নিজেদের মাঠে সাউদাম্পটনকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে লিভারপুল। লিগে ২৫ ম্যাচে ২৪ জয় ও ১ ড্র নিয়ে ৭৩ পয়েন্ট হলো লিভারপুলের, দুইয়ে থাকা ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে এই মুহূর্তে এগিয়ে ২২ পয়েন্টে!
সাউদাম্পটন ম্যাচ শেষে ভাবতে পারে—ভাগ্যিস, লিভারপুল পুরো ম্যাচে দাপুটে ছিল না! দাপুটে না থেকেই যদি প্রতিপক্ষকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দেওয়া যায়, তাহলে দাপুটে থাকলে কী হতো?
প্রিমিয়ার লিগে এই মৌসুমে অবস্থাটাই এমন, ম্যাচ শেষে লিভারপুলের কীর্তিগাথার বর্ণনাই হয়ে গেছে রুটিন। একেকটা ম্যাচ যায়, ইয়ুর্গেন ক্লপের দুর্দমনীয় দলটা নতুন কোনো রেকর্ড-টেকর্ড গড়ে বসে। নিজেদের মাঠে আজ লিগে সাউদাম্পটনকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে লিভারপুল। তাতে নতুন এমন এক কীর্তি হয়েছে, যা প্রিমিয়ার লিগ যুগে তো নয়ই, আগেও কখনো দেখেনি ইংলিশ ফুটবলের সর্বোচ্চ স্তর।
এ জয়ের পর লিগে ২৫ ম্যাচে ২৪ ও ১ ড্র নিয়ে ৭৩ পয়েন্ট হলো লিভারপুলের, দুইয়ে থাকা ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে ১ ম্যাচ বেশি খেলে অলরেডরা এগিয়ে ২২ পয়েন্টে! কাল রাতে হোসে মরিনহোর টটেনহামের মাঠে খেলবে পেপ গার্দিওলার সিটি, লিভারপুলের সঙ্গে ব্যবধানটা কমাতে পারবে তা তখন জানা যাবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত যা হিসেব, তাতেই অনন্য কীর্তি লিভারপুলের। আগের প্রথম বিভাগের হিসেব করুন বা এখনকার প্রিমিয়ার লিগ—ইংলিশ ফুটবলের সর্বোচ্চ স্তরে কোনো নির্দিষ্ট দিন শেষে লিগশীর্ষে থাকা আর কোনো দল এর আগে পয়েন্ট তালিকার দ্বিতীয় দলের চেয়ে ২২ পয়েন্টে এগিয়ে ছিল না।
আরেকটা রেকর্ডে নিজেদের পেছনেই ছুটছে লিভারপুল। এ জয় নিয়ে নিজেদের মাঠ অ্যানফিল্ডে লিগে সর্বশেষ ২০টি ম্যাচই জিতেছে লিভারপুল। ইংলিশ ফুটবলের শীর্ষ স্তরে নিজেদের মাঠে এর চেয়ে বেশি টানা জয় শুধু একটা দলেরই ছিল। সেটিও লিভারপুলই—১৯৭২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে। যখন দলটার কোচ ছিলেন কিংবদন্তি বিল শ্যাঙ্কলি। এ তো ঘরের মাঠে টানা জয়, ঘরের ও পরের মাঠ—সব মিলিয়ে টানা জয়ের রেকর্ডেও ম্যানচেস্টার সিটিকে পেরোতে আর মাত্র তিনটি জয় লাগবে লিভারপুলের। মজার ব্যাপার কী, এই কদিন আগেও সিটির টানা ১৮ জয়ের সেই রেকর্ডটা ছোঁয়ার কাছে চলে এসেছিল লিভারপুল। এই মৌসুমেই অক্টোবরে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মাঠে ১-১ গোলে ড্র করে তখন আর ছোঁয়া হয়নি রেকর্ডটা। তার মাত্র তিন মাসের মাথায়ই আবার রেকর্ডটার খুব কাছে লিভারপুল—ভাবা যায়!
তবে আজকের ম্যাচে স্কোরলাইন যেমনটা বলছে, লিভারপুলের জয় অতটা অনায়াস ছিল না। গোলশূন্য প্রথমার্ধে তো লিভারপুলই পিছিয়ে পড়লেও অবাক হওয়ার কিছু থাকত না! ওই ৪৫ মিনিটে সাউদাম্পটন ১০টি শট নিয়েছে, ২০১৪ সালের নভেম্বরে চেলসির বিপক্ষে ম্যাচের পর অ্যানফিল্ডে কোনো লিগ ম্যাচে প্রতিপক্ষের এত শট হজম করতে হলো লিভারপুলকে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে অন্য লিভারপুল।
৪৭ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে অ্যালেক্স-অক্সলেড চেম্বারলেইনের দারুণ শটে এগিয়ে যাওয়া। যদিও সেই গোল নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে সাউদাম্পটন। যে পাল্টা আক্রমণ থেকে চেম্বারলেইনের গোল এসেছে, সেটির সূচনাতে যে সাউদাম্পটনের পেনাল্টি আবেদন! লিভারপুল বক্সে লিভারপুলেরই সাবেক ও বর্তমান সাউদাম্পটন স্ট্রাইকার ড্যানি ইংসের পড়ে যাওয়াটা অবশ্য আলতো ছোঁয়াতেই, রেফারি তা এড়িয়ে যান। পাল্টা আক্রমণে উল্টো প্রান্তে চেম্বারলেইনের গোল। ভিএআর দেখেও ইংসের দাবির পক্ষে রায় দেয়নি।
ওই গোলের পরই দেখা মিলল ভয়ংকর শিকারি লিভারপুলের। ৬০ মিনিটে দারুণ আক্রমণের পর জর্ডান হেন্ডারসনের গোল, বাকিটুকুতে মোহামেদ সালাহর পালা। ৭১ মিনিটে চোখধাঁধানো ফিনিশিংয়ে তাঁর প্রথম গোল, ৯০ মিনিটে দ্বিতীয়টি। দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য আরও দু-তিনটি গোলও পেতে পারত লিভারপুল।