রিয়াল সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ
রিয়াল সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ

বলছেন রিয়াল সভাপতি পেরেজ

উয়েফাকে বোঝাতে হবে, রিয়াল মাদ্রিদ কী

উয়েফা সুপার লিগ নিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের বক্তব্য মানেই যেন এখন উয়েফাকে একহাত নেওয়ার হুমকি। গতকাল রিয়ালের বার্ষিক সাধারণ সভায় বক্তৃতা দিতে গিয়েও এর ব্যতিক্রম হলো না পেরেজের।

রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা ও জুভেন্টাস মিলে সুপার লিগের পরিকল্পনা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি তো পেরেজ দিয়েছেনই, পাশাপাশি ইউরোপের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা উয়েফাকেও হুমকি দিয়ে পেরেজ বললেন, রিয়াল মাদ্রিদ কী, সেটা উয়েফাকে মনে করিয়ে দেওয়ার সময় এসে গেছে!

‘সম্ভবত উয়েফাকে মনে করিয়ে দিতে হবে, রিয়াল মাদ্রিদ কী। রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাস উয়েফাকে মনে করিয়ে দিতে হবে। জন্মের পর থেকেই রিয়াল মাদ্রিদ বছরের পর বছর ধরে সব ধরনের উদ্ভাবনে জড়িত ছিল’—বার্ষিক সাধারণ সভায় কাল বলেছেন পেরেজ।

জুভেন্টাস চেয়ারম্যান আন্দ্রেয়া আনিয়েল্লি (বাঁয়ে), রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ (মাঝে) ও বার্সেলোনা সভাপতি হোয়ান লাপোর্তা - সুপার লিগের তিন মূল হোতা

উয়েফা, চ্যাম্পিয়নস লিগ, এমনকি ফিফার প্রতিষ্ঠায় রিয়াল মাদ্রিদের ভূমিকা আছে জানানো বিষয়ে তাঁর বক্তৃতা শেষ হয়েছে সমর্থকদের করতালি আর ‘ইউরোপের রাজা’ স্লোগানের মধ্য দিয়ে!

বক্তৃতায় বিতর্কিত উয়েফা সুপার লিগ নিয়ে কাজ করে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন পেরেজ, ‘ফুটবলের বর্তমান যে অবস্থা, সেটার কারণে নিজেদের আইনগত স্বার্থরক্ষার জন্য আমাদের হাতে (সুপার লিগ ছাড়া) আর কোনো বিকল্প থাকছে না।’

গত এপ্রিলে রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, জুভেন্টাসও ইউরোপের ১২টি গুরুত্বপূর্ণ ক্লাব মিলে ঘোষণা দেয়, উয়েফার বর্তমান চ্যাম্পিয়নস লিগের বিকল্প হিসেবে তারা একটি টুর্নামেন্ট আনতে চায়। ওই ১২ ক্লাবের মধ্যে স্পেনে রিয়াল-বার্সার সঙ্গে ছিল আতলেতিকো মাদ্রিদ, ইতালিতে জুভেন্টাসের সঙ্গে ছিল ইন্টার মিলান ও এসি মিলান। আর ছিল ইংল্যান্ডের ছয় ক্লাব—ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, লিভারপুল, আর্সেনাল, টটেনহাম, চেলসি ও ম্যানচেস্টার সিটি।

তবে সুপার লিগের যে ধারণা তখন দেওয়া হয়েছিল, সেটি বেশির ভাগ ফুটবল–সমর্থকেরই পছন্দ হয়নি।

ইউরোপীয় সুপার লিগের ঘোষণা দিয়েছিল এই ১২টি ক্লাব

বিতর্কিত এই টুর্নামেন্টের ব্যাপারে নিজেদের সমর্থকদেরই প্রতিবাদের মুখে প্রথমে ইংলিশ ছয় ক্লাব এবং পরে ইন্টার ও এসি মিলান আর আতলেতিকো—এই নয় ক্লাব সুপার লিগ পিছু হটে; তা-ও সুপার লিগের ঘোষণা দেওয়ার দুই দিনের মধ্যেই! সে সময় ধরে নেওয়া হয়েছিল, সুপার লিগ তাহলে আর হচ্ছে না।

উয়েফাও তখন পিছু হটে আসা ক্লাবগুলোকে কিছু জরিমানা করেছিল। আরও বড় শাস্তির হুমকি দিয়েছিল সুপার লিগের পরিকল্পনা আঁকড়ে পড়ে থাকা তিন ক্লাব রিয়াল, বার্সা ও জুভকে।

কিন্তু উয়েফার হুমকি উপেক্ষা করেই রিয়াল, বার্সা, জুভ পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যায়। তাতে সাফল্যও আসে। উয়েফা বনাম রিয়াল-বার্সা-জুভ মামলায় স্প্যানিশ আদালত রায় দিয়েছেন এই তিন ক্লাবের পক্ষে। উয়েফাকে জানিয়ে দিয়েছেন, সুপার লিগের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো ক্লাবকেই জরিমানা করা বা শাস্তি দেওয়া যাবে না।

ইউরোপিয়ান সুপার লিগের বিরোধিতা করেছেন ফুটবলপ্রেমীরা

মামলাটির আরও বিশ্লেষণের জন্য, উয়েফার শাস্তি দেওয়ার ব্যাপারটি ইউরোপিয়ান কমিশনের ‘টুর্নামেন্ট আয়োজন আইন’–এর সঙ্গে সংঘাতমূলক কি না, সেটি দেখার জন্য এ মামলাকে ইউরোপিয়ান কোর্ট অব জাস্টিসে (ইসিজে) পাঠিয়েছেন স্প্যানিশ আদালত।

এর মধ্যেই রিয়াল, বার্সা ও জুভ সুপার লিগের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। পেরেজের আশা, উচ্চ আদালতের রায়ও তাঁদের পক্ষেই আসবে। সুপার লিগের শুধু ঘোষণা আসার পরই উয়েফার এভাবে শাস্তি-জরিমানা-হুমকিকে পেরেজ দেখছেন এভাবে, ‘শুধু (সুপার লিগের) ঘোষণা আসার পরই উয়েফার দিক থেকে যে তিক্ততাপূর্ণ প্রতিক্রিয়া এসেছে, সেটিই বুঝিয়ে দেয় আমাদের স্বাধীনতা ফিরে পেতে এই প্রকল্প (সুপার লিগ) কতটা দরকারি। উয়েফা কোনো আলোচনায়ই বসতে রাজি হয়নি। ক্লাবগুলোকে শাস্তির হুমকি দিয়েছে, যেটা আইনের বিরোধী। তারা সুপার লিগ শেষ করে দিতে চেয়েছিল, কিন্তু আমরা এগিয়ে গিয়েছি।’

এগিয়ে যাওয়ার পথে আদালতের রায় তাঁদের পক্ষে আসার পর উয়েফা এখন আরও ভয় পাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে পেরেজের, ‘এই প্রক্রিয়া নিশ্চিতভাবেই উয়েফাকে আরও দুশ্চিন্তায় ফেলছে। কারণ, এটাকে (সুপার লিগ) বন্ধ করার জন্য তারা সম্ভব-অসম্ভব সব চেষ্টাই করেছে।’