>আনা ফ্রাঙ্ক ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লেখা তাঁর ডায়েরির জন্য। অনেকে বলেন, করোনাভাইরাসে সংক্রমিত এই অনিশ্চিত সময়টাও নাকি বিশ্বযুদ্ধের মতোই। এক অণুজীবের বিরুদ্ধে সারা পৃথিবী তো যুদ্ধেই নেমেছে! তা এই সময়ে বাংলাদেশের ঘরবন্দী খেলোয়াড়েরা যদি ডায়েরি লিখতেন, কী থাকত তাঁদের লেখায়? খেলোয়াড়দের হাতে কলম তুলে দিয়ে সেটিই জানার চেষ্টা করেছে প্রথম আলো-
করোনার সময়টা ভালো-মন্দ দুই রকমই লাগছে। ভালোটা হলো পরিবারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সময় কাটানো যাচ্ছে। আর খারাপ হলো, মাঠের মানুষ হয়েও আমি ঘরে বসে আছি
অতীতে কখনোই পরিবারের সঙ্গে এত দীর্ঘ সময় কাটানোর সুযোগ হয়নি। অপ্রত্যাশিতভাবে করোনা সে সুযোগ করে দিয়েছে। স্ত্রী, ছেলেমেয়েদের সঙ্গে প্রচুর গল্প করি। ব্যস্ততার চাপে এত দিন কাছের মানুষগুলোর অনেক বিষয়ই আমার কাছে অজানা ছিল। এখন তাঁদের কথা শুনছি, গুরুত্ব দিচ্ছি। ফলে আগের চেয়ে ভালো বাবা হয়ে উঠেছি। স্বামী হিসেবেও এখন আমি আগের চেয়ে ভালো স্বামী। সংকটের এই সময়ে এখন পর্যন্ত পরিবারের সবাই সুস্থ থাকায় আগের চেয়ে অনেক বেশি পারিবারিক সুখও অনুভব করছি।
আমি মানসিকভাবে ঠিক করে ফেলেছি, আবার ব্যস্ত জীবন শুরু করার সৌভাগ্য হলেও পরিবারকে অনেক সময় দেব। পরিবারের মধ্যে আলাদা রকম একটা সুখ আছে, যা এইবারই বেশি অনুভব করেছি আমি। কোচিং ও চাকরির ব্যস্ততায় পরিবারকে বেশি সময় দেওয়া কঠিন হবে। তবু আমি সর্বোচ্চ চেষ্টাটা করতে চাই।
করোনা আমাকে কিছু ভালো শিক্ষা দিয়েছে। সব সময় পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন থাকার কোনো বিকল্প নেই। সব সময়ই পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। ধৈর্য ধারণ করার শিক্ষাও পেয়েছি। আমরা বুঝতে পারছি ইচ্ছা করলেই সবকিছু করা যায় না। প্রকৃতি আমাদের অনেক সময় কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
অন্য ব্যস্ততা না থাকায় কোচিং সংক্রান্ত প্রচুর বই পড়ার সুযোগ হচ্ছে। আমার কাছে অনেকগুলো বই জমা হয়ে থাকলেও এত দিন ভালোভাবে পড়া হয়নি। প্রয়োজনীয় অংশ পড়ে রেখে দিতাম। এখন সেই বইগুলো ভালোভাবে পড়ার চেষ্টা করছি। ২০১৫ সালে উয়েফা 'এ' লাইসেন্স করলেও কোর্সের জন্য নির্দিষ্ট বইয়ের সব বিষয়ে নজর দিতে পারিনি। এখন ২৮০ পৃষ্ঠার বইটি খুব যত্ন নিয়ে পড়ছি। নতুন নতুন অনেক বিষয় সামনে আসছে। সেগুলো কীভাবে মাঠে প্রয়োগ করা যায়, তা নিয়েও কাজ করছি।
অবসরে অনেক কিছু জানার ও জানানোর সুযোগ থাকে। দেশের তৃণমূল কোচ থেকে শুরু করে আমার মতো ক্লাব কোচিংয়ে যুক্ত থাকা কোচদের সমন্বয়ে অনলাইনে ক্লাসের ব্যবস্থা করেছি। তিন শুক্রবারে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে আমাদের মধ্যে। নিজের জ্ঞান ও ভাবনা তাঁদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিচ্ছি। তৃণমূলের কোচদের কাছে থেকে প্রচুর প্রশ্ন আসে। তাঁদের সঙ্গে পরিচিত হতে পেরে সময়টাও ভালো যাচ্ছে।
খেলোয়াড়দের কাছ থেকে দুরে আছি, এটাই খারাপ লাগে। তাঁদের অনুশীলন করানো এবং তাঁদের সঙ্গে খেলা নিয়ে আলোচনা করতে পছন্দ করি। সেটা প্রায় দুই মাস ধরে বন্ধ। এত দিন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ক্লাবের (চট্টগ্রাম আবাহনী) খেলোয়াড়দের সঙ্গে যোগাযোগ হতো। ম্যাচের ভিডিও পর্যালোচনা করে গ্রুপে ভুল ত্রুটিগুলো উল্লেখ করে দিতাম। ভিডিও ড্রিলে দেওয়া হতো সমাধানও। কিন্তু লিগ পরিত্যক্ত ঘোষণা করায় স্বাভাবিকভাবে এটা আর আগের মতো হবে না। আমার মনে হয়, লিগ বাতিলের সিদ্ধান্ত জানাতে আরও সময় নিতে পারত ফেডারেশন। বিদেশিদের ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত দিয়ে কীভাবে খেলা যায়, সেটি ভাবা যেতে পারত।
সবচেয়ে বেশি মিস করি আমার কোচিং রুমটাকে, বুয়েটের যে রুমে বসে আমি সারা দিন কোচিং নিয়ে কাজ করি। খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স ডেটা পর্যালোচনা করি। সেটা পুরোপুরি বন্ধ। ওই রুমে কোচদের সঙ্গে প্রচুর আড্ডা হতো, সে সুযোগাটও তো এখন নেই। করোনা শেষে ভালো দিনের অপেক্ষায় আছি। তবে কঠিন এই সময়ের শিক্ষাগুলো পরবর্তী সময়ে কাজে লাগাতে চাই।