ইতালির ফুটবলে রোনালদো প্রভাবে ফেলেননি?
ইতালির ফুটবলে রোনালদো প্রভাবে ফেলেননি?

ইতালিতে রোনালদোর চেয়ে প্রভাব রাখছেন বেশি ইব্রাহিমোভিচ

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ইতালিতে গেছেন দুই বছর হয়ে গেল। দুই মৌসুমে অর্জন কম নয় তাঁর। সিরি ‘আ’-র সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন প্রথম বছরে। দলকে দুটি লিগ শিরোপা এনে দিয়েছেন, ৯১ ম্যাচে করেছেন ৬৮ গোল। শুধু তাঁর জন্যই বেড়ে গেছে জুভেন্টাসের ভক্ত-সংখ্যা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ প্রভাবশালী এক শক্তি হয়ে উঠেছে জুভেন্টাস তাঁর সুবাদেই।

ওদিকে জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ ইতালিতে প্রত্যাবর্তন করেছেন এখনো এক বছর হয়নি। ২০২০-এর জানুয়ারিতে এসি মিলানে যোগ দিয়েছেন। অর্ধ মৌসুমে ক্লাবের হয়ে ২০ ম্যাচ খেলে করেছেন ১১ গোল। এ মৌসুমে অবশ্য আগুনে ফর্মে আছেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় এক মাস মাঠে নামতে পারেননি। তবু ৩ ম্যাচেই ৫ গোল তাঁর। এসি মিলানও চার ম্যাচ খেলে পূর্ণ ১২ পয়েন্ট নিয়ে লিগের শীর্ষে আছে। আর এ দেখেই আলবের্তো জ্যাক্কেরোনির মনে হচ্ছে রোনালদোর চেয়ে ইব্রাই ইতালিতে প্রভাব বেশি রাখছেন।

এসি মিলান ও জুভেন্টাস— দুই ক্লাবেরই কোচ ছিলেন জ্যাক্কেরোনি। তাই পক্ষপাতিত্ব না করেই মতামত দিতে পারছেন এই সাবেক কোচ। এবং তাঁর ধারণা, একজন তারকা হিসেবে রোনালদো জুভেন্টাসের উপকারে এলেও ইতালির ফুটবলে তাঁর তেমন অবদান নেই। টানা সাত বছর লিগ জেতা এক দলে যোগ দিয়েছেন রোনালদো। দাপুটে এক দলের সঙ্গী হয়ে আরও দুটি লিগ জিতেছেন। আর ইব্রাহিমোভিচ ইতালিতে এসেছেন সম্পূর্ণ ভিন্ন এক পরিস্থিতিতে। মাঝে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাওয়া এই সুইডিশ তারকার মনে হয়েছে এখনো ইউরোপিয়ান ফুটবলে খেলার সামর্থ্য তিনি রাখেন। যোগ দিয়েছেন ধুঁকতে থাকা এসি মিলানে।

ইব্রাহিমোভিচ দুর্দান্ত ফর্মে আছেন।

যখন এসেছেন লিগে মিলানের অবস্থান ছিল নিচের অর্ধে। সেখান থেকেই দলকে টেনে তুলেছেন। ইউরোপে খেলার অবস্থানে নিয়ে গেছেন। বাছাইপর্ব শেষে ইউরোপা লিগেও জায়গা করে নিয়েছে মিলান। ৩৯ বছর বয়সেও তাঁর মধ্যে গোলের খিদেটা আছে পুরোপুরিই। ইন্টার মিলানের সঙ্গে মিলান ডার্বিতে তাঁর জোড়া গোলে জিতেছে মিলান। উঠেছে লিগের শীর্ষে। মাঠে তাঁর উপস্থিতি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে ক্লান্ত হয়ে মাঠ ছাড়তে চাইলেও কোচ স্তেফানো পিওলি জোর করে রেখে দিয়েছেন। কারণ তাঁর উপস্থিতিতে যে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে পুরো দল।

জ্যাক্কেরোনির নজরে এসেছে এটিই, ‘আমি ক্যারিয়ারে অনেক চ্যাম্পিয়নকে কোচিং করিয়েছি। অলিভের বিয়েরহফ, জর্জ উইয়াহ থেকে আদ্রিয়ানো। কিন্তু আমার একটাই দুঃখ আমি কখনো ইব্রাহিমোভিচকে পাইনি। আমি বুঝি না কেন সে কখনো ব্যালন ডি’অর জেতেনি।’

এসি মিলানকে সব সময়ই উজ্জীবিত করছে ইব্রার উপস্থিতি।

লিগে শুধু এসি মিলানই যে শীর্ষে আছে তা নয়। দুইয়ে আছে সাসসুয়েলো, তিনে ও চারে আছে আতালান্তা ও নাপোলি। জুভেন্টাস আছে পাঁচে। ইতালিতে এমন কিছু দেখা যাচ্ছে বহুদিন পরই। এর কৃতিত্ব ইব্রাহিমোভিচকে দিতে চান জ্যাক্কেরোনি, ‘ইতালিতে সে-ই ধরনটা বদলে দিয়েছে। রোনালদোর চেয়েও বেশি। সে ফেরার পরই যে তরুণ খেলোয়াড়দের অনেক উন্নতি হয়েছে, এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়। সে শুধু গোল করে না। সে তার সতীর্থদের আত্মবিশ্বাসী করে, কঠিন সময়ে নিজের কাঁধে দলের দায়িত্ব বুঝে নেয়।’

ইব্রাহিমোভিচ নিজেও জানেন দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। তাঁর ধারণা যত বয়স হচ্ছে, তত অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছেন, ‘আমার নিজেকে আরও পরিপূর্ণ মনে হচ্ছে, আরও বেশি অভিজ্ঞ হয়েছি। তরুণ সময়ে শেখাটা চলতেই থাকে। এখন নিজেকে পরিপূর্ণ ভাবি। আমার যদি শারীরিক অবস্থা ২০-৩০ বছর বয়সীদের মতো হতো, তাহলে আমাকে কেউ থামাতে পারত না। অবশ্য, এমনিতেও আমাকে এখন থামাতে পারছে না।’