এশিয়ান কাপ বাছাই ফুটবল

আমিনুলকে মনে করাচ্ছেন আনিসুর

বাংলাদেশের ফুটবলের দুরন্ত গোলকিপার আমিনুল হক আড়ালে ঢাকা পড়েছেন আগেই। খেলা ছেড়ে রাজনীতিতে জড়িয়ে জেলও খেটেছেন। আমিনুল-পরবর্তী জাতীয় দলের গোলপোস্টের নিচে মিউজিক্যাল চেয়ার শেষে আগমন আনিসুর রহমানের, ধারাবাহিকভাবেই যিনি জাতীয় দলকে ভরসা জুগিয়ে যাচ্ছেন।

পেছনের কথা বাদ দিন, ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে ১ জুনের ফিফা প্রীতি ম্যাচে তাঁর দুর্দান্ত নৈপুণ্যের সুবাদেই গোলশূন্য ড্র করে বাংলাদেশ। পরশু এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের উদ্বোধনী ম্যাচে শক্তিশালী বাহরাইন বাংলাদেশের বিপক্ষে ২টির বেশি গোল পায়নি ‘জিকো’ ডাকনামের আনিসুরের বীরত্বেই।

দেশের সেরা গোলকিপার এখন আনিসুর রহমান

আশি-নব্বইয়ের দশকে ৫ ফুট ৬-৭ ইঞ্চি উচ্চতা নিয়ে পোস্টের নিচে দৃঢ়তা দেখাতেন মোহাম্মদ মহসীন। একই উচ্চতা নিয়ে এখন সেই দৃঢ়তা দেখাচ্ছেন আনিসুর। তবে কম উচ্চতা নিয়ে তাঁর কোনো আক্ষেপ নেই। কুয়ালালামপুরে পিকেএনএস স্পোর্টস গ্রাউন্ডে কাল সকালে বাংলাদেশ দলের অনুশীলন শেষে প্রথম আলোকে আনিসুর বললেন, ‘উচ্চতা ভালো থাকলেই ভালো গোলকিপার হবে, এমন নয়। উচ্চতা নিয়ে আমার কোনো হতাশা নেই। তবে এটা ঠিক, উচ্চতা বেশি হলে হয়তো আরও ভালো করতে পারতাম।’

কম উচ্চতার গোলকিপারদের মাঠে সমস্যা হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সব বাধা ডিঙিয়ে দ্রুতই প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন আনিসুর। ছয় গজের ভেতরই বেশি ভালো করেন জানিয়ে নিজের দুর্বল দিকটাও বললেন, ‘উচ্চতার কারণেই বাতাসে আসা বল লম্বা ডিফেন্ডারদের মাথা থেকে নিতে সমস্যা হয় আমার। এ জায়গায় ঘাটতি আছে।’

তবে একটা জায়গায় কোনো ঘাটতিই যেন নেই আনিসুরের—আত্মবিশ্বাস। ‘বড় দলের বিপক্ষে গোলকিপারকে অনেক বড় ভূমিকা রাখতে হয়। সেটা চিন্তা করেই বাহরাইন ম্যাচে আমি শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আত্মবিশ্বাস ছিল, বেশি গোল খাব না। কারণ, আমি স্নায়ুর চাপে পড়লে দলেরই ক্ষতি হতো। আমরা আরও বড় ব্যবধানে হারতে পারতাম।’

আনিসুর এখন বড় ভরসা বাংলাদেশের গোলপোস্টের

কক্সবাজারের ডুলাহাজারার বালুচর গ্রামে বাড়ি আনিসুরের। ছোটবেলায় একটু স্বাস্থ্যবান ছিলেন বলে বড় ভাইয়েরা বলতেন, ‘তুই পোস্টের নিচে থাক।’ সেই থেকে পোস্টের নিচে বড় হওয়া আনিসুর এখন বাংলাদেশ দলেরই পোস্ট সামলাচ্ছেন। দলে যদি কারও জায়গা নিশ্চিত থাকে, সেটা এই আনিসুরেরই। তাঁর নিজেরও ধ্যানজ্ঞান এই পোস্ট সামলানোই, ‘মাঠের ৯০ মিনিটই আমার জীবনের সব। দলকে যেন জেতাতে পারি, সেই প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে নামি। ক্লাব ও জাতীয় দল—দুই পর্যায়েই আমি এটা করি।’

আগামীকাল তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। সহকারী কোচ হাসান আল মামুনের আশা, এই ম্যাচে চমক দেখাবেন তাঁরা। খেলার মূল পরিকল্পনা সেই ‘লো ব্লক’ হলেও এবার নাকি নতুন কিছুও ভাবছেন তাঁরা, ‘আমরা ‘‘লো ব্লক’’ পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করেছি, সেটাতেই থাকতে চাই। তবে তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে দ্রুত আক্রমণেও যাব। শুধু ফরোয়ার্ড লাইন নয়, আমরা চাই মাঝমাঠের খেলোয়াড়েরাও আক্রমণে যোগ দেবে। প্রতিপক্ষ ভাববে আমরা এক পাশ দিয়ে খেলছি, কিন্তু আসলে আরেক পাশ দিয়ে দ্রুত আক্রমণে উঠব। আমরা তুর্কমেনিস্তানকে চমকে দেব।’

এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে বাহরাইনের বিপক্ষে দারুণ খেলেছেন আনিসুর

মালয়েশিয়ার কাছে ৩-১ গোলে হেরে যাওয়া তুর্কমেনিস্তানের ফুটবলাররা শারীরিকভাবে প্রায় বাহরাইনের খেলোয়াড়দের মতোই। সেটপিস নিয়ে তাই কাল বাড়তি কাজ করেছে বাংলাদেশ। কাজ হয়েছে গোলে শুটিং আর রক্ষণ নিয়েও। অবশ্য অনুশীলন শেষে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় আগের ম্যাচের ভুল শুধরে আরও ভালো খেলার তাগিদ দিয়েছেন ডিফেন্ডার ইয়াছিন ও টুটুল হোসেন।

অনুশীলনে বেশ ফুরফুরে মেজাজেই ছিল বাংলাদেশ দল। বাহরাইনের কাছে কম গোলে হার যেন সবাইকে বাড়তি আত্মবিশ্বাস দিচ্ছে। এখন সেই আত্মবিশ্বাসের বিচ্ছুরণটা তুর্কিমেনিস্তান ম্যাচে পড়লেই হয়।