>নোভগোরাদে পানামাকে ৬–১ গোলে হারিয়েছে ইংল্যান্ড। হ্যাটট্রিক করেছেন কেন। দুটি গোল এসেছে জন স্টোনসের কাছ থেকে। বাকি গোলটা করেছেন জেসি লিনগার্ড। পানামার একটি গোল শোধ করেছেন ফিলিপে বালয়।
পানামার মুখে অবশেষে হাসি ফুটল ৭৮ মিনিটে। এই ম্যাচে তো অবশ্যই, বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো প্রতিপক্ষের জালে বল জড়াতে পারল—এতেই অনেক খুশি পানামা। কিন্তু তার আগে নোভগোরাদে যা হলো, শুধু পানামাই নয়, ইংলিশদেরও মনে থাকবে অনেক দিন। পার্থক্য হচ্ছে, এক দলের যেটি দুঃস্মৃতি, অন্য দলের সেটিই সুখস্মৃতি। সোজা কথায়, ৬-১ গোলে পানামাকে বিধ্বস্ত করল ইংল্যান্ড।
গুঁড়িয়ে দিয়ে পানামাকে যেন বলতে চাইল, কাদের সঙ্গে খেলছ, বুঝে খেলো! পায়ের এই খেলায় যা দাপট দেখানোর, আমরাই দেখাব! এ নিয়ে ১৫ বারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে এসেছে ইংল্যান্ড। একবার হয়েছে চ্যাম্পিয়ন। পানামা সেখানে প্রথমবারের মতো। দুই দলের ফুটবল ইতিহাস-ঐতিহ্য, শক্তিমত্তায় যে যোজন যোজন পার্থক্য, শুধু কাগজ-কলমে নয়, ইংল্যান্ড মাঠেও সেটি ভালোভাবে তুলে ধরল। শুধু কি তাই? ইংল্যান্ড ফুটবলের আবিষ্কর্তা দেশ! সেখানে পানামা? ফুঁ!
কে কোন ছকে খেলেছেন; আক্রমণ, মাঝমাঠ, রক্ষণে কে কেমন খেলেছেন, ম্যাচে বল দখলে কারা এগিয়ে, কারা পিছিয়ে, কে কত পাস দিয়েছেন, কতটা জায়গা নিয়েছেন, কার পাস কতটা নিখুঁত—ম্যাচের স্কোরলাইনে চোখ রাখলে এসব আর জানার আগ্রহ থাকার কথা নয়। বরং পানামার জালে ইংল্যান্ডে কীভাবে গোলগুলো দিল, সেটিই জানা দরকার। ৮ মিনিটে কিরেন ট্রিপিয়ারের কর্নারে দারুণ এক হেডে এগিয়ে নেন জন স্টোনস।
পানামাকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার এই অভিযানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন ইংলিশ অধিনায়ক হ্যারি কেন। তাঁর হ্যাটট্রিকের প্রথম গোলটি এল ২২ মিনিটে, পেনাল্টি থেকে। ৩৬ মিনিটে অ্যাশলি ইয়ং-রাহিম স্টার্লিয়ের অসাধারণ বিল্ড-আপের ফসল তুললেন জেসি লিনগার্ড। বক্সের বাইরে থেকে ৩৫ গজি লক্ষ্যভেদী এক শট। ৪০ মিনিটে ইংল্যান্ডের চতুর্থ গোলটা এল তিন মাথা ছুঁয়ে। তিন নম্বর মাথাটা ছিল স্টোনসের, ইংলিশ ডিফেন্ডারের জোড়া গোলেও থামেনি ইংল্যান্ড। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে কেনকে ফেলে দিলে পেনাল্টি পায় ইংলিশরা। প্রথমটি যেভাবে মেরেছিলেন, ঠিক একইভাবে দ্বিতীয়টিও মারলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক। পেনাল্টি থেকেই দুটি গোল করে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও রুমেলু লুকাকুর সমান ৪টি হয়ে গেল কেনের। প্রথমার্ধেই যে ম্যাচের স্কোরলাইন ৫-০, বিরতিতে শুধু একটাই হিসাব-নিকাশ চলছিল, বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গোল খাওয়ার রেকর্ডটা না পানামার হয়!
সে তুলনায় দ্বিতীয়ার্ধে অনেক ভালোই খেলেছে পানামা। খেয়েছে একটি গোল, দিয়েছেও একটি। ৬২ মিনিটে পানামা যে গোলটি খেয়েছে, সেটিতেই হ্যাটট্রিক পূরণ হয়েছে কেনের। অবশ্য এই গোলে কেনের যতটা না কৃতিত্ব, তার চেয়ে বেশি রুবেন লোফটাস-চিকের। ইংলিশ মিডফিল্ডারের শটটা কীভাবে যেন কেনের পা ছুঁয়ে ঢেকে গেল জালে। এমন ‘ফাউ’ গোল পেয়ে কেনের মধ্যেও বাড়তি উচ্ছ্বাস দেখা গেল না! তবে তাঁর খুশি হওয়ার কথা এই ভেবে, রাশিয়া বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত তিনিই সর্বোচ্চ গোলদাতা।
অনেক হয়েছে, এবার বিশ্রাম দেওয়া যায়—এ ভাবনায় ৬৩ মিনিটে কেনকে উঠিয়ে নিয়ে নামানো হলো আরেক ফরোয়ার্ড জেমি ভার্ডিকে। ইংল্যান্ড অবশ্য আর গোল দিতে পারেনি। নাকি আর গোল দিতে চায়নি? এ সুযোগে অপেক্ষাকৃত দুর্বল আক্রমণ নিয়েই মাঝেমধ্যে অবশ্য ইংলিশদের রক্ষণ কাঁপিয়েছে বিশ্বকাপের নবীন দল পানামা। অবশেষে ৭৮ মিনিটে রিকার্ডো আভিলার ফ্রি-কিকে বালয়ের ফিনিশিংয়ে একটা গোল শোধের সুযোগ পায় পানামা।
লক্ষ্যে ৭ শটের ৬টিতেই জাল খুঁজে পেয়েছে ইংল্যান্ড। দাপুটে ফুটবলে পানামাকে যেন ইংলিশরা বলতে চেয়েছে, খেলাটা পায়ের হলেও আমাদের বিপক্ষে ‘পা উঁচু’ করা যাবে না (পড়ুন, মাথা উঁচু করে খেলা যাবে না)!