উপভোগ্য ফুটবলের প্রতিশ্রুতি

কারও চোখ শিরোপায়, কেউ চান চমক দেখাতে। জমাট এক ফুটবল লিগেরই আভাস দিলেন শীর্ষ পাঁচ দলের অধিনায়ক। (বাঁ থেকে) শেখ জামালের নাসির, শেখ রাসেলের মিঠুন, আবাহনীর প্রাণতোষ, মুক্তিযোদ্ধার এনামুল ও মোহামেডানের অরূপ। কাল বাফুফে ভবনে সংবাদ সম্মেলনে l প্রথম আলো
কারও চোখ শিরোপায়, কেউ চান চমক দেখাতে। জমাট এক ফুটবল লিগেরই আভাস দিলেন শীর্ষ পাঁচ দলের অধিনায়ক। (বাঁ থেকে) শেখ জামালের নাসির, শেখ রাসেলের মিঠুন, আবাহনীর প্রাণতোষ, মুক্তিযোদ্ধার এনামুল ও মোহামেডানের অরূপ। কাল বাফুফে ভবনে সংবাদ সম্মেলনে l প্রথম আলো

বাফুফে ভবনে পা রেখেই পাওয়া গেল গমগমে একটা আবহ। পরদিন দেশের সর্বোচ্চ ফুটবল লিগের পর্দা উঠছে, উপলক্ষটা বেশ বড়ই। অংশ নেওয়া দলগুলোর কোচ-অধিনায়ককে তাই নিয়ে আসা হলো ভবনে। ফেনী সকার ও চট্টগ্রাম আবাহনী ছাড়া বাকি নয় দলেরই কোচ-অধিনায়ক আসা মানে তারকার মেলাই।

আবাহনী কোচ জর্জ কোটান এলেন তাঁর অধিনায়ক প্রাণতোষকে নিয়ে। শেখ রাসেলের কোচ দ্রাগান দুকানোভিচের সঙ্গী অধিনায়ক মিঠুন চৌধুরী, শেখ জামাল কোচ মারুফুল হকের সঙ্গে অধিনায়ক নাসির। অধিনায়ক এনামুলকে পাশে রেখে কথা বললেন আত্মবিশ্বাসী মুক্তিযোদ্ধার কোচ আবু ইউসুফ।

মোহামেডানে তারকা নেই, তবে কোচ জসিমউদ্দিন জোসির পাশে বসে লিগের ভালো করার প্রত্যাশা জানালেন অধিনায়ক অরূপ কুমার বৈদ্য। ব্রাদার্স কোচ সৈয়দ নইমুদ্দিন নিজেদের অনেক ঘাটতি মেনে নিয়ে লড়াইয়ে থাকার প্রতিজ্ঞা রাখলেন। তাঁর অধিনায়ক ইউসুফের চোখে চমক দেখানোর স্বপ্ন।

এমন স্বপ্ন আসলে প্রিমিয়ার লিগের ১১ দলের কোচ-অধিনায়কের চোখেই খেলা করছে। সেটিই তাঁরা বললেন আলাদা সংবাদ সম্মেলনে। তবে ঘুরেফিরে একই কথা সবার মুখে। বড় দলগুলো চায় শিরোপা, ছোটরা যতটা সম্ভব ভালো করার প্রত্যয়ই জানাচ্ছে।

সেরা দলটার ওপরই চোখ থাকে বেশি। আজ বিকেল ৫টায় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী ম্যাচ খেলতে নামা বর্তমান চ্যাম্পিয়ন শেখ জামালই শীর্ষ ফেবারিট। ফেডারেশন কাপে ঘরে তুলে মৌসুমে শুভসূচনা করেছে দলটি। কোচ মারুফুল হকের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ এখন লিগ। সেটিতে জয়ী হওয়ার আত্মবিশ্বাসই তাঁর কণ্ঠে, ‘মৌসুমে সব কটি ট্রফিই চায় শেখ জামাল। লিগটাই সবচেয়ে বড়। আমরা তৈরি।’

খানিক পরই আবাহনী কোচ জর্জ কোটান রাখঢাক না রেখেই বলে দিলেন, ‘শেখ জামালই এক নম্বর ফেবারিট।’ কোটানের মতো কোচও যখন সরাসরি এমন স্বীকৃতি দিচ্ছেন, শেখ জামালের ওপর কতটা আলো তা না বললেও চলছে। কোটান তাঁর দলের সঙ্গে শিরোপা অন্যতম দাবিদার বলছেন শেখ রাসেলকে। একইভাবে সম্মানের চোখে তাকালেন মুক্তিযোদ্ধা, মোহামেডানের দিকেও।

শেখ জামালের হাত থেকে শিরোপা ছিনিয়ে নিতে এবার আসলে সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপাবে শেখ রাসেল ও আবাহনী। এই দুটি দলই আসলে মারুফের দলের সামনে সবচেয়ে বড় বাধা। রাসেল, আবাহনী দুই দলের যে কেউ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ক্ষমতা রাখে। লড়াইটা এই তিন দলের মধ্যে জমবে বলে ধারণা।

 মুক্তিযোদ্ধা, মোহামেডানও অনেক দূর যাওয়ার ক্ষমতা রাখে। এই দুটি দলও মুখে শিরোপা জয়ের লক্ষ্যের কথাই বলছে। তবে চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলে অতৃপ্তি থাকার কথা নয় তাদের। বিশেষ করে মোহামেডান এবার একেবারেই তারুণ্যনির্ভর। ‘যতটা সম্ভব গতবারের চেয়ে ভালো করতে চাই’—কোচ জোসি বাস্তবতার জমিনেই রাখতে চান পা।

বাকি দলগুলোর চাওয়া সম্মানজনক একটা অবস্থান। ১১ দলের মধ্যে স্পষ্টতই একটা বিভাজনরেখা টেনে ফেলা যায়। শিরোপা আর টিকে থাকা এই লড়াইয়ের প্রথম পর্বটা শুধুই দেখা যাবে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ আরও কিছু কারণ দেখিয়ে প্রথম পর্বে ঢাকার বাইরে যেতে ইচ্ছুক নয় দলগুলো।

খেলোয়াড়দের এতে কিছু করার নেই। তবে একটা জায়গায় তাঁরা সবাই একই বিন্দুতে। লিগটা হওয়া চাই উপভোগ্য। প্রাণতোষ যেমন বললেন, ‘খুব ভালো ফুটবল হবে আশা করছি। নাসির উদ্দিনের কণ্ঠে দৃঢ়তা, ‘সামনে জাতীয় দলের অনেক ম্যাচ আছে। নিজেদের তৈরি করতে লিগই সবচেয়ে বড় মঞ্চ হতে পারে সব খেলোয়াড়ের কাছে। আশা করি, সবাই নিজেদের উজাড় করে দেবে।’

ফুটবলাররা ভালো করলে ক্লাবই এর ফল পাবে। তবে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি জাতীয় দলেরই।

প্রথম দুই রাউন্ডের ফিকশ্চার 

৭ এপ্রিল     শেখ জামাল-ফরাশগঞ্জ

৮ এপ্রিল     আবাহনী-রহমতগঞ্জ

                মুক্তিযোদ্ধা-ফেনী সকার

৯ এপ্রিল     মোহামেডান-চট্ট. আবাহনী

               ব্রাদার্স-বিজেএমসি

১১ এপ্রিল    রহমতগঞ্জ-শেখ জামাল

১২ এপ্রিল    মুক্তিযোদ্ধা-চট্ট. আবাহনী

               আবাহনী-ফেনী সকার

১৩ এপ্রিল    শেখ রাসেল-ব্রাদার্স

               বিজেএমসি-মোহামেডান

সব ম্যাচই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে

এক নজরে প্রিমিয়ার লিগের ১১ দল

এক নজরে প্রিমিয়ার লিগের ১১ দল
শেখ জামাল
শক্তি : সব বিভাগেই সেরা খেলোয়াড়, ভালো বিদেশি
দুর্বলতা : প্রত্যাশার চাপ
যাঁদের দিকে তাকিয়ে : মামুনুল, সোহেল রানা, ওয়েডসন, এমেকা
সেরা সাফল্য : দুবার চ্যাম্পিয়ন

আবাহনী
শক্তি: দ্রুত এবং নিখুঁত পাসে খেলার চেষ্টা
দুর্বলতা: প্রত্যাশা অনুযায়ী গোল না পাওয়া
যাঁদের দিকে তাকিয়ে: সাবি, শাহেদ, মরিসন, সামাদ
সেরা সাফল্য: চারবার চ্যাম্পিয়ন

শেখ রাসেল
শক্তি: অভিজ্ঞ ও দেশসেরা কয়েকজন খেলোয়াড়
দুর্বলতা: সামর্থ্য অনুযায়ী অনেক সময়ই খেলতে না পারা
যাঁদের দিকে তাকিয়ে: এমিলি, জাহিদ, মিঠুন, হেমন্ত
সেরা সাফল্য: একবার চ্যাম্পিয়ন

মোহামেডান
শক্তি: একঝাঁক তরুণকে নিয়ে দলীয় ঐক্য

দুর্বলতা: খুব ভালো বিদেশি নিতে না পারা

যাঁদের দিকে তাকিয়ে: বাঙ্গুরা, জুয়েল, রানা, মোবারক

সেরা সাফল্য: তিনবার রানার্সআপ

মুক্তিযোদ্ধা

শক্তি: ভালো করার তাড়না

দুর্বলতা: বল হারালে দ্রুত কেড়ে নিতে না পারা

যাঁদের দিকে তাকিয়ে: এনামুল, ফয়সাল মাহমুদ, কামারা, ইসলাম ফেকরে

সেরা সাফল্য: দুবার রানার্সআপ

ব্রাদার্স

শক্তি: লড়াইয়ের অঙ্গীকার, কোচ সৈয়দ নইমুদ্দিন

দুর্বলতা: প্রত্যাশা অনুযায়ী দল করা যায়নি

যাঁদের দিকে তাকিয়ে: বিপ্লব, এডামস, ওয়ালসন, কেস্টার

সেরা সাফল্য: চতুর্থ

বিজেএমসি

শক্তি: দলটাকে টিকিয়ে রাখার প্রতিজ্ঞা

দুর্বলতা: পর্যাপ্ত অনুশীলন না হওয়া

যাঁদের দিকে তাকিয়ে: আবদুল্লাহ পারভেজ, আবুল, জীবন, আরিফুজ্জামান হিমেল

সেরা সাফল্য: তুর্থ


ফরাশগঞ্জ

শক্তি: মাঝমাঠ

দুর্বলতা: আক্রমণভাগ

যাঁদের দিকে তাকিয়ে: ফেলেক্স, পিটার, ইসা, সুশান্ত ত্রিপুরা

সেরা সাফল্য: ষষ্ঠ


রহমতগঞ্জ

শক্তি: রক্ষণ, একসঙ্গে খেলছে বেশ কিছুদিন ধরে

দুর্বলতা: বিদেশি কোটা পূরণ না করতে পারা

যাঁদের দিকে তাকিয়ে: আফসার, রাব্বি, কন্টি, মোজেস

সেরা সাফল্য: সপ্তম


ফেনী
 সকার

শক্তি: তিন বিদেশিকে নিয়ে মাঝমাঠ

দুর্বলতা: অভিজ্ঞ গোলরক্ষকের অভাব

যাঁদের দিকে তাকিয়ে: সোহেল, দাওদা, মোস্তফা কেবা, জহিরুল

সেরা সাফল্য: চতুর্থ


চট্টগ্রাম
 আবাহনী

শক্তি: রক্ষণ

দুর্বলতা: অভিজ্ঞতার অভাব

যাঁদের দিকে তাকিয়ে: কামারা, প্রদীপ, রাজু, মনসুর

সেরা সাফল্য: সপ্তম