রেফারি শেষ বাঁশি বাজাতেই কলম্বিয়ান ফুটবলারদের সে কী উল্লাস! তাঁদের উদ্যাপনই বলে দিচ্ছিল, এটা নিছক একটা জয় নয়। এ জয় ক্ষতের প্রলেপ দেওয়ার। প্রতিশোধেরও নয় কি?
গত জুলাইয়ে কোপা আমেরিকা ফাইনালে এই আর্জেন্টিনার কাছে হেরেই তো ২৩ বছর পর শিরোপা জয়ের স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিতে হয়েছিল কলম্বিয়াকে। সঙ্গে নিজেদের ইতিহাসে টানা ২৮ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ডেও ছেদ পড়েছিল।
দুই মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে আজ ঘরের মাঠে সেই আর্জেন্টিনাকে পেয়ে মধুর প্রতিশোধ নিল কলম্বিয়া। বারানকিয়ায় ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে লিওনেল স্কালোনির দলকে ২–১ গোলে হারিয়ে দিল স্বাগতিকেরা। এ হারে টানা ১২ ম্যাচের অজেয় যাত্রা থামল বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের।
এ বছর এটিই আর্জেন্টিনার প্রথম হার। দলটি সর্বশেষ হেরেছিল গত বছরের নভেম্বরে উরুগুয়ের বিপক্ষে। সেটিও ছিল বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ।
আরেকটি চমকপ্রদ ব্যাপার হলো আর্জেন্টিনা সর্বশেষ দুটি ম্যাচই হারল আর্জেন্টাইন কোচদের দলের কাছে! উরুগুয়ের বর্তমান কোচ মার্সেলো বিয়েলসা আর কলম্বিয়ার বর্তমান কোচ নেস্তর লরেনৎসো দুজনই আর্জেন্টাইন।
কোপার ফাইনালে একরাশ হতাশা নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন কলম্বিয়ান অধিনায়ক হামেস রদ্রিগেজ। আসরের সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি পেলেও দলকে শিরোপা জেতাতে না পারায় সেদিন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছিলেনও তিনি। সেই রদ্রিগেজই আজকের ম্যাচে ব্যবধান গড়ে দিয়েছেন। কলম্বিয়ার দুটি গোলেই তাঁর অবদান।
এস্তাদিও মেত্রোপলিতানো রবের্তো মেলেনদেজে আজ ম্যাচের ২৫ মিনিটে ৪৭ হাজার ছুঁই ছুঁই দর্শকদের আনন্দে ভাসান ইয়েরসন মোসকেরা। কর্নার থেকে রদ্রিগেজ বক্সের জটলায় বল না পাঠিয়ে জন আরিয়াসের সঙ্গে দেওয়া–নেওয়া করেন। এরপর বাঁ প্রান্ত থেকে মোসকেরার উদ্দেশে উঁচুতে কিক নেন।
মোসকেরা বেশ খানিকটা লাফিয়ে উঠে দুর্দান্ত এক হেড নিলে বল আশ্রয় নেয় আর্জেন্টিনার জালে। তা চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না এমিলিয়ানো মার্তিনেজের। চোটের সঙ্গে লড়তে থাকা লিওনেল মেসিবিহীন আর্জেন্টিনার বিপক্ষে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় কলম্বিয়া।
তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ৪৮ মিনিটে রদ্রিগেজেই ভুল পাস বাড়ালে বল পেয়ে যান নিকোলাস গঞ্জালেজ। এরপর কলম্বিয়ান গোলকিপার কামিলো ভারগাসকে ফাঁকি দিয়ে সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন গঞ্জালেজ।
আর্জেন্টিনার সমতায় ফেরার আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ১২ মিনিট পরেই পেনাল্টি থেকে গোল করে কলম্বিয়াকে এগিয়ে দেন রদ্রিগেজ। যদিও কলম্বিয়ার এই পেনাল্টি পাওয়া নিয়ে দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়। মেসির অনুপস্থিতিতে আর্জেন্টিনাকে নেতৃত্ব দিতে নামা নিকোলাস ওতামেন্দি নিজেদের বক্সে দানিয়েল মুনোজকে চ্যালেঞ্জ জানালে তিনি পড়ে যান। কয়েক মিনিট সময় নিয়ে ভিএআর মনিটর দেখার পর পেনাল্টির বাঁশি বাজান চিলিয়ান রেফারি পিয়েরো মাজা।
পেনাল্টি ঠেকানোয় বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠা এমিলিয়ানো মার্তিনেজ এবার আর্জেন্টিনাকে রক্ষা করতে পারেননি। তাঁকে বিপরীত পাশে ঝাঁপিয়ে পড়তে বাধ্য করে কলম্বিয়াকে এগিয়ে দেন রদ্রিগেজ।
শেষ দিকে ব্যবধান আরও বাড়ানোর সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল কলম্বিয়া। কিন্তু আর্জেন্টিনার বক্সে অরক্ষিত থাকার পরও গোল করতে ব্যর্থ হন স্ট্রাইকার জন দুরান। তাতে কলম্বিয়ার কোনো ক্ষতি হয়নি। কিছুক্ষণ পরেই যে তারা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাকে হারানোর উৎসবে মেতেছে।