হারের ক্ষত এখনো শুকায়নি বার্সেলোনার। গত মঙ্গলবার চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোর প্রথম লেগে পিএসজির কাছে ৪-১ গোলে হেরেছে বার্সেলোনা। ঘরের মাঠে এমন ভরাডুবির পর কাল আবার ঘরের মাঠে লিগে কাদিজের সঙ্গেও ১-১ গোলে ড্র করেছেন মেসি-গ্রিজমানরা। ঘরের মাঠে গোল খাওয়াকে রীতিমতো অভ্যাস বানিয়ে ফেলছে দলটি। কাদিজ ম্যাচের আগে ভালো পারফরম্যান্স দিয়ে পিএসজি ম্যাচের দুঃস্বপ্ন ভোলার কথা বলেছিলেন কোচ রোনাল্ড কোমান। সেই ম্যাচ উল্টো আরও বড় ধাক্কা দিয়েছে তাঁকে।
লা লিগার জন্য মহাগুরুত্বপূর্ণ এক সপ্তাহ গেছে এবার। মৌসুমের শুরু থেকে বলগা হরিণের মতো ছুটছিল আতলেতিকো মাদ্রিদ। লিগের প্রথম ১৯ ম্যাচে মাত্র ৭ পয়েন্ট খোয়ানো দলটি গত ৪ ম্যাচেই ৭ পয়েন্ট খুইয়ে ফেলেছে। ফলে একপর্যায়ে ১০ পয়েন্টে এগিয়ে থাকা আতলেতিকো (২৩ ম্যাচে ৫৫ পয়েন্ট) এখন রিয়াল মাদ্রিদের চেয়ে মাত্র ৩ পয়েন্টে এগিয়ে আছে। দলটির হাতে এখনো এক ম্যাচ বেশি থাকলেও অন্তত লিগ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আশা ফিরেছে রিয়াল মাদ্রিদের। কিন্তু বার্সেলোনা কি সে আশা করতে পারছে?
আতলেতিকোর পা হড়কানোর পর জিনেদিন জিদানের দল রিয়াল ভায়াদোলিদের মাঠে নিজেদের কাজটা সেরে এসেছে। কিন্তু ঘরের মাঠেই পা হড়কেছে বার্সেলোনার। ফলে এখন রিয়ালের (২৪ ম্যাচে ৫২ পয়েন্ট) চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলে ৫ পয়েন্টে পিছিয়ে গেছে বার্সা। চারে থাকা সেভিয়ারও সুযোগ পেয়েছে বার্সাকে টপকে তিনে উঠে যাওয়ার। কাল রাতটা তাই ভালো যায়নি কাতালানদের। এমন সময় জ্বলুনি আরও বাড়িয়ে দিল মোনাকো। পিএসজির কাছে হারায় বার্সেলোনাকে ভদ্রতার মুখোশে বেশ বড়সড় খোঁচা দিয়েছে ফ্রেঞ্চ লিগের দলটি।
চ্যাম্পিয়নস লিগের সুখস্মৃতি নিয়ে গতকাল রাতে মাঠে নেমেছিল পিএসজি। নেইমার ও আনহেল দি মারিয়া তো বহু আগ থেকেই নেই। বার্সেলোনা ম্যাচের একাদশ থেকে শুধু মার্কো ভেরাত্তিই নামেননি। আক্রমণে কিলিয়ান এমবাপ্পে, মার্কো ইকার্দি, মইজে কিন—তিনজনই ছিলেন। অবশ্য বাকিরা না থাকলেও শুধু এমবাপ্পে থাকলেই তো যথেষ্ট। বার্সেলোনা রক্ষণকে নাকানিচুবানি যা খাওয়ানোর সব তো এমবাপ্পেই খাইয়েছিলেন। ম্যাচের আগে এমবাপ্পেকে আটকানোর ব্যাপারে নিজেদের অসহায়ত্ব স্বীকার করে নিয়েছিলেন মোনাকো কোচ নিকো কোভাচ।
সাবেক বায়ার্ন কোচ বার্সেলোনা ম্যাচের এমবাপ্পের কথা ভেবে রীতিমতো ভয় পাচ্ছিলেন, ‘পিএসজি একটি বিশ্বমানের দল। ওরা অনেক গোল করে এবং কিলিয়ান এমবাপ্পে এখন দারুণ ছন্দে আছে। আমাদের অবশ্যই ওকে আটকাতে হবে। কিন্তু একজন খেলোয়াড় দিয়ে ওকে আটকানো যাবে না। একা এমবাপ্পেকে আমরা আটকাতে পারব না। এটা “মিশন ইমপসিবল।”’ এই ‘মিশন ইমপসিবল’ ট্যাগ ধরিয়ে দিয়েও প্রতিবার ইথান হান্ট (টম ক্রুজ) সাফল্য নিয়ে ফেরেন এই ফ্র্যাঞ্চাইজির চলচ্চিত্রগুলোতে। কোভাচও সেটাই করেছেন। ফরাসি লিগের পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষ চার দলের মধ্যে সবচেয়ে ভঙ্গুর রক্ষণ নিয়েই দুর্দান্ত এমবাপ্পেকে আটকে দিলেন। পিএসজিকে ২-০ গোলে কাল হারিয়ে দিয়েছে মোনাকো।
এ মৌসুমে পিএসজির ভালোই পরীক্ষা নিচ্ছে মোনাকো। মৌসুমে এ দুই দলের প্রথম লিগ ম্যাচেও পিএসজিকে হতাশ করেছিল দলটি। সেবার পিএসজির মাঠ থেকেই ৩-২ গোলে জিতে ফিরেছিল এমবাপ্পের সাবেক দল মোনাকো। পিএসজিকে লিগের দুই লেগেই হারানোর পর তাই বার্সেলোনাকে খোঁচা মারার লোভ সামলাতে পারল না মোনাকো। ঘরের মাঠে পিএসজির কাছে ৪-১ গোলে হারা বার্সেলোনাকে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ আটে যেতে এখন পিএসজির মাঠে দ্বিতীয় লেগে অন্তত চার গোলের ব্যবধানে জিততে হবে।
সেদিকে ইঙ্গিত করেই কাল ম্যাচ জেতার পরই টুইট করেছে মোনাকো। পিএসজিকে হারানোর রহস্য জানানোর আগ্রহ জানিয়েছে মোনাকো। তবে যেভাবে জানাতে চাইছে সেটা দেখে বাংলাদেশের অনলাইন প্ল্যাটফর্মের বিক্রেতাদের কথা মনে আসতে বাধ্য। ফেসবুকে হাজারো বিক্রেতা পণ্য বিক্রির বিজ্ঞাপন দিলেও দামটা কেন যেন লিখতে ভুলে যান। দাম ও অন্যান্য বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞেস করলেই তাঁরা ‘ইনবক্সে যাওয়া’র আমন্ত্রণ পাঠান। মোনাকোও দেখা যাচ্ছে সে পথেই হাঁটতে পছন্দ করে, ‘আমরা পিএসজিকে প্রথম ও দ্বিতীয় লেগে হারিয়েছি! বার্সেলোনা, তোমাদের পরামর্শ দরকার হলে ইনবক্সে মেসেজ পাঠাও।’
বার্সেলোনার যেন বুঝতে অসুবিধা না হয়, সে জন্য পিএসজির স্প্যানিশ অ্যাকাউন্ট থেকেই করা হয়েছে এ টুইট।