৬-২ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।
৬-২ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।

আধা ডজন গোলে পুরোনো শত্রুকে আপ্যায়ন ইউনাইটেডের

রক্ষণভাগের ডান প্রান্ত থেকে নিখুঁত একটা লং বল সামনে পাঠালেন ইংলিশ উইঙ্গার জ্যাক হ্যারিসন। বলটা আয়ত্তে এনে টোকা দিয়ে পেছনে থাকা উত্তর আইরিশ লেফটব্যাক স্টুয়ার্ট ডালাসকে পাঠালেন ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার রাফিনহা। সেখান থেকে দুর্দান্ত প্লেসমেন্টে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের গোলরক্ষক দাভিদ দে হেয়াকে পরাস্ত করলেন ডালাস। দুর্দান্ত ভয়ডরহীন গোল, কোনো সন্দেহ নেই। ম্যাচের ৭৪ মিনিট তখন।

একটা দল যখন এমন নিখুঁত প্রতি–আক্রমণে গোল করার, এমন ভয়ডরহীনভাবে ফুটবল খেলার সাহস পায়, তখন কী মনে হয়? ম্যাচ জেতার তাদের যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে দেখেই তারা এমন চোখজুড়ানো ফুটবল খেলতে পারছে, তাই তো?

ভুল! অন্তত দলটা মার্সেলো বিয়েলসার হলে তো বটেই। ডালাস যখন গোলটা দিলেন, তার আগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড গুনে গুনে আধা ডজনবার বল ঢুকিয়েছে লিডসের জালে। ডালাসের গোলটার সময় তাই জেতার বিন্দুমাত্রও সম্ভাবনা ছিল না লিডসের। কিন্তু কপালে হার লেখা আছে বলেই যে গোল করার চিন্তা বাদ দিয়ে হারের ব্যবধান কমানোর চিন্তা করতে হবে, এমনটা যদি কোনো দল ভেবে থাকে, তাহলে সে আর যা–ই হোক, বিয়েলসার দল নয়। সেটাই যেন আবারও দেখা গেল গত রাতে। ম্যাচ হারছে তো কী হয়েছে, গোল করার চেষ্টা করা চাই শতভাগ!

এই স্কোরকার্ড বহুদিন মনে থাকবে ইউনাইটেড সমর্থকদের।

শেষমেশ ৬-২ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। আধুনিক যুগে অনেক কোচের গুরু হিসেবে মানা হয় মার্সেলোনা বিয়েলসাকে। এবার বিশ্বের সেরা কোচের তালিকায় তৃতীয় স্থানে ছিলেন এই আর্জেন্টাইন। ওদিকে ম্যানেজার হিসেবে ওলে গুনার সুলশারের তেমন পসার বা খ্যাতি নেই। সেই সুলশারই বিয়েলসার ক্যারিয়ারের অন্যতম বিব্রতকর দিনটা ‘উপহার’ দিলেন। ইংলিশ ফুটবলের ইতিহাসে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আর লিডস ইউনাইটেডের ‘শত্রুতা’ নতুন নয়। মাঝের ১৬ বছর লিডস প্রিমিয়ার লিগে ছিল না দেখে দর্শকেরা এই রোমাঞ্চকর দ্বৈরথের স্বাদ পাননি। ১৬ বছর পর লিডস যখন আবার ইউনাইটেডের মাঠে খেলতে এল, দুর্দান্ত এক ম্যাচের অপেক্ষা করছিলেন সবাই। সুলশার কাউকে খালি হাতে ফেরাননি। তিনি বেশ ভালোভাবেই জানতেন, সারাক্ষণ আক্রমণের চিন্তা করা বিয়েলসা রক্ষণের দিকে তেমন মনোযোগ দেবেন না কখনোই। সেটাকেই পাখির চোখ করেছিলেন এই নরওয়েজিয়ান ম্যানেজার। সুলশারের গুরু স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন স্ট্যান্ডে বসে ছিলেন প্রিয় শিষ্য লিডসকে পেয়ে কী করেন সেটা দেখার জন্য। গুরুকে হতাশ করেননি সুলশার। জানিয়ে দিয়েছেন, ‘আমাকে নিয়ে আলোচনা হোক বা না হোক আমিও পারি।’

প্রতিপক্ষ দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়কে আলাদা আলাদাভাবে ‘মার্ক’ করে পরে আক্রমণে যাওয়ার ব্যাপারে সুখ্যাতি আছে বিয়েলসা। আর সেটা করতে গিয়েই মাঝেমধ্যে নিজেদের রক্ষণে চিচিং ফাঁক অবস্থার সৃষ্টি হয়। গত রাতের কথাই ধরুন, এ কাজ করতে গিয়ে মাঝমাঠ ফাঁকা হয়ে যাচ্ছিল প্রায়। জায়গা পেয়ে প্রথম তিন মিনিটের মধ্যেই দুই গোল করে দলকে এগিয়ে দেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের স্কটিশ মিডফিল্ডার স্কট ম্যাকটমিনে। প্রথমে ব্রুনো ফার্নান্দেস, পরে মার্কাস রাশফোর্ড—দুজনই লিডসের রক্ষণভাগের ফাঁকের সুযোগ নিয়ে বল বাড়িয়ে দেন এগিয়ে আসা ম্যাকটমিনের দিকে। আর এ সবকিছু হয় মাত্র তিন মিনিটের মধ্যে! লিগের ইতিহাসে এর আগে কেউ প্রথম তিন মিনিটে দুই গোল করতে পারেননি!

বিয়েলসার ভাগ্যে জুটেছে ছয় গোলের মালা।

২০ মিনিটে এবার নিজেই গোল দিতে চলে আসেন ব্রুনো ফার্নান্দেস। ফরাসি স্ট্রাইকার অ্যান্থনি মার্সিয়ালের পা থেকে বল নিয়ে দুর্দান্ত প্লেসমেন্টে ২০ মিনিটের মধ্যেই ম্যাচের স্কোরলাইন ৩-০ করে ফেলেন তিনি। ২০০৬ সালের পর এই প্রথম কোনো লিগ ম্যাচে শুরুর ২০ মিনিটের মাথায় তিন গোল পেল ইউনাইটেড। রক্ষণে যে লিডসের কত অনীহা, সেটা বোঝা গেল ম্যাচের চতুর্থ গোলে। কর্নার থেকে বল পেয়ে একদম ফাঁকা জায়গা থেকে গোল করলেন সুইডিশ ডিফেন্ডার ভিক্টর লিন্ডেলফ। এর আগে প্রথমার্ধে কখনো চারটা গোল হজম করেনি লিডস। বিরতিতে যাওয়ার আগে দলের অধিনায়ক লিয়াম কুপার গোল করে ব্যবধান একটু কমান।

দ্বিতীয়ার্ধেও সেই একই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলা শুরু করে লিডস। লাভ হয়নি। আরও দুটি গোল আসে ব্রুনো আর ড্যানিয়েল জেমসের পা থেকে। শেষে ডালাসের ওই গোলটা ব্যবধানই কমিয়েছে। প্যাট্রিক ব্যামফোর্ড, রদ্রিগো মোরেনো, জ্যাক হ্যারিসন কিংবা রাফিনহার মতো তারকারা গোল মিসের মহড়ায় মেতে না উঠলে হয়তো ইউনাইটেডের জালে আরও কয়েকবার বল ঢোকাতে পারত তারা। একই কথা বলা চলে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ক্ষেত্রেও। অসংখ্য সুযোগ মিস করেছেন মার্সিয়ান, রাশফোর্ড, কাভানিরা। ম্যাচ শেষে স্কাই স্পোর্টসের অনুষ্ঠানে মাইকেল ওয়েন ঠিকই বলেছিলেন। ৬-২ নয়, অনায়াসে এই ম্যাচের স্কোরলাইন ১২-৪ হতে পারত!

ক্যারিয়ারে এর আগে বিয়েলসা ছয় গোল খেয়েছিলেন সেই ১৯৯২ সালে। তখন নিউয়েলস ওল্ড বয়েজের এই ম্যানেজার আধা ডজন গোল হজম করেছিলেন সান লরেঞ্জোর বিপক্ষে। সেই স্মৃতিই আবার ফিরে এল সুলশারের কল্যাণে।