স্বর্গপতন যাকে বলে আরকি! ১৭ বছর যিনি ছিলেন বিশ্ব ফুটবলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, সেই সেপ ব্ল্যাটারই এখন ফুটবলে যেন অপ্রাসঙ্গিক। সুইস ভদ্রলোকের বয়স হয়ে গেছে ৮৬, শেষ বয়সে কোথায় একটু শান্তিতে থাকবেন, তা নয়, দুর্নীতির অভিযোগে জেল-আদালত করেই দিন কাটছে তাঁর।
আর দিন কাটে সময়-সুযোগ পেলে কখনো সাবেক উয়েফা সভাপতি মিশেল প্লাতিনি আর কখনো বর্তমান ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর দিকে তোপ দেগে। নতুন করে আবার ইনফান্তিনোর দিকেই আঙুল তুলেছেন ব্ল্যাটার। তাঁর কথা, মিথ্যা অভিযোগ তুলে ইনফান্তিনো তাঁকে ‘ছিঁড়েখুঁড়ে’ ফেলতে চান!
প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতির অনেক অভিযোগে ব্ল্যাটার আর সাবেক উয়েফা সভাপতি প্লাতিনি দুজনের বিরুদ্ধেই মামলা চলছে। সব ধরনের ফুটবল থেকে নিষেধাজ্ঞা তো আছেই! ফিফার পক্ষের কৌঁসুলিরা অন্তত ২০ বছরের সাজা চেয়েছেন দুজনেরই। মামলার রায় আগামী মাসে আসার সম্ভাবনা আছে।
এর মধ্যেও ব্ল্যাটারের গলায় জোর আওয়াজ। নিজেকে নির্দোষ দাবি করে উল্টো প্রশ্ন তুলছেন বর্তমান ফিফা সভাপতি ইনফান্তিনোর উদ্দেশ্য নিয়ে। সুইজারল্যান্ডের সংবাদমাধ্যম রাদিও তেলিভিসিওন সুইসে (আরটিএস) প্রথমে ফিফার প্রধানের দায়িত্বে থাকার সময় তিনি কী কী উন্নতি এনেছেন, সেগুলোর ফিরিস্তি দিয়েছেন ব্ল্যাটার, ‘নিজের সম্মান আমি ফিরে পেতে চাই। আমি যখন এসেছিলাম (ফিফায়), আমাদের কিছুই ছিল না। আর আমি যখন বিদায় নিলাম, আমরা একটা বড় আন্তর্জাতিক সংগঠন হয়ে উঠি। আর্থিকভাবে, সামাজিকভাবে, সাংস্কৃতিকভাবে, এমনকি রাজনৈতিক দিক থেকেও অনেক শক্তিশালী একটা সংগঠন হয়ে উঠি।’
আমি খুব কষ্ট পেয়েছি সবকিছুতে। আমার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ তোলা হয়েছে, আমাকে চোর বলা হচ্ছে। অবিশ্বাস্য!সেপ ব্ল্যাটার
এরপর শুরু হলো ইনফান্তিনোর সমালোচনা। তাঁর বিরুদ্ধে চলা মনগড়া মামলার চক্রান্ত চলছে বলেই অভিযোগ ব্ল্যাটারের, ‘জানি না কেন, তবে ইনফান্তিনো আমাকে চায় না। সে তো আমার বিরুদ্ধে মনগড়া নতুন নতুন মামলাও তৈরি করতে চায়। সে আমাকে টেনেহিঁচড়ে নিচে নামাতে চায়, পাশাপাশি আমি যা যা করেছি সেগুলোকেও। কারণ, সে মনে করে, সে আমার চেয়ে ভালো করছে।’
ইনফান্তিনোর এসব কার্যকলাপে কষ্ট পাচ্ছেন জানিয়ে ব্ল্যাটারের দাবি, বিশ্বের হাজারো ফুটবলার তাঁর এই অবস্থায় ব্যথিত। তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো তোলা হচ্ছে, তা নিয়ে ব্ল্যাটারের কষ্ট, ‘বলতেই হচ্ছে, আমি খুব কষ্ট পেয়েছি সবকিছুতে। আমার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ তোলা হয়েছে, আমাকে চোর বলা হচ্ছে। অবিশ্বাস্য! আমি কেন এখন আদালতে আছি, সেটাই বুঝতে পারছি না। আমি নিশ্চিত, লাখ লাখ না হলেও হাজারো ফুটবলার আমার এই অবস্থার কারণ বুঝতে পারছে না।’
ফরাসি কিংবদন্তি ও সাবেক উয়েফা সভাপতি প্লাতিনিও তাঁর বিরুদ্ধে চলা মামলাগুলো নিয়ে কথা বলেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে যা হচ্ছে, সেগুলো অবিচার জানিয়ে এর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি প্লাতিনির, ‘অন্যায়–অবিচারের কারণে আমাদের কাছের মানুষ, পরিবার, সন্তান, নাতি-নাতনি, সবাই কষ্ট পায়, কারণ তারা তো এসবের জন্য তৈরি নয়। তবে আমি লড়ে যাব। আমি লড়াইয়ে আছি এবং লড়াই ব্যাপারটা আমি সব সময়ই উপভোগ করেছি। হাল ছেড়ে দিইনি কখনো, দেবও না। শেষ পর্যন্ত দেখব কী হয়।’