ইতিহাসের সামনে জোসে মরিনিও। এবারই সৃষ্টি হয়েছে ইউরোপা কনফারেন্স লিগ। এএস রোমাকে নিয়ে এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে চলে গেছেন মরিনিও। ২৫ মে আলবেনিয়ার রাজধানী তিরানায় ফেইনুর্দের বিপক্ষে জিতলেই প্রথম কোনো কোচ হিসেবে ইউরোপের তিনটি মহাদেশীয় ট্রফিজয়ী কোচ হবেন মরিনিও। চ্যাম্পিয়নস লিগ ও ইউরোপা লিগ আগেই জিতে নেওয়া এই কোচের জন্য অনন্য এক সুযোগ এটি। ওদিকে তাঁর ক্লাব রোমাও গত ৫০ বছরে ইউরোপে কোনো শিরোপার দেখা পায়নি। ক্লাব ও কোচ—দুজনের জন্য মহাগুরুত্বপূর্ণ এক ম্যাচ এটি।
সে ম্যাচের আগে জোসে মরিনিওর বিশেষ এক সাক্ষাৎকার ছাপিয়েছে স্কাই স্পোর্টস। সেখানে রোমাকে নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন পর্তুগিজ কোচ। কথা বলেছেন নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে। তবে আলোচনার বড় একটা অংশজুড়ে ছিল চেলসি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও টটেনহাম। ইংল্যান্ডে যে তিন ক্লাবের কোচ ছিলেন, কথা বলেছেন তিন ক্লাবকে নিয়েই। যে কথোপকথনের সারসংক্ষেপ, এখনো তিন ক্লাবের প্রতি টান অনুভব করেন মরিনিও।
চেলসির প্রতি মরিনিওর ভালোবাসার কথা সবার জানা। রোমান আব্রামোভিচের অধীনে চেলসির বদলে যাওয়া মরিনিওর হাত ধরতেই। মাঝে ইন্টার মিলান ও রিয়াল মাদ্রিদের কোচিং করিয়ে আবার চেলসিতে ফিরেছিলেন, আরও একবার জিতেছেন প্রিমিয়ার লিগ। এই মৌসুমে কঠিন সময় কাটাচ্ছে চেলসি। মালিকানাসংক্রান্ত জটিলতায় খেলোয়াড়দের চুক্তি নবায়ন নিয়ে ঝামেলায় পড়েছিল ক্লাবটি। ক্লাবের আর্থিক খরচে রাশ টানতে হয়েছে। এর ফল মাঠের পারফরম্যান্সেও পড়েছে।
মরিনিওর ধারণা, শিগগিরই সব ঝামেলা কাটিয়ে উঠবে চেলসি, ‘কঠিন সময় যাচ্ছে, সেটা ফুটবলের মানেও টের পাওয়া যাচ্ছে। কারণ, ওদের যে দারুণ পারফরম্যান্স ও স্থিতিশীলতা, তার অভাব দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এটা শুধু এই সময়কার ব্যাপার। আমার প্রিয় চেলসি কার কেনা উচিত, এ ব্যাপারে আমার মত জানতে চাইলে আমি একজনের নাম বলতে পারি কিন্তু আমি মুখ বন্ধ রাখছি। আমি জানি, এই ক্লাব এমন উচ্চতায় চলে গেছে, কে এই ক্লাবের সঙ্গে আছে, সেটা ব্যাপার না। চেলসি চেলসিই থাকবে, সব সময়। আমার বাসাও স্টেডিয়াম থেকে ২০০ মিটার দূরে থাকে। আমি সব সময় ক্লাবের আনন্দ ও সাফল্যের শব্দ শুনতে চাই এবং আমি নিশ্চিত সেটাই হবে।’
চেলসির পরই ইংল্যান্ডে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের দায়িত্ব পেয়েছিলেন মরিনিও। এক মৌসুমে তিনটি শিরোপাও জিতেছেন সেখানে। কিন্তু ইউনাইটেডের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের শেষটা মধুর ছিল না। তাঁকে ছাঁটাই করার পর এখন পর্যন্ত কোনো শিরোপার দেখা পায়নি ইউনাইটেড। রোমাতে ইউনাইটেডে তাঁর অধীনে খেলা দুজন—হেনরিক মেখিতারিয়ান ও ক্রিস স্মলিংকে আবার রোমাতে পেয়েছেন।
এ দুজনের প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ইউনাইটেডের শিরোপা–খরার কথাও হালকা সুরে মনে করিয়ে দিয়েছেন মরিনিও, ‘আমি ও মেখিতারিয়ান একসঙ্গে তিনটি শিরোপা জিতেছি ইউনাইটেডে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ইউনাইটেডের শেষ তিন শিরোপা। আমি “দুর্ভাগ্যজনকভাবে” বলছি। কারণ, আমি এই ক্লাবকে খুব খুব পছন্দ করি এবং ক্লাবের ভালো চাই।’
সে তুলনায় টটেনহামের সঙ্গে সম্পর্কটা তিক্ততায় ভরে থাকার কথা মরিনিওর। ইউনাইটেডের হয়ে জেতা শিরোপাগুলোই মরিনিওর সর্বশেষ শিরোপা। অথচ টটেনহামকে লিগ কাপের ফাইনালে নিয়ে গিয়েছিলেন মরিনিও। কিন্তু ফাইনালের আগে তাঁকে ছাঁটাই করেছিল ক্লাব। ফলে শিরোপা জেতার চেষ্টাটুকুও করতে পারেননি। এ নিয়ে এখনো দুঃখ করেন মরিনিও। লেস্টারকে হারিয়ে কনফারেন্স লিগের ফাইনালে ওঠার পর খোঁচা দিয়ে সেটা মনে করিয়েও দিয়েছিলেন।
স্কাই স্পোর্টসের সঙ্গে কথোপকথনে আবার সে প্রসঙ্গ এসেছে। এ নিয়ে দুঃখটা কত তাজা, সেটা আবার বুঝিয়ে দিয়েছেন, ‘ক্যারিয়ার ও জীবনে আমি এখন পরিণত। এখন আর বাজে অনুভূতিকে জায়গা দিই না। যেটা যেমন, সেভাবেই গ্রহণ করে নিই। হ্যাঁ, অনেক কষ্ট পেয়েছি। সংবাদ সম্মেলনে কিছু ইংলিশ সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলার সময় মজা করেছি। কনফারেন্স লিগের ফাইনালে ওঠার পর বারবার একই মজা করেছি, যেন এবার যেন ছাঁটাই না হই। কারণ, এটা সব কোচের সঙ্গে হয় না। আমি বলতে পারছি না আমি সেই সব ভাগ্যবানদের একজন, কারণ আমার সঙ্গে এটা হয়েছে।’
তবু টটেনহামের প্রতি শুভকামনা জানিয়েছেন মরিনিও, ‘আমার কোনো অনুশোচনা নেই, ওদের জন্য কোনো খারাপ চিন্তাও মনে রাখিনি। টটেনহামে অনেক ভালো মানুষ আছে এবং ওদের সবাইকে শুভকামনা। মিস্টার লেভিকেও (ক্লাব সভাপতি)। তবে আমার মতো ক্যারিয়ারের একজন যার এমন ইতিহাস আছে, তার সঙ্গে এমন কিছু ঘটা অস্বাভাবিক। তবে শেষ পর্যন্ত এটা আমার জন্য রোমের দরজা খুলে দিয়েছে এবং রোমে আমি খুব আনন্দে আছি।’