>১ জানুয়ারি শুরু হচ্ছে শীতকালীন দলবদলের মৌসুম। মৌসুমের শুরুতে দলের মধ্যে সৃষ্ট সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে শূন্যস্থান পূরণের জন্য হাজির হয় এই দলবদল মৌসুম। এ দলবদলে কোন দলের কী সমস্যা, কোন দলের কোন পজিশনে দরকার নতুন মুখ—এ নিয়ে নিয়মিত আলোচনা করা হবে প্রথম আলোতে। আজ ষষ্ঠ পর্বের দল হিসেবে থাকছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড
লিভারপুলের কাছে হারের পরেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে হোসে মরিনহো অধ্যায় শেষ হতে যাচ্ছে। ইউনাইটেডও বেশি দেরি করেনি, ওই হারের পর পত্রপাঠ বিদায় করেছে মরিনহোকে। মরিনহো অধ্যায় শেষে ইউনাইটেডের অন্তর্বর্তীকালীন কোচ এখন ‘বেবি ফেসড অ্যাসাসিন’খ্যাত ওলে গানার সোলসকায়ের। বাচ্চাদের মতো নিষ্পাপ মুখের সাবেক এই ফরোয়ার্ডকে অন্তত অলিভার কান বায়ার্ন মিউনিখ ভুলতে পারবে না। ১৯৯৯ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে ৯০ মিনিট শেষেও ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল বায়ার্ন। সেখান থেকে যোগ করা সময়ে সোলসকায়ের জাদুতে ২-১ গোলে হেরেছিল বায়ার্ন। ইউনাইটেডের সমর্থকদের কাছে সেই স্মৃতি আজও অমলিন।
বেঞ্চ থেকে মাঠে নেমে প্রতিপক্ষকে চমকে দিতে জুড়ি ছিল না সোলসকায়েরের। ৯০ মিনিট শেষে অতিরিক্ত সময়কে ‘ফার্গি টাইম’ বানিয়ে নিয়েছিলেন এই নরওয়েজিয়ান। বর্তমান ইউনাইটেডেও তার আগমন ‘বদলি’ হিসেবেই। ১৭ ম্যাচ শেষে ষষ্ঠ অবস্থানে থেকে কোচ হারিয়ে প্রিয় দলের টালমাটাল অবস্থায় হাল ধরেছেন সোলসকায়েরের। গত ২৭ বছরে যে অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়নি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে, সেই বাজে শুরু থেকে দলকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জটা নিতে হবে সোলসকায়েরকে।
বর্তমান ইউনাইটেড স্কোয়াডে আগাগোড়াই সমস্যা। মরিনহো কোচ থাকতে বোর্ডের কাছে নতুন খেলোয়াড় চেয়েছিলেন। প্রয়োজন ছিল একজন ভালো সেন্টার ব্যাক, রাইটব্যাক এবং রাইট মিডফিল্ডার। পর্তুগিজের পছন্দের তালিকায় ছিল বিশ্বকাপে অসাধারণ খেলা ইভান পেরিসিচ, আন্তে রেবিচ আর মিলিঙ্কোভিচ স্যাভিচের যে কোনো একজন। ডিফেন্ডারদের মধ্যে ডিয়েগো গোডিনের ‘বাই আউট ক্লজ’ খুব একটা বেশি ছিল না। উরুগুয়ে ডিফেন্ডারকে কিনতেও চেয়েছিলেন মরিনহো। গোডিনকে না পাওয়া গেলে টবি অল্ডারউইরেল্ড কিংবা হ্যারি ম্যাগুইয়ারকে চেয়েছিলেন মরিনহো।
কিন্তু ইউনাইটেডের নির্বাহী সহসভাপতি এড উডওয়ার্ড মরিনহোর কথা শোনেননি। তিনি কিনে আনেন ফ্রেডকে। শাখতার থেকে ৫০ মিলিয়নে কেনা ফ্রেডকে কোনোভাবেই পছন্দ ছিল না মরিনহোর। তবে পোর্তো থেকে কেনা তরুণ ফুলব্যাক ডিয়োগো ডালটকে পছন্দ ছিল মরিনহোর। আসলে গত গ্রীষ্মকালীন দলবদলের মৌসুম ছিল ইউনাইটেডের জন্য খুবই বাজে। বোর্ডের কর্মকাণ্ডে বিরক্তও ছিলেন মরিনহো। ফলে কোচিংয়েও এর প্রভাব পড়ে। যদিও ছাঁটাই হওয়ার আগে মরিনহো পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন, দলবদলের মৌসুমে কি কি পরিবর্তন আনবেন। বলা যেতে পারে বর্তমান দলে ঠিক সেই পরিবর্তনগুলোই দরকার।
ইউনাইটেডকে খোলনলচে পাল্টে ফেলার কাজ শুরু করেছেন সোলসকায়ের। কোচিং ক্যারিয়ারের শুরু থেকে ৪-২-৩-১ ফরমেশন পছন্দ তাঁর। তবে শক্তিশালী দলগুলোর বিপক্ষে সাধারণত ৪-১-৪-১ ফরমেশন ব্যবহার করেন। তার খেলার ধরনে মূল শক্তি হলো প্রেসিং এবং কাউন্টার প্রেসিং। প্রেসিংয়ের সময় স্ট্রাইকার থেকে ডিফেন্ডার সবাই চাপ বিস্তার করবে। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ পাস দিতে হবে প্রতিপক্ষ দলকে। এ জন্য পরিবর্তন দরকার রক্ষণভাগে। ফিল জোনস, ক্রিস স্মলিংয়ের রক্ষণ দিয়ে আর যাই হোক চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলা যায় না, মরিনহো বুঝতে পেরেছিলেন। ডানে ড্যালোট ও ইয়ং দিয়ে চললেও সেন্টার ব্যাকে নতুন খেলোয়াড় লাগবেই। সোলসকায়েরের প্রথম লক্ষ্য হবে একজন ভালো ডিফেন্ডার আনা।
সে ক্ষেত্রে লক্ষ্য হতে পারেন টটেনহামের টবি অল্ডারউইরেল্ড কিংবা লেস্টার সিটির হ্যারি ম্যাগুইয়ার। তাদের যে কোন একজনকে কিনতে বেশ খরচাই হবে ইউনাইটেডের। তবে পেপেকে কিনতে পারেন কোনো খরচ ছাড়াই। বেসিকতাসের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে পেপে এখন ফ্রি এজেন্ট। বয়স হলেও রক্ষণে দৃঢ়তা হারাননি পেপে। দলের এমন অবস্থায় প্রয়োজন সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো একজন খেলোয়াড়, যা হতে পারেন পেপে। তবে এতটা ‘রাফ’ খেলোয়াড় সোলসকায়ের দলে আনবেন কি না, সেটি প্রশ্ন। নাপোলি থেকে কালিদু কোলাবালিকেও আনার চিন্তা ভাবনা আছে ইউনাইটেডের।
জানুয়ারিতে আরও খেলোয়াড় লাগবে ইউনাইটেডের। চুক্তি নবায়নও করতে হবে অনেকের সঙ্গে। দল সাজাতে ৫০ মিলিয়ন ইউরো পাবেন সোলসকায়ের। ৪-২-৩-১ ফরমেশনে নতুন রাইট মিডফিল্ডার আনতে চাইবেন সোলসকায়ের। লিনগার্ডকে মাঝে এনে তাঁর জায়গায় জুভেন্টাসের ডগলাস কস্তাকে কিনতে চান তিনি। কস্তাকে এনে দলকে আরেকটু আক্রমণাত্মক করার চিন্তা আছে সোলসকায়েরের। জুভেন্টাসের সঙ্গে তেমন ভালো সম্পর্ক নেই কস্তার। তাই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড হতে পারে কস্তার নতুন ঠিকানা।
তবে প্রাথমিক ধাক্কাটা সামলে নিয়েছেন সোলসকায়ের। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের পর এই প্রথম তাঁর অধীনে কোনো ম্যাচে পাঁচ গোল দিতে পেরেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে মনোমালিন্য যে নেই, তা বোঝা গিয়েছে কার্ডিফের বিপক্ষে ম্যাচেই। সোলসকায়েরের প্রয়োজন শুধু খেলোয়াড়দের মনোবল উজ্জীবিত করা। যে ড্রেসিংরুম হারিয়েছিলেন মরিনহো, আপাতত সেই ড্রেসিংরুম উদ্ধার করতে পারলেই চলবে। বাকিটা সামলে দল সাজাতে খুব একটা কষ্ট হবে না ফার্গুসনের শিষ্য সোলসকায়েরের।