ইস্তাম্বুলে সেই রাতের কথা কোনো দিন ভুলতে পারবেন কার্লো আনচেলত্তি? কোচিং ক্যারিয়ারে এর চেয়ে বড় ধাক্কা, বড় বেদনাদায়ক হার কি আছে তাঁর?
হয়তো নেই। আনচেলত্তি তখন এসি মিলানের কোচ। ২৫ মে, ২০০৫ আতাতুর্ক স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেই ফাইনালে বিরতির আগেই মিলানের বিপক্ষে ৩-০ করে ফেলল লিভারপুল। মিলান সমর্থকেরা ততক্ষণে সপ্তম বারের মতো ইউরোপ সেরার ট্রফি জয়ের আগাম উৎসব শুরু করেছেন।
কোচ হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়টা তখন সময়ের ব্যাপার মনে হচ্ছিল আনচেলত্তির কাছেও। লিভারপুল সমর্থকেরা অবশ্য তবু হাল না ছেড়ে গলা ফাটিয়ে গেয়ে যাচ্ছে, ‘ইউ’ল নেভার ওয়াক অ্যালোন...।’ হঠাৎই ভোজবাজির মতো পাল্টে গেল সব। ৫৪ থেকে ৬০, ছয় মিনিটের মধ্যে তিনটি গোলই শোধ! নির্ধারিত আর অতিরিক্ত সময়ের খেলা ৩-৩ সমতা। টাইব্রেকারে মিলানকে ৩-২ ব্যবধানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে নিল লিভারপুল!
প্রায় নয় বছর পর আজ আবার লিভারপুলের মুখোমুখি আনচেলত্তি। এবার তাঁর দলের নাম রিয়াল মাদ্রিদ।
খেলোয়াড় হিসেবেও আনচেলত্তিকে এমন একটা বেদনাদায়ক স্মৃতি উপহার দিয়েছিল লিভারপুল। সেটি ১৯৮৪ ইউরোপিয়ান কাপ ফাইনালে। মিলান ও চেলসির সাবেক কোচ তখন রোমার খেলোয়াড়। রোমে সেবার নির্ধারিত আর অতিরিক্ত সময়ে ১-১ সমতা। আনচেলত্তির দলকে টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতে নিয়েছিল লিভারপুল।
এ তো গেল আনচেলত্তির ব্যক্তিগত ‘ট্র্যাজেডি’র কথা। ইংলিশ ক্লাবটির বিপক্ষে ইউরোপে মুখোমুখি হওয়ার স্মৃতি মোটেই সুখকর নয় রিয়াল মাদ্রিদেরও। ইউরোপিয়ান কাপ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ মিলিয়ে এ পর্যন্ত তিনবার মুখোমুখি হয়েছে রিয়াল-লিভারপুল। তিনবারই শেষ হাসি ছিল ‘অলরেড’দের মুখে। ১৯৮১ সালে প্যারিসের ফাইনালে রিয়ালকে ১-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল লিভারপুল। ২০০৮-০৯ মৌসুমে দুই দলের দেখা হয়েছিল শেষ ষোলোতে। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে প্রথম লেগ ১-০ গোলে জেতার পর অ্যানফিল্ডে ফিরতি লেগে রিয়ালকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল লিভারপুল। দুই লেগ মিলিয়ে ৫-০ ব্যবধানে হারটা চ্যাম্পিয়নস লিগ যুগে এখন পর্যন্ত রিয়ালের সবচেয়ে বড় হারও!
তবে এই লিভারপুল সেই লিভারপুল নয়। এই রিয়ালকেও তুলনা করা যাবে না মাত্র এক মৌসুম বার্নাব্যুর দায়িত্বে থাকা হুয়ানদে রামোসের ওই রিয়ালের সঙ্গে। রিয়ালকে পাঁচ গোলে হারানো ওই মৌসুমের পরের মৌসুমটাই (২০০৯-১০) ছিল চ্যাম্পিয়নস লিগে এবারের আগ পর্যন্ত লিভারপুলের সর্বশেষ উপস্থিতি। মাঝে পাঁচ বছর অনুপস্থিতির সময়টা নিজেদের হারিয়ে খুঁজেছে লিভারপুল। গত মৌসুমে লিগে রানার্সআপ হলেও এবার এখন পর্যন্ত লিগে খুব আহামরি নয় ব্রেন্ডন রজার্সের দলের পারফরম্যান্স, পয়েন্ট তালিকায় আছে পাঁচে। চ্যাম্পিয়নস লিগেও লুডোগোরেৎসের সঙ্গে নিজের মাঠে ২-১ গোলে জয়ের পর বাসেলের কাছে পরের ম্যাচটাই হেরেছে ১-০ গোলে। আজ আরও একটা হার কঠিন করে তুলতে পারে গ্রুপের বাধা পেরোনোই।
অ্যানফিল্ডের অতিথি দল রিয়ালের সাম্প্রতিক ফর্ম যেন আকাশছোঁয়া। গত মাসে লিগে অ্যাটলেটিকোর কাছে মাদ্রিদ ডার্বিতে হারের পর সব ধরনের প্রতিযোগিতায় ৭টি ম্যাচ খেলে জয় তুলেছে সব কটিতেই। ৭ ম্যাচে গোল করেছে ৩২টি! লেভান্তের বিপক্ষে লিগে নিজেদের সর্বশেষ ম্যাচটাতে গ্যারেথ বেল, করিম বেনজেমা, সার্জিও রামোসদের ছাড়াই ৫ গোল! নিতম্বের চোটে বেলের মাঠে নামা আজও অনিশ্চিত। তাতে খুব একটা চিন্তিত হওয়ার কথা নয় রিয়াল কোচের। এই সাত ম্যাচে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো যে একাই করেছেন ১৫ গোল!
পর্তুগিজ উইঙ্গারকে নিয়ে কয়েক দিন আগেই আনচেলত্তি বলেছেন, ‘এখন রোনালদো মাঠে নামার আগেই আমরা ওর নামের পাশে একটা গোল ধরে রাখি।’ চলতি মৌসুমে বিয়ালের জার্সিতে ১২ ম্যাচে ১৯ গোল রোনালদোর, ম্যাচপ্রতি ১.৫৮! আজ শুধু একটা পরিসংখ্যানই রোনালদোর বিপক্ষে। এ পর্যন্ত নয়বার লিভারপুলের বিপক্ষে খেলেছেন, সবগুলোই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে। ওল্ড ট্রাফোর্ডে দুবার গোল করলেও অ্যানফিল্ডের পাঁচ ম্যাচে গোলহীন।
আজ কি সেই ‘গেরো’টা খুলতে পারবেন রোনালদো? এএফপি, রয়টার্স, উয়েফা।
টুকিটাকি
আর দুটি গোল করলেই ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ছুঁয়ে ফেলবেন চ্যাম্পিয়নস লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা রাউলকে (৭১ গোল)।
নিজের মাঠে স্প্যানিশ কোনো দলের বিপক্ষে ১৪ ম্যাচের মাত্র ৪টি জিতেছে লিভারপুল, ড্র ৬টি, হার ৪টি।
এর আগে একবারই সুইডিশ ক্লাব মালমোর মুখোমুখি হয়েছে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, ১৯৬৬-৬৭ ইউরোপিয়ান কাপের প্রথম রাউন্ডে। দুই লেগই জিতেছিল অ্যাটলেটিকো,
২-০ ও ৩-১ গোলে।
২০০৩ সালের ডিসেম্বরে অলিম্পিয়াকসের সঙ্গে সর্বশেষ দেখায় ৭-০ গোলে জিতেছিল জুভেন্টাস। ইউরোপে জুভেন্টাসের ওটাই সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়, অলিম্পিয়াকসের সবচেয়ে বড় হার।
জার্মান কোনো ক্লাবের বিপক্ষে গ্যালাতাসারাইয়ের নিজের মাঠে সর্বশেষ জয়টা ১৯৯২-৯৩ উয়েফা কাপে। ফ্রাঙ্কফুর্টের বিপক্ষে, ১-০ গোলে।
আজ মুখোমুখি
লুডোগোরেৎস : বাসেল
লিভারপুল : রিয়াল মাদ্রিদ
অলিম্পিয়াকস : জুভেন্টাস
অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ : মালমো
বেয়ার লেভারকুসেন : জেনিত সেন্ট পিটার্সবার্গ
মোনাকো : বেনফিকা
আন্ডারলেখট : আর্সেনাল
গ্যালাতাসারাই : বরুসিয়া ডর্টমুন্ড
* প্রথমে স্বাগতিক দল