গ্রুপপর্বের মাত্র একটি ম্যাচ বাকি। অথচ আর্জেন্টিনাকে গ্রুপের তলানিতে দেখাটা খুবই হতাশাজনক। আমাদের অবশ্যই জিততে হবে বলেই শুধু কাজটা কঠিন নয়। সঙ্গে ক্রোয়েশিয়া-আইসল্যান্ড ম্যাচের ফলের দিকেও তাকিয়ে থাকতে হবে। তবে বিশ্বাসী মানুষ বলে আমি লা আলবিসেলেস্তেদের ওপর থেকে আস্থা হারাচ্ছি না।
আমার ১৯৮২ ও ১৯৯০ বিশ্বকাপের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। দুবারই চ্যাম্পিয়ন হিসেবে খেলতে এসে হার দিয়ে আমাদের বিশ্বকাপ শুরু হয়েছিল। প্রথমবার গ্রুপ পর্বের বাকি দুই ম্যাচ জিতেছিলাম। কিন্তু সেবার দ্বিতীয় পর্ব থেকেই ফিরতে হয়েছিল। আর দ্বিতীয়বার আমি অধিনায়ক থাকার সময় তো আমরা ফাইনালে পৌঁছেছিলাম। শেষ পর্যন্ত আমরা কোথায় শেষ করেছিলাম সেই আলোচনায় যাচ্ছি না। আমি বলতে চাচ্ছি দুবারই আমরা বাজে অবস্থায় পড়েছিলাম। কিন্তু আমরা লড়াই করে গ্রুপ পর্ব পেরিয়েছি। এটাই আমাকে বিশ্বাস জোগাচ্ছে যে এবারও সম্ভব।
নাইজেরিয়ার বিপক্ষে আর্জেন্টিনার বড় জয় প্রয়োজন। তাদের আগের ম্যাচগুলো থেকে পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে হবে। খেলোয়াড়দের মনে রাখতে হবে, বিশ্বের কাছে নিজেদের প্রমাণের এটাই শেষ সুযোগ। আমার বিশ্বাস, তারা সেটা পারবে। হোর্হে সাম্পাওলিকে পরিস্থিতি মাথায় নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে এবং প্রত্যেক খেলোয়াড়কে তাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে। দল নির্বাচনও ঠিকঠাক হতে হবে। যদিও লিও মেসির ওপর প্রত্যাশা থাকবে যেটা শুধু সে-ই করতে পারে, সেটাই যেন সে মাঠে করে দেখায়। তবে নির্দিষ্ট একজনের দিকে না তাকিয়ে তাদের অবশ্যই দল হিসেবে খেলতে হবে।
প্রথম ম্যাচে আমরা প্রভাব বিস্তার করে খেলেছি। কিন্তু আইসল্যান্ডের রক্ষণ ভাঙতে ব্যর্থ হয়েছি। দ্বিতীয় ম্যাচে গোলকিপার উইলি কাবায়েরো তাদের প্রথম গোলটা উপহার দেওয়ার পর থেকে ক্রোয়েশিয়া আমাদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছে। মানতেই হবে সার্জিও রোমেরোর অভিজ্ঞতার অভাব অনুভূত হয়েছে। কিন্তু ফুটবলে যে কোনো কিছুই হতে পারে। কেউ হারার জন্য খেলে না। আর এটা নিছক দুর্ঘটনা। পেছন ফেরার চেয়ে, সামনে যে সুযোগ আছে সেটা নিয়েই ভাবতে হবে।
নাইজেরিয়া বিপজ্জনক এক প্রতিপক্ষ। বিশ্বকাপে তাদের সঙ্গে বেশ কয়েকবারই দেখা হয়েছে। দেখা হয়েছে ২০১৪ বিশ্বকাপেও। আমরা প্রতিবারই জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছি। এটা আমাদের মানসিকভাবে এগিয়ে দিচ্ছে। তাদের তিন পয়েন্ট আছে এবং একটি ড্র তাদের পরের পর্বে নিয়ে যাবে, যদি আইসল্যান্ড ক্রোয়েশিয়াকে হারাতে না পারে। নাইজেরিয়া তেতে থাকবে সন্দেহ নেই। আমাদের ছেলেদেরও ভেতরের স্পৃহাটা দেখাতে হবে এবং জীবনের সেরা খেলাটা খেলতে হবে।
আর্জেন্টিনাকে বেশ কিছু সমস্যার সমাধান করতে হবে। প্রথম ম্যাচে তারা ৪-২-৩-১ ছকে খেলেছে এবং দ্বিতীয় ম্যাচে খেলেছে ৩-৪-৩ ছকে। দুবারই আর্জেন্টিনার ব্যাকলাইনের ওপর মাঝমাঠে তেমন প্রতিরোধ গড়তে পারেনি। চার বছর আগে এই জায়গায় হাভিয়ের মাচেরানো দুর্দান্ত খেলেছিল। কিন্তু এবার সে আগের মতো দায়িত্ব নিতে পারছে না। আর এটাই রক্ষণভাগের ওপর চাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। এই জায়গায় কী করা যায়, সেটা সাম্পাওলিকে ভাবতে হবে।
আফ্রিকানরা দ্রুতগতির ও শক্তিশালী। তাদের নিজেদের স্বচ্ছন্দ গতিতে খেলতে দেওয়া আর্জেন্টিনার উচিত হবে না। মাঝমাঠে অনেক অপ্রিয় কাজ করতে হবে, যেন তারা সেখান থেকে খেলা গড়তে না পারে। আমাদের খেলোয়াড়দের আঁটসাঁট থাকতে হবে, যেন তারা জায়গা না পায়। তাদের চাপে রাখার জন্য দ্রুত একটা গোলের প্রয়োজন হবে।
সারা বিশ্ব মেসির দিকে তাকিয়ে আছে। তার মতো একজন খেলোয়াড় সব সময় আলোচনায় থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমি আবারও বলছি ফুটবল একজন মানুষের খেলা নয়। ফুটবলে আপনি দল হিসেবে জেতেন এবং দল হিসেবে হারেন। দলের সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে এবং একে অপরের জন্য খেলতে হবে। আপনি খুব করে চাইলে অবশ্যই করতে পারবেন। কাম অন আর্জেন্টিনা! এবার অন্তত জেগে ওঠো।