>২৮ বছর পর বিশ্বকাপে খেলতে যাচ্ছে মিসর। ‘দা গ্রেটেস্ট শো অন আর্থে’ মিসরের নেতৃত্ব দেবেন ৪৫ বছর বয়সী এসাম এল হাদারি। তিনি মাঠে নামার সঙ্গে সঙ্গেই উঠে যাবেন সবচেয়ে বেশি বয়স্ক ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপে খেলার রেকর্ড বইয়ে। মেসি-রোনালদোরও তো তাঁর কীর্তিতে হিংসা হওয়ার কথা!
বিশ্বকাপের আগে বিশ্বকে যেন একটি ঐকিক নিয়মের অঙ্কের সামনে দাঁড় করিয়ে দিলেন মিসরের গোলরক্ষক এসাম এল হাদারি!
জাতীয় দলের জার্সিতে গ্লাভস হাতে তিনি যেদিন প্রথম তিন কাঠির নিচে দাঁড়িয়েছিলেন, বর্তমান বিশ্বের সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি তখন ৯ বছরের বালক আর অন্য সেরা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর বয়স ১১। তাহলে এসামের বয়স কত?
বয়স তো জানা যাবেই। তার আগে বলে রাখা উচিত রাশিয়া বিশ্বকাপে মেসি-রোনালদোদের সঙ্গেই খেলতে যাচ্ছেন এই এসাম। ভাবা যায়! এসামের বয়স জানানোর আগে আরেকটা মজার তথ্য দেই। এবার এসামের সঙ্গে একই দলের জার্সিতে বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন রামাদান সবহি। স্টোক সিটির এই ২১ বছর বয়সী উইঙ্গারের জন্মের আগেই মিসরের হয়ে অভিষেক হয়েছে এসামের। রাশিয়া বিশ্বকাপে এমনই সব বিস্ময়কর তথ্য ঘুরে বেড়াচ্ছে এসামকে ঘিরে।
আর ভণিতা না করে বলা যাক এসামের বয়স ৪৫। তাঁর নেতৃত্বেই এবার বিশ্বকাপ মাতানোর অপেক্ষায় নীল নদের দেশ মিসর। আর মাঠে নামার সঙ্গে সঙ্গেই সবচেয়ে বেশি বয়স্ক ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপে খেলার রেকর্ড গড়বেন তিনি। তখন রজার মিলা কিংবা ফরিদ মনড্রাগনেরও কিন্তু তাঁর কীর্তি দেখে হিংসা হওয়ার কথা!
এসাম যেদিন জাতীয় দলের হয়ে প্রথম মাঠে নেমেছিলেন, বর্তমান মিসর ফুটবলের ‘পোস্টার বয়’ সালাহর বয়স মাত্র তিন। স্বাভাবিকভাবে এসামের ক্যারিয়ারের যৌবনকালটা উপভোগ করার সৌভাগ্য হয়নি সালাহর। এখন তো এসামের ক্যারিয়ারের সূর্যাস্ত চলছে। দীর্ঘ ২৮ বছর পর সালাহকে সঙ্গে করে মিসরকে বিশ্বকাপে তুলে এনেছেন এসাম। জীবনে এর চেয়ে ভালো সময় আর কী হতে পারত এসামের জন্য।
কঙ্গোকে ২-১ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করার সন্ধ্যায় এসাম উঠে বসেছিলেন ক্রসবারের ওপরে। সেদিন তো ওই আসনটা তাঁর জন্য হয়ে উঠেছিল সপ্তম স্বর্গের মতো। ৪৫ ছুঁই ছুঁই বয়স। অথচ গোলপোস্টের নিচে কী দুর্দান্তই না ছিলেন তিনি! বিশ্বকাপ নিশ্চিত করার পর বলেছিলেন, ‘আমি কখনোই ভাবিনি এই বয়সে আমি খেলা চালিয়ে যাব। কিন্তু আমার একটা স্বপ্ন ছিল বিশ্বকাপে খেলব। যা আমাকে সব সময় অনুপ্রেরণা দিয়েছে, যা আমি এখনো বহন করে যাচ্ছি। জীবনে লক্ষ্য নির্ধারণ করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
কোনো অঘটন না ঘটলে এসামের সেই স্বপ্নটা পূরণ হতে যাচ্ছে ১৫ জুন। সেদিনই তাঁর নেতৃত্বে উরুগুয়ের বিপক্ষে মাঠে নামবে মিসর। আর বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড় হিসেবে রেকর্ডের পাতায় উঠে যাবে এসামের নাম। এই রেকর্ডটি এখন পর্যন্ত দখলে আছে কলম্বিয়ার গোলরক্ষক ফরিদ মনড্রাগনের। সর্বশেষ বিশ্বকাপে ৪৩ বছর বয়সে জাপানের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিলেন রজার মিলার রেকর্ড ভেঙেছিলেন মনড্রাগন। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে ৪২ বছর বয়সে মাঠে নেমে বিশ্বকাপ আলোকিত করেছিলেন ক্যামেরুনের সাবেক স্ট্রাইকার মিলা।
ঐতিহাসিক এই রেকর্ডের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে কী ভাবছেন এসাম? তাঁর ভাষায়, ‘আমি কখনোই এই ধরনের রেকর্ড নিয়ে ভাবি না। কিন্তু এটা আমার অনুশীলনে কঠোর পরিশ্রম ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জন। অর্জনটা আমার দেশেরও। গণমাধ্যমে এই অর্জনটা নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। কিন্তু বিষয়টা নিয়ে আমার তেমন জানা নেই। তবে ভালো লাগছে বিশ্বকাপের মতো একটা আসরে মাইলফলক হতে যাচ্ছি আমি।’
দীর্ঘ প্রায় ২৪ বছরে জাতীয় দলের জার্সিতে ১৫৮ ম্যাচ খেলেছেন এসাম। অর্জনের পাল্লাটাও অনেক ভারী। জিতেছেন চারটি আফ্রিকান ন্যাশনস কাপের শিরোপা। আফ্রিকান শ্রেষ্ঠত্বের এই আসরে তিনবার হয়েছেন সেরা গোলরক্ষক। বয়স যতই হোক, এমন গোলরক্ষককে দলে কোন কোচই বা না চায়!
তাঁর সম্পর্কে মিসরের সহকারী কোচ মাহমুদ ফায়েজের কথাটাই বুঝি সবচেয়ে জুতসই, ‘মিসরে যদি এক মিলিয়ন হাদারির মতো খেলোয়াড় থাকত। তাহলে মিসরের ফুটবল আজ অন্য উচ্চতায় থাকত।’