চট্টগ্রাম আবাহনী ১: ২ ইস্টবেঙ্গল

অভিষেকটা সুখকর হলো না স্বাগতিকদের

গোলটা আটকানো গেল না। ইস্টবেঙ্গলের প্রথম গোলের পর হতাশ চট্টগ্রাম আবাহনীর খেলোয়াড়েরা। শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপে কাল কলকাতার দলটির কাছে হেরে গেছে চট্টগ্রাম আবাহনী l প্রথম আলো
গোলটা আটকানো গেল না। ইস্টবেঙ্গলের প্রথম গোলের পর হতাশ চট্টগ্রাম আবাহনীর খেলোয়াড়েরা। শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপে কাল কলকাতার দলটির কাছে হেরে গেছে চট্টগ্রাম আবাহনী   l প্রথম আলো

চট্টগ্রামবাসীর জন্য এটি ছিল স্বপ্নের ম্যাচ। কিন্তু সন্ধ্যাটা সুখকর হলো না। নিজেদের আন্তর্জাতিক অভিষেক স্মরণীয় করে রাখতে পারেনি চট্টগ্রাম আবাহনী। ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে ২-০ গোলে পিছিয়ে শেষ পর্যন্ত একটা গোল শোধ করতে পারাই বড় সান্ত্বনা স্বাগতিকদের।
ইস্টবেঙ্গলের মূল দলের ১৪-১৫ জন খেলোয়াড় নেই তো কী! তরুণদের সঙ্গী করে দলটি অনেক ভালো প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে। দুটি অনুশীলন ম্যাচও খেলেছে। সেটির ছাপ রইল খেলায়। বয়সে তরুণ প্রতিটি খেলোয়াড় মাথা রাখলেন বরফের মতো ঠান্ডা।
ইস্টবেঙ্গল কোচ বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, দলে কে আছে কে নেই, তা নিয়ে ভাবেন না মোটেও। তাঁর কথার যথার্থতা প্রমাণ করেছেন খেলোয়াড়েরা। ইস্টবেঙ্গলের মতোই খেলল এই তরুণ দল।
দুই দলের বড় পার্থক্য বেরিয়ে পড়েছে ফিটনেসেই। কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ন ইস্টবেঙ্গল গত কয়েক মাস টানা অনুশীলনে থাকায় খেলোয়াড়েরা মাঠে রইলেন চনমনে। রানিং বেশ ভালো। দলীয় বোঝাপড়া দারুণ, নিখুঁত পাসিং। দুই তরুণ উইঙ্গার চোখ কাড়লেন আলাদা করে। একজন তো গোলই করলেন।
এই দলের সেরা অস্ত্র কোরিয়ান তরুণ স্ট্রাইকার ডুডং প্রথমার্ধে চোট পেয়ে ছাড়লেন মাঠ। তাতেও খুব একটা সমস্যা হয়নি ইস্টবেঙ্গলের। জয়ের অদম্য ইচ্ছায় দুই বাংলার লড়াইটা ঠিকই জিতে নিল বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের দল।
চট্টগ্রাম আবাহনীকে তো প্রস্তুতই মনে হয়নি! মাত্র কয়েক দিনের অনুশীলন। শেখ রাসেলের খেলোয়াড়দের নিয়েই মূলত দলটা গড়া। নামে বড় বড় খেলোয়াড়, কিন্তু ফিটনেসের অভাব। অধিনায়ক এমিলি পুরো ফিট না হওয়ায় শেষ ১৫ মিনিটে তুলে নিতে হলো। জামাল ভু্ঁইয়াকে তো খেলাতেই পারলেন না কোচ। আগস্টে শেখ জামালের সঙ্গে চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ায় তাঁকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা, কিন্তু শেখ জামাল থেকে নানা বাধা আসায় একাদশে রেখেও খেলানো গেল না।
এত কিছুর পরও জয় না হোক অন্তত এক পয়েন্ট পেতে পারত চট্টগ্রাম আবাহনী। কিন্তু এক গোলে পিছিয়ে পড়ে সহজ কয়েকটা সুযোগ হারালেন তুলনামূলক ভালো খেলা জাহিদ। ফাঁকা পোস্ট পেয়েও শট নিতে পারেননি। এমিলি হেড নিলে গোল-এমন পরিস্থিতিতেও বলে মাথায় সংযোগ হয়নি। হেমন্তও একই পথের যাত্রী। এই গোল নষ্ট করার খেসারতই স্বাগতিকদের খালি হাতে ফিরিয়েছে শেখ কামাল টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে।
উল্টো স্বাগতিক দল যখন আক্রমণের মেজাজে, ঠিক তখনই গোল হজম। এবং দুটি গোলই নিজেদের ভুলে। ৩২ মিনিটে বল গ্রিপ করতে পারেননি গোলরক্ষক লিটন, তাঁর হাত থেকে বেরিয়ে আসা বল ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ ডিফেন্ডাররা। সেই বল মাপা শটে জালে পাঠালেন মোহাম্মদ রফিক। ৭২ মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে অবিনাশের ক্রস, রন্টি মার্টিনের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা প্রহ্লাদ রায় কাছ থেকে সহজেই বলটা জড়িয়ে দিলেন জালে।
স্বাগতিক দলের দুই গোল হজম দেখে আশাহত দর্শকেরা, প্রথম ম্যাচের তুলনায় এ ম্যাচের দেখতেই তুলনামূলক ভিড় বাড়ল এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে। ৭৮ মিনিটে ব্যবধান ২-১ হলে একটু নড়েচড়ে বসল সবাই। ডান প্রান্ত দিয়ে ঢুকে পড়া হেমন্ত বল তুলে দিলেন কিংসলের উদ্দেশে। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্ডার বেল্লো রাসাকের মাথায় লেগে বল জালে (২-১)। রেফারি অবশ্য গোল দিয়েছেন বদলি মিডফিল্ডার সোহেল রানার নামে। এই একটি গোলই আন্তর্জাতিক অভিষেক ম্যাচে চট্টগ্রাম আবাহনীর প্রাপ্তি।
কোচ শফিকুল ইসলাম মানিকের তাতে প্রাপ্তি খুঁজতে যাওয়ার কিছু নেই। বরং খেদোক্তির সুরেই বললেন, ‘আমরা তো প্রস্তুতই নই! তারপরও ভাগ্যটাও ছিল না পাশে। অনেক মিস হয়েছে।’ ইস্টবেঙ্গল কোচ বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যকে ম্যাচের পর দেখা গেল সুখী চেহারায়, ‘ইচ্ছে ছিল জিতব, তাই জিতেছি।’
জয়ের ইচ্ছে তো চট্টগ্রাম আবাহনীরও প্রবলভাবে ছিল। ঘরের মাঠেও পারল না কেন? উত্তর ওই একটাই-অপ্রস্তুত দল নিয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ জেতা যায় না!