোনার কারণে ফ্রান্স ফুটবল ম্যাগাজিন ২০২০–এ এ পুরষ্কারটা কাউকেই দেয়নি। সেবার ব্যালন ডি’অর পাওয়ার দৌড়ে প্রায় একচ্ছত্রভাবে এগিয়ে ছিলেন বায়ার্ন মিউনিখের এই পোলিশ স্ট্রাইকার। গতবার লিওনেল মেসির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়েও জিততে পারেননি ব্যালন ডি’অর।
মেসির ব্যালন ডি’অর জয়ের পেছনে বড় অনুঘটক ছিল জাতীয় দল আর্জেন্টিনার হয়ে কোপা আমেরিকা জয়। ওদিকে পোল্যান্ডের হয়ে লেভানডফস্কির সাফল্যের কলামটা ছিল একেবারেই ম্লান।
অবশ্য আন্তর্জাতিক ফুটবলে পোল্যান্ডের সঙ্গে আর্জেন্টিনার তেমন তুলনাও চলে না। যেকোনো বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে আর্জেন্টিনার লক্ষ্য যেমন শিরোপার দিকে থাকে, সেখানে কোনোরকমে কোনো বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে সুযোগ পেলেই পোল্যান্ডের ক্ষেত্রে সেটা বড় সাফল্য হিসেবে মনে করা হয়। সে সাফল্যটিই আরেকটু হলে হাত ফসকে যাচ্ছিল লেভানডফস্কির। বিশ্বকাপে সুযোগ না পাওয়ার শঙ্কা ঘুরছিল মাথার ওপর। আর পোল্যান্ড বিশ্বকাপে সুযোগ না পেলে হয়তো এবারও ব্যালন ডি’অরের দৌড়ে বেশ ভালোভাবেই পিছিয়ে পড়তেন এই পোলিশ স্ট্রাইকার।
কিন্তু সেটি হতে দেননি এই বায়ার্ন তারকা। সুইডেনের বিপক্ষে প্লে-অফে ২-০ গোলে জিতে কাতার বিশ্বকাপের টিকিট কেটেছে পোল্যান্ড। লেভানডফস্কির পাশাপাশি গোল করেছেন নাপোলির মিডফিল্ডার পিওতর জিয়েলিনস্কি। সুইডেনের আলেকসান্দর আইজ্যাক, ইব্রাহিমোভিচের মতো তারকারা হতাশ দৃষ্টিতে দেখেছেন লেভানডফস্কিদের জয়োল্লাস।
ফলে এক ঢিলে বলতে গেলে দুই শিকার করলেন লেভানডফস্কি। দলকে জিতিয়ে বিশ্বকাপের টিকিট তো এনে দিলেনই, সঙ্গে তাঁর নিজের ব্যালন ডি’অর জয়ের স্বপ্নটাও বেঁচে থাকল।
কিন্তু এই জয়ের জন্য, ব্যালন ডি'অরের স্বপ্নটা জিইয়ে রাখার জন্য বড় মূল্য চোকাতে হয়েছে লেভানডফস্কিকে। ম্যাচ শেষে জানিয়েছেন, চোট নিয়ে দেশের ডাকে সাড়া দিয়েছেন তিনি। শুধু লেভানডফস্কিই নন, দলের অনেক খেলোয়াড়ই চোট নিয়ে খেলেছেন সুইডেনের বিপক্ষে, ‘আমাদের অনেক সমস্যা ছিল ম্যাচের আগে। আমাদের অনেক খেলোয়াড় চোটাক্রান্ত ছিল। আমার নিজেরও চোট ছিল। আমার হাঁটুতে সমস্যা ছিল একটু।’
এই শারীরিক যন্ত্রণাই জয়ের মহিমাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে লেভানডফস্কিদের কাছে, ‘আমরা অনেক যন্ত্রণা সহ্য করেছি। কিন্তু এখন আমরা উদযাপন করতে পারি। আমি গর্বিত ও খুশি।’
ডিফেন্ডার কামিল গ্লিকের কথায় ফুটে উঠেছে এই জয়ের মাহাত্ম্য, ‘এই অভিজ্ঞতাটা (প্লে-অফ খেলা) আমাদের সবার জন্য নতুন। বিশেষ করে আমার আর রবার্টের (লেভানডফস্কি) জন্য, যারা দেশের হয়ে অনেক ম্যাচ খেলেছি। কিন্তু এমন গুরুত্বের ম্যাচ কখনও খেলিনি। আমাদের কেউই খেলেনি।’
চোট নিয়ে অনেক গুরুত্বের এই ম্যাচটা জিতেই তো লেভানডফস্কি জিইয়ে রাখলেন ব্যালন ডি'অরের স্বপ্ন!