>অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে কাল শুরু হয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন একাডেমির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম।
‘আলহামদুলিল্লাহ, আমি বাফুফে একাডেমিতে জাতীয় দলের ক্যাম্পে যাচ্ছি’, নিজ জেলা থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন অনূর্ধ্ব-১৫ জাতীয় দলের কিশোর ফুটবলার শাকিল আহমেদ।
‘বাংলাদেশ ফুটবল একাডেমির অনূর্ধ্ব-১৮ দলের ক্যাম্পে যোগ দিতে আজ রাতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে আমাদের বৈশাখী ক্লাবের স্ট্রাইকার জালাল এবং মৌলভীবাজারের ছেলে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৫ জাতীয় দলের খেলোয়াড় হেলাল...। শুভ কামনা ও দোয়া থাকল তোমাদের প্রতি’—সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন এক ফুটবল সমর্থক।
সামান্য লেখাই তো! কিন্তু খুঁজলে পাওয়া যাচ্ছে উচ্ছ্বাস ও সীমাহীন স্বপ্ন। দুটি লেখার অদৃশ্য ভাবনা জোড়া লাগালেই ছবিটা স্পষ্ট—একটি একাডেমি ঘিরে উড়ছে কত স্বপ্নের রেণু। ফুটবল নিয়ে কিছু কিশোরের আশা ও ভালোবাসা। কাল শুরু হওয়া বাফুফে একাডেমির মাহাত্ম্য যে কত বড়, তার প্রমাণ তো এই কিশোরদের ডানা মেলা স্বপ্নই প্রমাণ করে দিচ্ছে। ইশ্ আরও আগে যদি হতো! না হওয়ার চেয়ে দেরিতে হলেও তো হয়েছে, এতেই খুঁজে নেওয়া যেতে পারে সান্ত্বনা।
অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে অবশেষে কাল বাড্ডার বেরাইদে শুরু হয়েছে বাফুফে একাডেমির কার্যক্রম। অনূর্ধ্ব-১৫ ও ১৮ মিলিয়ে প্রথম দফায় খেলোয়াড় নেওয়া হয়েছে ৬০ জন। তলানিতে চলে যাওয়া দেশের ফুটবলে এর চেয়ে ভালো খবর বুঝি আর হতে পারত না। বাংলাদেশের একটি ফুটবল একাডেমি নেই, এই যুগে বিষয়টি হাস্যকর-ই ছিল বটে। ফুটবল উন্নয়নের জন্য অত্যাবশ্যক এ বিষয়টি নিয়ে ফুটবল ফেডারেশন যে একদমই ভাবত না, তা নয়। মাঝে মধ্যেই কুম্ভকর্ণের মতো ঘুম থেকে জেগে ওঠে নিজেদের একাডেমি বানানোর স্বপ্নের কথা জানাতো বাফুফে। ব্যস, এতেই শেষ হতো দায়িত্ব ও কর্তব্য। কিন্তু এবার ফর্টিস গ্রুপের সহায়তায় বাড্ডার বেরাইদে গড়ে তোলা হয়েছে একাডেমি। সেখানে ফর্টিসের বিশাল একখণ্ড সবুজ মাঠ আছে। আছে আধুনিক পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা, ফ্লাডলাইটসহ কিছু আধুনিক সুবিধা।
এর আগে যে একাডেমি হয়নি, তা নয়। তবে একাডেমির চেয়ে হয়েছিল বেশি নাটকই। একাডেমির জন্য বাংলাদেশকে ৭ লাখ ডলার দিয়েছিল ফিফা। সিলেট বিকেএসপিতে ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর পাঁচ মন্ত্রীর উপস্থিতিতে একাডেমি উদ্বোধন করলেও সেটি চলেনি এক বছরও। এর পর তো আর একাডেমি নিয়ে কথা বলতেই নারাজ ছিলেন বাফুফে সভাপতি। ফর্টিস গ্রুপের সহায়তায় আবার উন্নয়নের কথা ভেবেছে বাফুফে, এই বা কম কী!
টানা চারবার সাফ ফুটবলের গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিবার সাফে ব্যর্থ হওয়ার পরেই ফুটবল বোদ্ধাদের মুখে একাডেমি না থাকার আক্ষেপ শোনা যায়। কারণ প্রতিবেশী দেশগুলো একাডেমি নির্মাণ করে দুর্দান্ত সব ফুটবল প্রতিভা তুলে এনে দুমড়ে মুচড়ে দিচ্ছে বাংলাদেশকে। মালদ্বীপকে ৮ গোল দেওয়ার রেকর্ডের কথা সবার মনে আছে। সময়ের পালা বদলে মালদ্বীপের কাছে এখন ৫ গোল হজম করে বারবার সে স্মৃতি ফিরিয়ে আনে দল। মালদ্বীপের মতো ছোট দেশেও একাডেমি আছে ছয়টি, নেপালে আছে তিনটি, ভুটানে আছে দুটি, আর ২৮টি এলিট একাডেমি আছে ভারতে। এমনি এমনি তো আর বিশ্ব ফুটবলে ভারতের অবস্থান ৯৬তে আসেনি। এ উন্নতিতে অবদান রেখেছে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের একাডেমিগুলো। অবশেষে বাংলাদেশেরও হলো একটি একাডেমি। এবার সুফল ঘরে তোলার পালা।