‘ভাইকিং ক্ল্যাপ’-এর কথা মনে আছে? ২০১৬ ইউরোর শেষ ষোলোয় ইংল্যান্ডকে হারানোর পর আইসল্যান্ডের খেলোয়াড়দের সেই উদ্যাপনটা ছিল দেখার মতো। তারপর অনেকেই ভাবছিলেন, তাঁদের স্বপ্নযাত্রা ইউরো কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে হারের মাধ্যমেই শেষ হয়ে গেছে। ভাইকিংদের সলিলসমাধি ঘটে গেছে ইউরোতেই। কিন্তু ভাইকিংসরা ফিরতেও জানে। ক্রোয়েশিয়ার মতো দলকে পেছনে ফেলে সরাসরি এসেছে বিশ্বকাপে। তাদের দল নিয়ে বিশ্বকাপের সবার আগ্রহটা ছিল একটু বেশিই।
আইসল্যান্ড নামটিই বিস্ময়ের। তিন লাখ মানুষ থেকে দলটি উঠে এসেছে বিশ্বকাপের মাঠে। প্রত্যেক খেলোয়াড় যেন আরও বিস্ময় সৃষ্টি করেছেন মাঠে। সিনেমা তৈরি করা যাঁর কাজ, সেই গোলকিপার হানেস হলডরসন প্রতিদিন মাঠে নামেন নতুন নতুন সিনেমা তৈরি করতে। হলডরসনের বিপক্ষে ২১ শট নিয়েও গোলের দেখা পাননি মেসি-রোনালদো কেউই। থামিয়ে দিয়েছেন মেসির পেনাল্টিও। আর কোচ? কোচ তো দাঁতের চিকিৎসক। দাঁতের ব্যথার জন্য রোগীদের দেন ইনজেকশন, আর নিজে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের আটকে রাখেন ছক কষে। যে ছকে আটকা পড়ে ড্র করেছে আর্জেন্টিনা, পর্তুগাল। পয়েন্ট ছাড়াই বাড়ি ফিরেছে ইংল্যান্ড আর ক্রোয়েশিয়া।
আইসল্যান্ড দল নিজেদের নিয়ে মজা করতেও ছাড়েনি। বিশ্বকাপে ২৩ জনের বহর নিয়ে এসেছে দলটি। কিন্তু এই দলের ২৩ জনকে বেছে নিতে হয়েছে মোট ৩ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ জনের মধ্য থেকে!
মোট জনসংখ্যার ১ লাখ ৬৫ হাজার ২৫৯ জন নারী আগেই বাতিলের খাতায় পড়ে গিয়েছেন পুরুষ বিশ্বকাপ বলে। সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় আলবার্ট গুডমুন্ডসন, যাঁর বয়স ২১, আর সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ হানেস হলডরসন, ৩৪। বাতিলের খাতায় চলে গেছে অনূর্ধ্ব-১৮ আর ঊর্ধ্ব-৩৫ বছর বয়সীরা। অনূর্ধ্ব ১৮ বছর বয়সী ৪০ হাজার ৫৪৬ জন, আর ৩৫ বছরের ওপরে ৮২ হাজার ৩১৩ জন। খেলার জন্য প্রস্তুত নন, অর্থাৎ অতিরিক্ত ওজনের লোক ২২ হাজার ১৩৪। তাঁরাও বাদ।
আর কাজে ব্যস্ত লোকজনকেও মাথায় রেখেছেন আইসল্যান্ডের লোকজন। দেশ সামলানো, দেশের কাজ করা, সমুদ্রের আশপাশে থাকায় বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকা লোকজন মিলে মোট ৫ হাজার ৭১১ জন। দেশের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, অসুস্থ মানুষ আছেন ৭ হাজার ৭৫৮ জন।
দলের ডাক্তার, কোচ, ম্যাসেজ থেরাপিস্ট—সব মিলিয়ে আছেন ১১ জন। আর মাঠে দর্শকসারি থেকে একযোগে চিৎকার করবেন ৮ হাজার ৭৮১ জন। বাকি থাকলেন কত? ২৩ জন! মিলল তো?
বরফঢাকা দেশটার গল্পগুলো এমনই অদ্ভুত। তবু তারা বুক চিতিয়ে লড়াই করে। বাঘা বাঘা তারকাকেও পাত্তা দেয় না। এ কারণে হয়তো এই বিশ্বকাপের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল হয়ে উঠছে আইসল্যান্ড!