কেইন, লো সেলসো, সন-স্পার্সের জয়ের তিন কারিগর।
কেইন, লো সেলসো, সন-স্পার্সের জয়ের তিন কারিগর।

আরেকটা ‘মরিনিও মাস্টারক্লাস’ দেখলেন গার্দিওলা

এক কোচ কিছুদিন আগেই বর্তমান ক্লাবে এক বছর থাকার পূর্তি উদ্‌যাপন করলেন। আরেক কোচ উদ্‌যাপন করলেন বর্তমান ক্লাবের সঙ্গে নতুন চুক্তি সই করার উপলক্ষ। তবে গত রাতে ম্যাচ শেষে হাসিটা চওড়া হলো শুধু একজনেরই।

ম্যাচটা জিতলেই ২০১৪ সালের পর প্রথমবারের মতো লিগ টেবিলের শীর্ষে ওঠা যাবে, জানতেন জোসে মরিনিও। প্রতিপক্ষ ছিল সেই কোচের দল, যে কোচের সঙ্গে তাঁর ‘দ্বৈরথ’ এখন ফুটবলীয় রূপকথার অংশ। রাতটা শেষমেশ গার্দিওলার নয়, মরিনিওরই হয়ে থাকল। মরিনিওর স্পার্স গার্দিওলার সিটিকে হারিয়ে ২০১৪ সালের পর প্রথমবার পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে তো উঠলই, মরিনিওকেও এনে দিল ‘প্রিয় শত্রু’কে হারানোর সুস্বাদ।

সন শুরুতেই এগিয়ে নিয়েছিলেন টটেনহামকে।

প্রথম থেকেই অনুমান করা গিয়েছিল দুই দল কীভাবে খেলতে পারে। পেপ গার্দিওলার পজেশনভিত্তিক ফুটবলের বিপক্ষে জোসে মরিনিও নামবেন তাঁর বিখ্যাত প্রতি–আক্রমণভিত্তিক কৌশল নিয়ে। যে কৌশলটা এই মৌসুমে এই পর্যন্ত মরিনিওকে বেশ সফল দলের মূল স্ট্রাইকার হ্যারি কেইন ও উইঙ্গার হিউং মিন সনের কল্যাণে। ম্যাচের শুরু থেকেও সেটাই দেখা গেল। পেপ গার্দিওলার শিষ্যরা যেখানে বল দখলের লড়াইয়ে ব্যস্ত ছিলেন, মরিনহোর শিষ্যরা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছিলেন কখন হুট করে প্রতি–আক্রমণে উঠে সিটিকে রক্ষণে হানা দেওয়া যায়।

প্রথম চার মিনিটের মধ্যেই এই কৌশল অনুসরণ করার সুফল পেয়ে যায় টটেনহাম। হইবিয়ার ফ্রি কিক থেকে বল পেয়ে যান ফরাসি মিডফিল্ডার তাঙ্গি এনদোম্বেলে। বল বেশিক্ষণ পায়ে রাখেননি। সঙ্গে সঙ্গে পাস দিয়ে দেন সামনে থাকা সনের উদ্দেশ্যে। সনকে কে মার্ক করবেন, রুবেন দিয়াস, কাইল ওয়াকার না জোয়াও ক্যানসেলো—এই সিদ্ধান্তহীনতায় শট নেওয়ার পর্যাপ্ত সময় পেয়ে যান কোরিয়ান উইঙ্গার। গোলরক্ষক এদেরসনের হাতের নিচ দিয়ে গোল করতে একটুও সমস্যা হয়নি তাঁর। প্রথমার্ধজুড়েই গার্দিওলার দলের পজেশনভিত্তিক আধিপত্য দেখা গেছে। কিন্তু গ্যাব্রিয়েল জেসুস, বের্নার্দো সিলভা কিংবা ফেরান তোরেসরা গোলমুখ খুলতেই পারছিলেন না। মোটামুটি অকার্যকর ছিলেন রিয়াদ মাহরেজ কিংবা কেভিন ডি ব্রুইনার মতো তারকারাও। প্রথমার্ধ শেষের কিছুক্ষণ আগে ক্রমাগত বল পজেশনে রাখার সুফল পেয়ে যায় সিটি। গ্যাব্রিয়েল জেসুসের সহায়তায় ফরাসি ডিফেন্ডার এমেরিক লাপোর্ত গোল পেয়ে গেছেন মনে হলেও, বাদ সাধে ভিএআর। দেখা যায়, গোল সহায়তা করার আগে বল জেসুসের হাতে লেগেছিল। ফলাফল—বাতিল হয়ে যায় সেই গোল। যদিও বাতিল হওয়া গোলটা নিয়ে পরে অনেকক্ষণ ধরে রেফারির সঙ্গে রদ্রি ও লাপোর্তদের কথাবার্তা বলতে দেখা গেছে।

নেমেই ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে গোল পেয়েছেন লো সেলসো।

দ্বিতীয়ার্ধে ৬৫ মিনিটে এনদোম্বেলের জায়গায় মাঠে নামানো হয় আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার জিওভান্নি লো সেলসোকে। এই তারকা মাঠে নামার ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে দলের ব্যবধান বাড়িয়ে দ্বিগুণ করে ফেলেন। রক্ষণভাগ থেকে বল সফলভাবে ক্লিয়ার কোর পর তা চলে আসে মিডফিল্ডে থাকা কেইনের কাছে। একটু দৌড়ে কেইন বলটা দেন বাঁ দিকে দৌড়ে এগিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে যাওয়া লো সেলসোর কাছে। ডি ব্রুইনা শেষ মুহূর্তে ট্যাকল করতে গিয়েও সফল হননি। ফলে ক্যারিয়ারের প্রথম প্রিমিয়ার লিগ গোল পেয়ে যান এই আর্জেন্টাইন তারকা। কিছুদিন আগে পেরু ও প্যারাগুয়ের বিপক্ষেও দুর্দান্ত খেলেছিলেন এই মিডফিল্ডার। বেশ ছন্দেই আছেন, বোঝা যাচ্ছে।

মরিনিও-গার্দিওলা লড়াইয়ের এই অধ্যায়টা মরিনিও নিজের নামেই করে নিলেন।

৯ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে টটেনহাম। ওদিকে ৮ ম্যাচে মাত্র ১২ পয়েন্ট নিয়ে ১০ নম্বরে আছে সিটি। গার্দিওলা তাঁর ক্যারিয়ারে কখনো কোনো মৌসুমের শুরু এত বাজেভাবে করেননি। যত দ্রুত সম্ভব, এই বাজে অবস্থার উন্নতি চাইবেন এই স্প্যানিশ কোচ। না হয় ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি বৃদ্ধির ব্যাপারটা যে তিতকুটেই ঠেকবে!