মৌসুমের শুরুতে পিএসজির দলবদলকে ইতিহাসের সেরা দলবদল বলা হচ্ছিল। একই দলবদলে বর্ষসেরা গোলকিপার জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মা ও ব্যালন ডি’অর বিজয়ী লিওনেল মেসিকে পেয়েছে তারা। ফুলব্যাক হিসেবে যোগ দেন ইউরোপের অন্যতম সেরা দুই প্রতিভা আশরাফ হাকিমি ও নুনো মেন্দেজ। চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে না পারার আক্ষেপ দলটির। এই শিরোপা জয়ের অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে দিতে লিভারপুল থেকে এসেছেন জর্জিনিও ভাইনালদম, রিয়াল মাদ্রিদ থেকে সের্হিও রামোস।
চাপের মুহূর্তে ভেঙে পড়ার দোষ আছে পিএসজির। তিন তরুণ প্রতিভার সঙ্গে তিনটি জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব করা তিন অভিজ্ঞকে দলে টেনে সে ঘাটতি পূরণ করতে চেয়েছিল দলটি। সে তিনজনই মৌসুম শেষ হওয়ার আগে সমর্থকদের দুয়ো শুনেছেন! এর মধ্যে রামোসের অবস্থাই সবচেয়ে বাজে। চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতানোর জন্য যাকে আনা হয়েছে, তাঁকে সে টুর্নামেন্টের এক ম্যাচেও খেলাতে পারেনি পিএসজি। প্রথম মৌসুমই তাঁর পিএসজিতে সময় শেষ বলে ভাবা হচ্ছে। রামোস অবশ্য হাল ছাড়ছেন না। শীর্ষ পর্যায়ে আরও পাঁচ বছর খেলার ইচ্ছা রিয়ালের হয়ে চারটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা সাবেক অধিনায়কের।
বয়স ৩৪ হয়ে গেছে। তাই রিয়াল মাদ্রিদ তাঁকে মাত্র এক বছরের চুক্তির প্রস্তাব দিচ্ছিল, বেতনও বাড়াতে রাজি হচ্ছিল না। এ নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় রামোস প্রথমে চুক্তি করতে রাজি হননি। আবার রামোস যখন মৌসুমের শেষ দিকে রাজি হলেন, তখন রিয়াল জানিয়ে দিয়েছে, এখন আর চুক্তি নবায়ন হবে না। এক যুগেরও লম্বা সম্পর্কটা একটু বিস্বাদে শেষ হয়েছে রামোসের। রিয়ালকে ভুল প্রমাণ করতে পিএসজিতে যোগ দিয়েছিলেন রামোস।
তখন মনে হয়েছিল দুর্দান্ত সিদ্ধান্ত। ইউরোপ জয় করার সব অস্ত্রই ছিল পিএসজির। আক্রমণে কিলিয়ান এমবাপ্পে-নেইমার। মাঝমাঠে ভেরাত্তি আর রক্ষণে মারকিনিওস। গোলবারে কেইলর নাভাস ছিলেন, তাঁর সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছেন ইউরো জেতা দোন্নারুমা। এই দলেই যখন মেসি, রামোস ও ভাইনালদমের মতো সব জেতা চরিত্র যুক্ত হয়, তখন আশা জাগতেই পারে।
কিন্তু এ জন্য মাঠে নামতে হবে তো! মেসি তা–ও নিয়মিত খেলেছেন, আগের সেই গোলক্ষুধা না দেখালেও সতীর্থদের দিয়ে গোল করাচ্ছেন নিয়মিত। ওদিকে ভাইনালদম কোচের মন জয় করে একাদশে থাকতে পারছেন না, আর রামোস? চোটের কারণে গত মৌসুমে রিয়ালে অর্ধেক মৌসুম বাইরে থাকা যে একক কোনো ঘটনা নয়, সেটা জানিয়ে দিয়েছেন। মৌসুম শেষ হতে বসেছে, অথচ রামোসকে লিগে মাত্র ছয় ম্যাচ পেয়েছে পিএসজি। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে সাত ম্যাচ। এর মধ্যে মাত্র ৩ ম্যাচে পূর্ণ ৯০ মিনিট দেখা গেছে তাঁকে।
এমন এক মৌসুম কাটানোর পর দলবদলের গুঞ্জন শুরু হওয়াই স্বাভাবিক। রামোস সেসব গুঞ্জন উড়িয়ে দিতে চাইলেন। সাবেক বার্সেলোনা ও পিএসজি উইঙ্গার লুদোভিক গিলির কাছে অ্যামাজন প্রাইমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘শীর্ষ পর্যায়ে আর চার-পাঁচ বছর খেলতে চাই এবং আরেকটা অভিজ্ঞতার স্বাদ পেতে চাই। পিএসজিতে দুই বছর চুক্তি আছে। আমি তিন বছর থাকার চেষ্টা করব এবং এরপর দেখব। আমার শারীরিক অবস্থা যত দিন ভালো আছে, আমার ধারণা, মাথাও ঠিক রাখতে পারব।’
এ মৌসুমে এখনো টানা দুটি লিগ ম্যাচে মূল একাদশে খেলা হয়নি রামোসের। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী রোববার মার্শেইয়ের বিপক্ষে সে অভিজ্ঞতা পাবেন। রামোস তাই স্বস্তি পাচ্ছেন কিছুটা, ‘এখন আমি ভালো আছি, খুব আনন্দে আছি এবং খেলতে চাই।’
রিয়াল মাদ্রিদে অধিনায়ক ছিলেন। টানা তিনটি চ্যাম্পিয়নস লিগের ট্রফি উচিয়ে ধরেছেন, মাঠে ও মাঠের বাইরে তিনিই ছিলেন নেতা।
এখন পিএসজিতে শুধুই একজন খেলোয়াড় হয়ে খেলছেন। কিন্তু এসব নিয়ে ভাবতে আগ্রহী নন। তাঁর কাছে দল সাফল্য পাচ্ছে কি না, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ, ‘আমি সেরা খেলোয়াড় হওয়ার চেয়ে বিশ্বের সেরা দলে খেলতে চাই। কারণ, দিন শেষে ফুটবল একটা দলীয় খেলা এবং দল হিসেবে জেতার খেলা। বিশ্বের সেরা হওয়ার আগে আমি বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলাতেই আগ্রহ পাই বেশি। আর এ জন্য দল হিসেবে কাজ করাটা জরুরি।’